Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

১৭ অক্টোবর, ২০২০ ০৫:০৮ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষায় প্রযুক্তির প্রভাব উন্নতবিশ্ব ও বাংলাদেশ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউএস আর্মির প্রশিক্ষণ কাজে ওভারহেড প্রজেক্টর বা ওএইচপি ব্যবহার করা হয়। ধীরে ধীরে ওএইচপি ইউরোপ-আমেরিকার স্কুলগুলোতে কার্যকর শিখন-শেখানোর যুক্তি হিসেবে দেখা দেয় এবং এর মাধ্যমে ষাটের দশকে ইন্টারেক্টিভ ক্লাস রুমের সূচনা হয়। স্বচ্ছ পেপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-তত্ত্ব শিক্ষার্থীদের সামনের দৃশ্যমান রূপে উপস্থাপন করা সম্ভব বলে শিক্ষকদের কাছে ও এইচপি গ্রহণযোগ্যতা পায়। ক্লাসরুম শিখন-শেখানো প্রক্রিয়া প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। ফলে শিক্ষকদের শ্রেণি কার্যক্রমে ভাষা নির্ভর নির্দেশনা প্রদান,তথ্য-তত্ত্বের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও চক বোর্ডের ব্যবহার কমে আসে। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষা আগের মতই প্রথাগত রয়ে যায়। ১৯৯০ সালে ইলেকট্রনিক প্রজেক্টর উদ্ভাবিত হলে তাও এইচপির স্থান দখল করে। বাংলাদেশের স্কুল কার্যক্রমেও এইচপির ব্যবহার দেখা যায় না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এর সীমিত ব্যবহার ঘটেছে। সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোতে ২০০৪ থেকে শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্যও এইচপি নিয়মিতভাবে ব্যবহার করা হয় যা ২০০৮ সালে কম্পিউটার মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হয়।

বাংলাদেশে ১৯৬৪ সালে থেকে টেলিভিশনও কম্পিউটারের যাত্রা শুরু হয়। শিক্ষাবিস্তারে টেলিভিশনের প্রথম কার্যকর ব্যবহার দেখা যায় ইংল্যান্ডে। টেলিভিশন মাধ্যম ব্যবহার করে দূরশিক্ষণ প্রোগাম বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে যা বয়স্ক শিক্ষা বিস্তারে প্রভাব ফেলে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় (১৯৯২) থেকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ (বাউবি) বিটিভির মাধ্যমে দূরশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বাউবির প্রথম

দূরশিক্ষণ কার্যক্রম ছিল ব্যাচেলর অব এডুকেশন বা বিএড প্রোগ্রাম। এছাড়াও বিটিভিতে এখন স্কুল সিলেবাসের সাথে মিল রেখে কিছু কিছু ডিজিটাল ক্লাস সমপ্রচার করা হচ্ছে।

এছাড়াও উন্নতদেশগুলো সমসাময়িক প্রযুক্তি তথা স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট, কম্পিউটার, ইন্টারেক্টিভ হোয়াইট বোর্ড, টেলিভিশন,রেডিও ইত্যাদি শ্রেণি কক্ষের শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ায় সমন্বয় করে আসছে। এগুলোর মাধ্যমে যেমন শিক্ষার গুনগত মানের উন্নতি সাধিত হয়েছে তেমনি শিখন প্রক্রিয়া হয়েছে শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক। নব্বইয়ের দশকে শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ায় কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে পাঠদানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। ইন্টারনেটের(১৯৯৬)যাত্রা শুরু হলে জ্ঞানার্জনে পথ আরো উন্মুক্ত ও বিস্তৃত হয়। যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থী-শিক্ষার্থীও শিক্ষক-শিক্ষক ইন্টারনেট প্রযুক্তির সহায়তায় নানা রকম সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে নিজেদের মাঝে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা প্রতিদিনই শিখতে পারছে। বিদ্যালয় তাদের কাছে শিক্ষালাভের একমাত্র জায়গা থাকছে না। শিখন ঘটছে তাদের নানা রকম সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। আধুনিক

প্রযুক্তির সমন্বয়ের ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমেই পাচ্ছে প্রযুক্তির ছোঁয়া, অর্জন করছে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা। এখানেই শেষ নয়;শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম যেমন ফেসবুক, টুইটার, স্কাপি, ব্লগ ইত্যাদিতে ক্লাসের বিষয় বস্তু শেয়ার করছে এবং ফিডব্যাক লাভের মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করছে। উইকি, গুগল সার্চ ইত্যাদি ওপেন সোর্স ব্যবহার করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু জানতে পারছে, শিখতে পারছে। তথ্য বিশ্বের সাথে যোগাযোগ রেখে নিজেদের প্রস্তুত করে নিতে পারছে। শিক্ষায় প্রযুক্তির যথোপযুক্ত সমন্বয়ের ফলে শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হচ্ছে নতুন কিছু শিখতে। যখন যেখানে খুশি তখন সেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা তাদের চাহিদামত শিখতে পারছে, ই-বুককে পড়তে পারছে। শিক্ষক সহায়কের ভূমিকা পালন করছে। গবেষণায় দেখা গেছে প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীদের ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের ক্ষমতা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা দুটোই বাড়ছে যা তাদেরকে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করছে। যখনই নতুন কোন প্রযুক্তির উন্মেষ ঘটেছে তার প্রভাব পড়েছে শিক্ষাক্ষেত্রে। উন্নত দেশগুলো নতুন প্রযুক্তিকে স্বাগত জানিয়েই তাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করে তুলছে।

তাহলে বাংলাদেশ কেন এসব সুযোগ থেকে পিছিয়ে থাকবে? বিংশ শতাব্দীতে উন্নত বিশ্ব শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ায় যে উত্কর্ষ সাধন করতে পেরেছে তা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ইংলিশ এন অ্যাকশনের (২০০৯) গবেষণায় দেখা যায় বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার খুব কম। এমন হওয়ার পিছনে যৌক্তিক কারণও আছে। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সাল থেকে স্কুল শিক্ষকদের জন্য আইসিটি প্রকল্পের মাধ্যমে সিপিডি ইন আইসিটি প্রশিক্ষণের প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করে। যার মাধ্যমে প্রযুক্তির ছোঁয়াহীন শত বছরের প্রথাগত শিক্ষায় পরিবর্তন সাধনের চেষ্টা করা হচ্ছে। রেডিও,টেলিভিশন,ওভার হেড প্রজেক্টর,ইন্টারনেট, স্মার্ট বোর্ড ইত্যাদির ব্যবহারের সুবিধা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ছিল না। বর্তমানে সরকারি উদ্যোগে একটি ক্লাসরুমকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে রূপান্তর করা মাধ্যমে এসব সুবিধা ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহারে ক্ষেত্রে বড় ধরণের উত্তোরণ ঘটে চলেছে।

বাংলাদেশ এখন উন্নত দেশের মত শিক্ষায় প্রযুক্তিগত সুবিধা গ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছে। তবে প্রযুক্তির গুনগত মান ও ব্যাপকতা, প্রশিক্ষণের উত্কর্ষতা, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সর্বোপরি শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রয়োজন শিক্ষকদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি যা শিক্ষার্থীদের একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সক্ষম এমন যোগ্যও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি