Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

১৬ অক্টোবর, ২০২০ ০৯:৪৯ অপরাহ্ণ

শিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিঃ ধারণা, গুরুত্ব ও উপোযোগীতা

তথ্য  যোগাযোগ প্রযুক্তি

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) বলতে সাধারণতঃ  তথ্য সংগ্রহসংরক্ষণবিশ্লেষণপ্রক্রিয়াকরণউৎপাদন ও বিস্তরণ তথা যোগাযোগের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরণের আধুনিক প্রযুক্তিগত উপকরণ বোঝায় তথ্য আদান-প্রদান ও যোগাযোগের জন্য প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিস্কৃত হচ্ছেতবে বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত উপকরণগূলোর মধ্যে কম্পিউটারইন্টারনেটমাল্টিমিডিয় সিস্টেমমোবাইল ফোনরেডিওটেলিভিশন উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশের জাতিয় শিক্ষানীতি ২০১০ –এ তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে, “তথ্যপ্রযুক্তিকে শুধুমাত্র কম্পিউটারের মধ্যে সীমিত না রেখে মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন, নেটওয়ার্কিং কিংবা সকল তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের ব্যপক অর্থে ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ” করতে হবে।


শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগ

শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (ICT) অন্তর্ভূক্ত করার নানাবিধ প্রয়াস দেখা যায়।বিভিন্ন দেশের সরকার তাদের নাগরিকদেরকে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষাক্রমে ICT অন্তর্ভূক্ত করেছে। আবার তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আকর্ষণীয় ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ প্রস্তুত করা যায় যার সাহায্যে শিক্ষার্থীরা সহজে ও আনন্দের সাথে শিখতে পারে। শিক্ষাক্ষেত্রে ICT -র বহুবিধ প্রয়োগকে তিনটি শ্রেনীতে ভাগ করা যেতে পারে, যেমন- ১) ICT জানা ও আয়ত্ব করা; ২) ICT ব্যবহার করে শেখা; এবং ৩) ICT নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা 
১। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি জানা ও আয়ত্ব করা (Learning about ICT): UNESCO কর্তৃক গঠিত International Commission on Education for Twenty-First Century-এর প্রতিবেদনে ICT-কে একবিংশ শতাব্দীর জন্য একটি আবশ্যকীয় দক্ষতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদেরকে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে প্রস্তুত করার লক্ষ্য থেকে বিশ্বের প্রায় সকল দেশের শিক্ষাক্রমে নতুন বিষয় হিসেবে ICT অন্তর্ভূক্ত করা হয়। বাংলাদেশের জাতিয় শিক্ষাক্রম-২০১২ –এ মাধ্যমিক স্তরে একটি আবশ্যিক বিষয় হিসেবে ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তির বহুমুখি ব্যবহার, এর বিভিন্ন অংশের পরিচয়, হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের ধারণা ইত্যাদি পাঠ্য বিষয়ে সংযুক্ত করা হয়। আবার উচ্চ শিক্ষা স্তরে জ্ঞানের পৃথক ক্ষেত্র হিসেবে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অধ্যয়নের সুযোগ করা হয়েছে। 
২। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শেখা (Learning with ICT): শিক্ষণ-শিখন (teaching-learning) কার্যক্রমকে আকর্ষণীয় ও কার্যকর করার এক অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করেছে ICT  ICT ব্যবহার করে আকর্ষণীয় ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ প্রস্তুত করা যায়, যা গতানুগতিক শিক্ষা উপকরণের চেয়ে যথেষ্ট কার্যকর। শিক্ষকগণ ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে সফলভাবে শ্রেণিতে পাঠদান করতে পারেন। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (www) এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা তাদের শ্রেণিকক্ষ ও পাঠ্য পুস্তকের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যপী জ্ঞানের সন্ধান করতে পারে। আবার ICT-র সাহায্যে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের (যেমনঃ প্রতিবন্ধী ও অটিষ্টিক) জন্য বিভিন্ন Computer Assisted Learning (CAL)  Computer Assisted Instruction (CAI) সফটওয়্যার  প্রস্তুত করা যায়। ফলে বিশ্বব্যাপী সবার জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে ICT গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
৩। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা (Learning through ICT): ICT -র কল্যাণে শিক্ষাব্যবস্থায় এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে; এখন যেকোন মানুষ যেকোন সময় যেকোন স্থান (anyone, anytime, anywhere) থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারে। বাংলাদেশে বসেও এখন একজন শিক্ষার্থী চাইলে আমেরিকার কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স করতে পারে। এটা সম্ভব হয়েছে ICT-র বহুমূখী সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে। বাস্তবে একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষককে মুখোমুখী না দেখেও বরং ইমেইল, চ্যাটিং, ভিডিও কনফারেন্সিং-এর সাহায্যে পাঠ গ্রহন করতে পারেন। অনলাইনে শিক্ষক তার শিক্ষার্থীর পরীক্ষা গ্রহণ ও মূল্যায়ন করে সার্টিফিকেট প্রদান করতে পারে। আর এই ব্যবস্থাকে সহজভাবে Virtual Learning Environment (VLE) বলা হয়। এই ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হচ্ছে এবং বর্তমানে বিভিন্ন দেশে Virtual University, Virtual Library, Virtual Museum ইত্যাদি গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের জাতিয় শিক্ষানীতি-২০১০-এ অনুরুপভাবে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে (বাঊবি) পর্যায়ক্রমে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি