স্বপ্ন ভঙ্গ
সাজিব চৌধুরী
ডাকতে ডাকতে অতঃপর ঘুম ভাঙল।
সোনার বাটিতে সুস্বাদু খাবার,
বাহারি রঙে সাজানো টেবিল।
ভেসে আসলো একটা উচ্চ শব্দ।
“স্যার, আমি ব্রাস, পেস্ট, জল নিয়ে অপেক্ষা করছি”।
অন্য কেউ নয়, আমাদের কাজের মেয়ে।
উঠতেই দাদুভাই অজানা আদরে ভরিয়ে দিল।
টেবিলে চিকেন রোস্ট ছিল না।
অভিমানে ফিরে আসলাম।
গর্ভধারিণী মা আমার চটজলদি ব্যবস্থাটা করে দিল।
মার কাছে হাজার টাকার বায়না।
কেনটা পর্যন্ত বলল না।
আনন্দে আটখানা।
ড্রাইভারকে বললাম, “নীল গাড়িটা নাও”।
স্কুলে টাকার শ্রাদ্ধ সেরে বাড়ি ফিরলাম।
বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরল, সাথে দিদিভাইও।
ভালবাসার চাদরে মোড়ে আমি ডাইনিং টেবিলে।
নওয়াবি বিরিয়ানির প্লেটটা যখন আমার সামনে,
অনুভূত হলো কনকনে শীত, সাথে মশার উৎপাত।
ভেঙে গেল স্বপ্নটা।
আহা! কী স্বপ্ন !
অকস্মাৎ উঠে পড়ি।
দেখি, বাস্তবতা আমাকে ব্যঙ্গ করে।
আমার নগ্ন দেহ উঁকি মারে ছিন্ন পোষাকের জানালা দিয়ে।
আমার আশেপাশে হাজার মানুষের ব্যস্ততা।
শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী,
কেউ ব্যবসায়ী, আবার কেউ দেশ মাতৃকার সেবায় নিয়োজিত রাজনীতিবিদ।
জানেন, সেদিন আমার একটা ইন্টারভিউ হয়েছিল।
শুনেছি তিনি একজন মানবাধিকার সংবাদকর্মী।
তাঁরা অবশ্য আমাকে পথশিশুই বলে।
পথ আমাকে খুব ভালবাসে।
পথকে আমার মা বলেই জানি।
শুনুন, গল্পটা বলেই ফেলি।
একদিন দুপুর গড়িয়ে রোদেলা বিকেল ।
গতরাত থেকে নিরন্ন।
নিরুপায় আমি।
ঘুরেছি এ দ্বার থেকে ও দ্বারে।
হতাশ বদনে পড়ে আছি পথের ধারে।
অগত্যা এক ভিখারী, হাতে তার ভিক্ষান্ন।
বলতেই দিল একমুঠো।
সে থেকে তাকেই আমি পরিয়ে দিলাম শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট।
আমার ডাক নাম টোকাই।
শিক্ষা, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা কোনটি আমার কাছে দামি নয়।
আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়
একমুঠো ভাত
আর আমার মায়ের জন্য একখানা শাড়ি।
আমার গাঁয়ের সুরের মেলা
সাজিব চৌধুরী
নগরেরই নকল সুরে উঠছে যেবা 'হায়',
পাড়া গায়ের পথটি আমি বারেক ফিরে চাই।
সেথাই দেখি হরেক মায়া ডাকছে ওরে আয়,
পথের ধারে খেলছে খুকু বলছে মোরে ভাই।
বুনো পথের কোকিল পাখি সুর তুলেছে কত,
তারই সাথে ময়না টিয়ে নাচছে অবিরত।
টুনটুনি যে টুনটুনিয়ে বাজায় একতারা,
রাখাল তার বাঁশির সুরে করে পাগলপারা।
পাড়া গাঁয়ের পথের ধারে জারি গানের মেলা,
সেথো এক আজব দেশে আজব সুরের খেলা।
গাঁয়ের বধু কলসী খাঁকে জল ভরিতে যায়,
নায়ের মাঝি পল্লিগীতি সুর ধরিয়া গায়।
কী যে এক সুরের মেলা বসছে গাঁয়ের পথে,
বুঝতে তুমি আসতে যদি থাকতে মোর সাথে।
সুরের রাজ্য সুরের খেলা সুর যে মনে প্রাণে,
সব সুর যে প্রাণের কথা বলেরে ভাই কানে।
সুরের মাঝে ঘুমোতে চাও? আস আমার গাঁয়ে,
এখানেতে শঙ্খ নদী গেছেরে হায় বয়ে।
আরেকটি সাতই মার্চের অপেক্ষায়
সাজিব চৌধুরী
সবায় যখন ছুটছে তারার পানে
আপন মনে গানটি আমি ধরি।
তিনি হলেন শোষিত শ্রেণির সাথী
গানটি তিনি তাদের জন্য লিখেন।
বৃন্দাবনে কৃষ্ণ বাজায় বাঁশি
সৃষ্টি সুখের উল্লাসেতে কাঁপি।
সুরটি যখন বাজে পথে ঘাটে
অন্ধরা সব আলো মাখে গায়ে।
ধরল তারা দিল যারা ফাঁকি
গানটি হলো আবার কাল বৈশাখী।
ধন্য হলো গানটি যারা গেয়ে
সবায় তাদের মুজিব নামে ডাকি।
গানটি আমার প্রাণের কথা বলে
মানবতার ধর্ম হয়ে জাগে।
ফুটপাতে ঐ শিশু যখন কাঁদে
লজ্জা পেয়ে গানটি আবার ধরি।
আরেকটি গান হবে যখন লেখা
সাতই মার্চ আসবে তখন ফিরে।