Loading..

প্রকাশনা

২১ অক্টোবর, ২০২০ ০৯:০২ অপরাহ্ণ

এলোভেরার ১৫ টি উপকারীতা ও অপকারীতা


অ্যালোভেরার ১৫ টি উপকারিতা–
ও অপকারিতা!! ?????
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী একটি রসালো উদ্ভিদ প্রজাতি। এটি হল এলো পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এদের মধ্যে প্রচুর পরিমানে ভেষজ গুণ আছে। বহুগুণে গুণান্বিত এই সমস্ত উদ্ভিদের ভেষজ গুণের কোন অন্ত নেই। এর মধ্যে আছে প্রচুর ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, সোডিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ও ফলিক অ্যাসিড ইত্যাদি। এই উদ্ভিদের আদি নিবাস হল মাদাগাস্কার ও আফ্রিকার মরু অঞ্চল ।
ঘৃতকুমারী উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে ২০ রকমের খনিজ। মানবদেহের জন্য যে ২২ টি এমিনো অ্যাসিড প্রয়োজন তার ৮ টি এও মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়া এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন A, B1, B2, B6, B12, C এবং E।
১) অ্যালোভেরা চুল সুন্দর করতে:
চুল সুন্দর করার জন্য অ্যালোভেরা। অ্যালোভেরার ব্যাবহার মাথার খুশকি দূর করতে করা হয়। এছাড়া ঝলমল চুলের জন্যে অ্যালোভেরা অনেক উপকারী। তাই চুলের যত্নের জন্য অ্যালোভেরা আপনার নিত্যসংগী হতে পারে।
২) ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা:
ত্বক যত্নের জন্য অ্যালোভেরার ব্যবহার আমরা সবাই একটু আদটু জানি। অ্যালোভেরার মধ্যে যে অ্যান্টি ইনফ্লামেনটরী উপাদান থাকে তা ত্বকের ইনফেকশন দূর করে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা অনেকাংশে কমিয়ে দেয় এবং ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূরীকরণ করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩) মাংসপেশী ও জয়েন্টের ব্যথা প্রতিরোধে:
অ্যালোভেরা দেহের মাংসপেশীর ব্যথা বা যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে। এই অ্যালোভেরা জেলের ক্রিম যদি ব্যাথার স্থানে লাগানো হয় তাহলে ব্যাথা কমে যায়।
৪) হার্ট সুস্থ এর জন্য অ্যালোভেরা:
অ্যালোভেরার জুস হার্টকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে খুবই প্রয়োজন। এই অ্যালোভেরা শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এটি আবার ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রন করে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে এবং রক্তের মধ্যে অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দেয়। আবার এই অ্যালোভেরার দেহের দূষিত রক্ত বের করে রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে দীর্ঘদিন আপনার হৃদপিণ্ড বা হৃদযন্ত্র সুস্থ সবল থাকে।
৫) ওজন কমাতে অ্যালোভেরা:
অনেক পুষ্টিবিদ ডায়েট লিস্টে অ্যালোভেরা জুস রাখার উপদেশ দিয়ে থাকেন। এর কারণ হল ওজন কমাতে অ্যালভেরা জুস খুবই কার্যকরী। ক্রনিক প্রদাহের ফলে শরীরে মেদ জমে। অ্যালোভেরা জুসের মধ্যে অ্যাণ্টি ইনফ্লামেনটরী উপাদান থাকে যা এই প্রদাহ রোধ করে ওজন কমাতে করতে সাহায্য করে।
৬) দাঁতের জন্য অ্যালোভেরা:
অ্যালোভেরার জুস দাঁত এবং মাড়ির ব্যথার জন্য খুবই উপকারী উপাদান। যদি দাঁতে কোন ইনফেকশন থাকে তাহলে তা দূর করে দেয়। নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস যদি খাওয়া হয় তাহলে দাঁতের ক্ষয় অনেকাংশে কমে যাওয়া।
৭) ক্লান্তি দূরীকরণে:
দেহের দুর্বলতা দূর করতে অ্যালোভেরার জুস খুবই কার্যকারী। যদি আপনি অ্যালোভেরার জুস নিয়মিত খান তাহলে শরীরের ক্লান্তি দূর হবে এবং দেহ সতেজ ও সুন্দর থাকবে।
৮) হজমশক্তি বাড়াবার জন্য অ্যালোভেরা:
হজমশক্তি বাড়াতে অ্যালোভেরা জুসের কোন জুড়ি নেই। অ্যালোভেরার জুস অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া রোধ করে, যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। আবার এই অ্যালোভেরা ডায়রিয়া রোগের বিরুদ্ধেও খুব ভাল কাজ করে।
৯) কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূরীকরণে:
অ্যালোভেরার জুসের মধ্যে যে জেল থাকে তার গুন অনেক। এই জেল নিয়মিত খাওয়া হলে পেটের সমস্যা দূর হবে। এছাড়া অ্যালোভেরা জেলে প্রায় ১৯ থেকে ২০ রকম অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা ইনফ্লামেশন এবং ব্যাকটেরিয়া রোধ করে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে ও বুক জ্বালা রোধ করে। আর যদি স্বাস্থ্যকর খাদ্যের পাশাপাশি নিয়মিত অ্যালোভেরার রস পান করা হয় তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
১০) রোগ-প্রতিরোগ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অ্যালোভেরা:
অ্যালোভেরা হল অ্যান্টি ম্যাইকোবিয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদানসমৃদ্ধ একটি গাছ। অ্যালোভেরা জুস নিয়মিত পান করলে শরীরে রোগ-প্রতিরোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং দেহের টক্সিন উপাদান দূর করে শরীর সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১১) ডায়াবেটিস প্রতিরোধে অ্যালোভেরা:
অ্যালোভেরার জুস রক্তে সুগারের পরিমাণ বজায় রাখে ও শরীরে রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে। যদি ডায়াবেটিসের শুরুর দিকে নিয়মিত অ্যালোভেরা জুস খাওয়া হয় তাহলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা অনেকাংশে সম্ভব। সুতরাং খাওয়ার আগে বা পরে নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস পান করুন তাহলে আপনার ডায়াবেটিস ঠিক নিয়ন্ত্রনে থাকবে।
১২) মুখের দুর্গন্ধ দূরীকরণে অ্যালোভেরা:
অ্যালোভেরায় মধ্যে আছে প্রচুর ভিটামিন-সি, যা মুখের জীবাণু দূর করে মাড়ি ফোলা ও মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে। কোন এক গবেষণাই দেখা গেছে যে, এই অ্যালোভেরার জেল মাউথ ওয়াশ এর বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
১৩) মুখের ঘা এর জন্য অ্যালোভেরা:
ভিটামিন বি এর অভাবে অনেকের মুখে ঘা হয়, আর এই মুখের ঘা ঠিক করতে অ্যালোভেরা অত্যন্ত কার্যকারী। যদি ঘায়ের জায়গায় অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে দেওয়া হয় তাহলে মুখের ঘা ভাল হয়।
১৪) ক্যান্সার প্রতিরোধে অ্যালোভেরা:
অ্যালোভেরার মধ্যে রয়েছে অ্যালো ইমোডিন, যা মেয়েদের স্তন ক্যান্সার ছড়ানো প্রতিরোধ করে। এছাড়া আরও অনেক ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে অ্যালোভেরা কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।
১৫) চর্মরোগ ও ক্ষত সারাতে:
অ্যালোভেরা প্রাকৃতিক ঔষধিরও কাজ করে থাকে। বিভিন্ন চর্মরোগ ও ক্ষত সারায় এর জন্য এই অ্যালোভেরার জুস খুবই উপকারী। প্রাথমিক চিকিত্সায় অনেক সময় অ্যালোভেরা ব্যবহার করা হয়।
যদি আপনি অ্যালোভেরা নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন তাহলে অনেক রোগ-জ্বালা থেকে খুবই সহজে দূরে থাকতে পারবেন। অ্যালোভেরার বিভিন্ন উপকারিতার মধ্যে এখানে কয়েকটি মাত্র উল্লেখ করা হয়েছে।
অ্যালোভেরার অপকারিতা–
এই উদ্ভিদটির অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাবে শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়। ড্যান্ড্রাফ, সেরিয়াসিস ও এজমা এর মতো রোগগুলোর জন্য স্কিন কেয়ার চিকিৎসাগুলোতে অ্যালোভেরাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই উদ্ভিদের এতো গুণ থাকা সত্ত্বেও এটি কি শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে? আমরা হয়ত এ বিষয়ে কেউ সেভাবে চিন্তাও করে দেখি না!
অ্যালো ল্যাটেক্স ক্র্যাশ এবং পেট ব্যথা এই ধরনের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আবার যদি ল্যাটেক্স এর দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার করা হয় তবে কম পটাশিয়াম, ডায়রিয়া, প্রস্রাব রক্ত, কিডনি সমস্যা, পেশী দুর্বলতা, হৃদয় ব্যাঘাত এবং ওজন হ্রাস ক্লেইন ল্যাটেক্সের উচ্চমাত্রা এমনকি কিডনি ফেইলির ঝুঁকির মধ্যে রাখতে পারে। এমনকি এর ব্যবহারের ফলে মেয়েদের গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার এই অ্যালো ল্যাটেক্স খাওয়ানোর ফলে বাচ্চাদের ডায়রিয়া বা পেট ব্যথা হতে পারে। একই সঙ্গে মায়ের বুকের দুধ সন্তানকে খাওয়ার মাধ্যমেও এর ক্ষতিকর প্রভাব মায়ের শরীর থেকে সন্তানের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। অ্যালোভেরা জেল শিশুদের ক্ষেত্রে ত্বকের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
চিকিৎসক বা গবেষকদের মতে, এই উদ্ভিদের জেল নিরাপদ তখন যখন এটি ওষুধ অথবা জেল হিসেবে শরীরের চামড়ায় প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক উপায়ে যখন অ্যালোভেরার ভেতরের রসালো পদার্থ টি বের করা হয়ে থাকে তখন এর সঙ্গে ভুল বশত ‘অ্যালো লেটেক্স’ বের হতে পারে। যা মানব শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই ল্যাটেক্স অ্যালোভেরা উদ্ভিদের পাতার মধ্যে থাকে। যার রঙ সাধারনত হলদে হয়ে থাকে। যদি এই অ্যালোভেরার শাঁসের সঙ্গে এই ল্যাটেক্স মিশে যায় আর তা যদি খাওয়া হয় তবে এটি শরীরের অনেক ধরনের রোগের সৃষ্টি করতে পারে।



আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি