Loading..

ম্যাগাজিন

২৩ অক্টোবর, ২০২০ ০৭:৩৬ অপরাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু: বিয়ের উপহার, সাতাশ হাজার টাকা, খরগোশ ও কই মাছের মাথা

বঙ্গবন্ধু: বিয়ের উপহার, সাতাশ হাজার টাকা, খরগোশ ও কই মাছের মাথা


১. বিয়ের উপহার: 

“ ১৯৭৪ সালের ১ মার্চ আমি বিয়ে করি।   ফেব্রুয়ারি মাসের কোনো একদিন তারিখ মনে নেয়। দুপুর বেলায় বঙ্গবন্ধু যখন খেতে বসলেন তখন বিয়ের কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকে দাওয়াত দিই। অবশ্য আমার সহকারী কন্ট্রোলার হাসানুজ্জামানের কথামতো বঙ্গবন্ধুকে দাওয়াত দেয়া হয়। সহকারী কন্ট্রোলার যখন বিয়ের প্রসঙ্গ তুলে বঙ্গবন্ধুকে দাওয়াত দিচ্ছিলেন আমি তখন ওই রুমের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। বিয়ের কথা শুনে আমাকে ডাক দিলেন। জানতে চাইলেন কোথায় বিয়ে করছি? বউ কী করে? কতটুকু পড়াশোনা করেছে, শ্বশুর কী করে, এম অনেক প্রশ্ন? উত্তর দেয়ার পর বঙ্গবন্ধু তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদকে ডেকে বললেন, ওকে এক হাজার টাকা দিয়ে দে। আর আমাকে বললেন. তোর বউকে একটা বেনারসি শাড়ি আর একটা ঘড়ি কিনে দিস এ টাকায়। বঙ্গবন্ধুর দেয়া টাকা দিয়ে স্ত্রীকে লাল পাড়ের একটি হলুদ শাড়ি কিনে দিয়েছিলাম। এই হলো বঙ্গবন্ধু।...বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসায় রকমফের দেখিনি”- বঙ্গবন্ধুর মাহনুভবতা ও ব্যক্তিত্বের কাছে সবাই ছিল ম্রিয়মান; মুহাম্মদ মোশারফ হোসেন: গণভবেনের সাবেক স্টোরকিপার; সূত্র: ১৫ আগস্ট ২০২০; বণিত বার্তা


২. কই মাছের মাথা:

 “খাবার সময় গেলে মুখের দিকে তাকিয়ে প্রথম প্রশ্ন: ‘তুমি খেয়েছ?’ আমরা সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। সফলতার ভাগ কম। তিনি কিছু সময় মুখের দিক তাকিয়ে বলতেন, ‘তোমার মুখ শুকনো দেখা যাচ্ছে, খাও, পরে কাজ।’ নিজ হাতে প্লেট এগিয়ে দিয়ে ভাত-মাছ উঠিয়ে দিতেন। কই মাছ ও মাছের মাথা নিত্যদিনের মেনু। দেশের প্রধানমন্ত্রীর সামনে কই মাছ খাওয়া দুষ্কর। পরিবেশ সহজ করার জন্য তিনি হয়তো বলতেন: ‘তোমরা মাছ খাওয়া শেখোনি, দেখো এভাবে খেতে হয়।’ কই মাছের কাঁটা সরিয়ে বা মাছের মাথা হাত দিয়ে ভেঙে কীভাবে মুখে পুরতে হয় দেখিয়ে দিতেন” বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি: ড. মসিউর রহমান: বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব; সূত্র: ১৫ আগস্ট ২০২০; বণিত বার্তা


৩. সাতাশ হাজার টাকা

“১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসে আমি চলে গেলাম ফ্রান্সে। যাওয়ার আগে শেষ যেদিন তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল, সেদিন তার চোখে জল দেখেছিলাম। চুয়াত্তরের বন্যার ত্রাণ তহবিলে দেওয়ার জন্য আমি ছবি এঁকে, বিক্রি করে সাতাশ হাজার টাকার একটা চেক নিয়ে গিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর কাছে। চারদিকে সমস্যা। সামাল দেওয়া যাচ্ছে না দেশের দুর্নীতি। সেই চেক হাতে নিয়ে তিনি সেদিন কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চশমাটা খুলে আমাকে বললেন, 'এই টাকা। কী হবে এটা দিয়ে আমার! এটা তুই তোর বাবাকে দিয়ে দে। তোর বাবাকে কিছুই তো দিতে পারলাম না।' আমি বললাম, না কাকা। আমি এটা মানুষের জন্য করেছি। তখন সেদিন এই এক বড় মানুষকে দেখলাম আমার মাথায় হাত দিয়ে কেঁদে ফেললেন। বললেন, 'বেঁচে থাক'।


আমি বেঁচে আছি। শুধু তাকেই এই বাংলার মাটিতে বেঁচে থাকতে দিলো না ওরা।”-সাক্ষাৎকার: ‍শিল্পী  শাহাবুদ্দিন আহমেদ; বঙ্গবন্ধু, আমাদের ভিত্তির স্থপতি; ১৫ আগস্ট ২০২০; দৈনিক সমকাল


৪.খরগোশ

“১৯৭৩ বা '৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু একবার আমাদের হেয়ার রোডের বাসায় এসেছিলেন। আমার বাবা তখন অর্থমন্ত্রী। আমার ভাই সোহেল অনেক ছোট। বঙ্গবন্ধু তাকে দেখে বললেন, 'সোহেল, তোমার কী পছন্দ বলো তো? কী চাও তুমি?' তখন সোহেল বলল, 'আমার খরগোশ চাই।' বঙ্গবন্ধুর কথাটা মনে ছিল। তারপর ১৯৭৫ সালে হঠাৎ একদিন বঙ্গবন্ধু আম্মাকে ফোন করে বললেন, 'সোহেলের তো খরগোশ খুব পছন্দ। ওর জন্য খরগোশ পাঠাচ্ছি।' পরে বঙ্গবন্ধু সুন্দর একটা কাঠের খাঁচায় দুইটা খরগোশ পাঠিয়েছিলেন। সেই খরগোশ দুইটাকে নিয়ে খুবই আনন্দ করতাম। ওদের আমরা গাজর ও কচি ঘাস খাওয়াতাম। আমার বাবাও পরম যত্ন নিয়ে খরগোশগুলোর দেখাশোনা করতেন। এটা যে তার মুজিব ভাইয়ের উপহার।”- সাক্ষাৎকার: সিমিন হোসেন রিমি এখনও মাথার ওপর বঙ্গবন্ধুর হাতের স্পর্শ অনুভব করি; ১৫ আগস্ট ২০২০; দৈনিক সমকাল

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি