প্রধান শিক্ষক
০১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ
“সবার জন্য গুনগত ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন।” প্রতিবন্ধকতা এবং উত্তরণে উদ্ভাবনী কৌশল।
প্রসংগ
“সবার জন্য গুনগত ও মানসম্মত
প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন।”
প্রতিবন্ধকতা এবং উত্তরণে উদ্ভাবনী
কৌশল।
ফয়েজ
আহমদ সরকার
প্রধান
শিক্ষক,
ইচাছড়া
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,
মাটিরাংগা,
খাগড়াছড়ি।
গুনগত ও
মানসম্মত শিক্ষাঃ
আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা যোগ্যতা ভিত্তিক । তার অর্থ হল
একটি শিশু প্রাক প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ সমাপ্তির পর কিছু
নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জন করবে।এই যোগ্যতা গুলো প্রান্তিক যোগ্যতা নামে পরিচিত।
প্রাথমিক স্তরে নির্ধারিত প্রান্তিক যোগ্যতা ২৯ টি।কোন শিশু যদি ৫ম শ্রেণি শেষে ২৯
টি প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করে, তাহলে আমরা বলতে পারি তার এই শিক্ষা গুনগত ও মান
সম্মত। ২৯ টি প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করানোর জন্য এগুলোকে বিষয় ভিত্তিক প্রান্তিক
যোগ্যতা, শ্রেণি ভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতা এবং শিখনফলে বিভাজন করা হয়েছে । কিন্তু ভাবার বিষয়
হল আমরা সকল শিক্ষার্থীর প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করতে পারছিনা । অনেক
গুলো প্রতিবন্ধকতার সাথে সাথে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা এবং ভুল ও আছে। তথাপি সকলের
যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করতে না পারলে গুনগত ও মানসম্মত শিক্ষার সুফল আমরা আশা করতে
পারিনা ।
গুনগত ও মানসম্মত শিক্ষা
বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতাঃ
প্রতিবন্ধকতা গুলোর কিছু আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
বাহিরের এবংকিছু আভ্যন্তরীণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাহিরের প্রতিবন্ধকতা গুলোর
মধ্যে দারিদ্রতা,অসচেতনতা,শিশু শ্রম ইত্যাদি প্রধান হলেও বর্তমানে ভগ্ন পরিবারের
সমস্যা একটি নতুন প্রতিবন্ধকতা।
আর আভ্যন্তরীণ প্রতিবন্ধকতার মধ্যে শিক্ষক শিক্ষার্থীর
আনুপাত ১t৪০
এর বেশি হওয়া শিখনফল অর্জনে শিক্ষকের পাঠদান দক্ষতা ও কৌশল যুগপোযোগী না হওয়াই
প্রধান।
প্রতিবন্ধকতা উত্তরণে উদ্ভাবনী
কৌশলঃ
এখন ভাববার বিষয় হল, গতানুগতিক পাঠদান কৌশল বা শিখন
শেখানো পদ্ধতি ফলপ্রসূ হচ্ছেনা কেন? কারণটা হলো যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সবকিছু
যেখানে বদলে যাচ্ছে সেখানে গুনগত ও মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের শিখন
শেখানো পদ্ধতির ও পরিমার্জন প্রয়োজন।সাথে সাথে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং
ডিজিটালাইজেশানের আওতায় আনতে হবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে।
আমদের পিটিআই গুলো আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নব্য
শিক্ষকগনকে আঠারো মাসের গবেষণা ধর্মী শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে
যাচ্ছে। সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন আমরা ও প্রাথমিক পর্যায়ে বিশ্বমানের শিক্ষা দানে
সক্ষম হব।
বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সাথে সকল ক্ষেত্রে
উচ্চ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত যারা নিবেদিত কর্মী তাদের থেকে বিভিন্ন লাগসই
উদ্ভাবনী কৌশল প্রয়োগে উৎসাহ প্রদান করছে। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও এ
ধরনের উদ্ভাবনী কৌশল পর্যালোচনা,পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য ইনোভেশান সেল গঠন
করেছে।ইনোভেশান সেল আইডিয়া বক্স এ অনলাইনে জমাকৃত আইডিয়া গুলো যাচাই বাছাই করেন,
মেন্টরিং করেন এবং মেলার মাধ্যমে উপস্থাপন করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেবার ব্যবস্থা
করছে। অনুমোদিত উদ্ভাবনী ধারনা বাস্তবায়নে সরকার আর্থ বরাদ্দ ও দিচ্ছে।
নিম্নে খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাংগা উপজেলার ইচাছড়া সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলমান একটি উদ্ভাবনী ধারনা তুলে ধরা হলো।
উদ্ভাবনী ধারণার শিরোনামঃ SLOWLY BUT SURELY
রেজিস্ট্রেশন
নম্বরঃ১০০৯৮৮
প্রস্তাবিত আইডিয়াঃ
প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত ২৯ টি প্রান্তিক যোগ্যতা নিশ্চিত ভাবে অর্জন করানোর নিমিত্তে শ্রেণি অর্জন উপযোগী যোগ্যতার পাশাপাশি শ্রেণি ভিত্তিক কিছু মৌলিক যোগ্যতা (যেমনঃ প্রথম শ্রেণির জন্য বাংলা বর্ণমালা চিহ্নিত করতে পারা এবং সঠিক প্রবাহ অনুসারে লিখতে পারা) চিহ্নিত করে ঐ যোগ্যতা অর্জন করানোর জন্য ধারাবাহিক ভাবে নির্ধারিত ছকে শ্রেণি কার্যক্রম ও অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ।
প্রত্যাশিত ফলাফলঃ
শ্রেণি ভিত্তিক মৌলিক যোগ্যতাগুলো যে সব শিক্ষার্থী অর্জন করতে পারে না তাদের যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করার জন্য বিষয় শিক্ষক পরবর্তী পর্যবেক্ষণ পর্যন্ত সময় পান।এবং চিহ্নিত শিক্ষার্থী বিষয় শিক্ষকের বিশেষ যত্ন পেয়ে যোগ্যতাটি অর্জন করে।এভাবে ধীরে ধীরে সকল শিক্ষার্থী কাংখিত যোগ্যতা অর্জন করে।ফলে প্রাথমিক স্তরের ২৯ টি প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত হয়।সাথে সাথে গুণগত ও মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়িত হয়।
বাস্তবায়ন পদ্ধতিঃ
শিক্ষা বর্ষের শুরুতে সকল বিষয়ের বিষয় শিক্ষক একটি নির্দিষ্ট ছক মোতাবেক রেজিস্টার সংরক্ষণ করবেন।কোন মৌলিক যোগ্যতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কতজন অর্জন করতে পেরেছে এবং কতজন অর্জন করতে পারেনি তা প্রধান শিক্ষক শ্রেণি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে চিহ্নিত করবেন। অতঃপর অপারগ শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিতের জন্য বিষয় শিক্ষককে প্রয়োজনীয় সময় সহ লিখিত পরামর্শ প্রদান করবেন। এভাবে নির্দিষ্ট যোগ্যতাটি সকল শিক্ষার্থীর অর্জন হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে পাঠ পর্যবেক্ষণ চলতে থাকবে।একটি মৌলিক যোগ্যতা অর্জন সম্পন্ন হলে একই ভাবে নতুন / পরবর্তী আরেকটি যোগ্যতা অর্জনের জন্য কাজ করতে হবে।
প্রকল্পের মেয়াদঃ
১১ মাস ( জানুয়ারি থেকে নভেম্বর)।
যে সমস্যাটি সমাধান হবেঃ
বিদ্যালয় কে একক ধরে প্রাথমিক স্তরে সবার জন্য গুণগত ও মান সম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত হবে।
আমাদের বিদ্যালয় গুলোতে প্রায়ই দেখা যায় তৃতীয় / চতুর্থ শ্রেণির কোন কোন শিক্ষার্থী বাংলা ইংরেজি সাবলীল ভাবে পাঠ করতে পারেনা। সহজ যোগ,বিয়োগ,গু্ণ,ভাগ করতে পারেনা ।এসব অপারগ শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে তাদের যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করতে চাই ।
যে কারণে আইডিয়াটি উদ্ভাবনঃ
১।শ্রেণিভিত্তিক কিছু মৌলিক যোগ্যতা নিয়ে কাজ করা হয়।যা একটি নতুন ধারণা।এবং এই মৌলিক যোগ্যতা গুলো ধাপে ধাপে শ্রেণিভিত্তিক অর্জন উপযোগী ও প্রান্তিক যোগ্যতার সাথে সম্পর্কযুক্ত।
২।চিহ্নিত মৌলিক যোগ্যতা গুলো অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয় না।কারণ মৌলিক যোগ্যতা গুলো সকল পাঠের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
৩।অপারগ শিক্ষার্থী চিহ্নিত হয়।ফলে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিষয় শিক্ষক বিশেষ যত্নের মাধ্যমে সকলের যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করতে পারেন।
৪।যাবতীয় তথ্য রেজিস্টারে সংরক্ষিত থাকে।সংশ্লিষ্ট বিষয় শিক্ষকের সাফল্য ও ব্যর্থতা জড়িত থাকায় তাদের দায়িত্ব,কর্তব্যবোধ ও আন্তরিকতা বেড়ে যায়। সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য যার কোন বিকল্প নেই।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বেশি টাকার প্রয়োজন নেই।তবে বলবর্ধক হিসাবে মাসে একবার পর্যবেক্ষণের দিন শিক্ষার্থীদের চকোলেট দেয়া যেতে পারে।শিক্ষকদের জন্য ৫ টি করে রেজিস্টার এবং বছর শেষে কর্মক্ষেত্রে অবদান ও সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ স্বল্পমূল্যের পুরষ্কার দেয়া যেতে পারে।
সর্বোপরি আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা শিক্ষক সমাজ নিজেকে যুগপোযোগী করে গড়ে নেব এবং নিজেকে নিংড়ে দিয়ে আন্তরিকতার সাথে গুনগত ও মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করব।