Loading..

ম্যাগাজিন

২৫ অক্টোবর, ২০২০ ০২:১০ অপরাহ্ণ

হারিয়ে যাওয়া সাহিত্যিক হাবীবুর রহমান

হারিয়ে যাওয়া সাহিত্যিক হাবীবুর রহমান

স্মৃতি কী সত্যি হারিয়ে যায়? নাকি ভুলে যাওয়া? না তা নয়! আসলে ভোলা মন আমাদের গুণীজনকে ভুলে যাই তাড়াতাড়ি জাতি হিসেবে কী অকৃতজ্ঞ আমরা! যে ব্যক্তি সংসার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে মেধাশ্রম দিয়ে সমৃদ্ধ করে গেলেন, তাঁকে খুব একটা হৃদয়ে ধরে রাখি না মৃত্যুর পর তাঁকে হারিয়ে ফেলি সাহিত্য সংস্কৃতিতে অমরত্বের ধারণাটা ভুল হয়ে যায় এই অকৃতজ্ঞতাবোধ দিনদিন আমাদের শিক্ষাকে করেছে ম্লান গুণীজনের কদরের পরিবর্তে মন্দজনের প্রশংসাই করছি লোভ স্বার্থের কারণে সমাজে হচ্ছে দুষ্টের পালন শিষ্টের দমন আমাদের সাহিত্যেও বিষয়টি দৃশ্যমান ভালো লেখক সাহিত্যিকরা আজ দেশে অপসৃয়মান সৃজন এবং মননশীল বিশাল সাহিত্য ভাণ্ডারের অনেক লেখক ঢাকা পড়ে আছেন আমাদের স্মরণের খেলাঘরে তেমন বিস্মৃত একজন প্রতিভাবান গুণী সাহিত্যিক হাবীবুর রহমান

বয়স তখন সাত কি সাড়ে সাত। মেজদি ছিলেন আমার অবসরের সঙ্গী। বাল্যবেলায় দুষ্ট ছিলাম বেশ। দস্যিপনার জন্য মায়ের বকুনি মার খেতাম খুব। মেজদি মাঝে মাঝে রক্ষা করতেন। ছড়া, গল্প তিনিও বেশ শুনাতেন। ঘরে ছিলো বাবার অবসরের খোরাক রেডিও। সত্তরের দশকে সেই সময়। নিম্ন মধ্যবিত্তের ঘরে বিনোদন যন্ত্র থাকা মানে সে সময়ে বিশাল ব্যাপার! মহকুমা শহর চাঁদপুরে বাস। সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবার। সকালে রেডিও নিয়ে মোড়াতে বসে পড়তেন মেজদি সাগরিকা মজুমদার। উদ্দেশ্য রেডিও বাংলাদেশ শিশুদের অনুষ্ঠান খেলাঘর শোনা। আমি পাশে গিয়ে দাঁড়াতাম। দিদি বলতেননারু ছড়া শোন। মজার ছড়া! ভাইয়া বলছেন।
- ভাইয়া কে?
- ভাইয়ার নাম হাবীবুর রহমান।
শিশুবেলার এই ভাইয়াকে দিদির মতো বড় হয়ে বেশ মনে পড়তো। ছোট্টকালের রেডিওতে তাঁর গল্প, ছড়া শুনে বড় হয়েছি। তখন মনে হতো যদি সরাসরি দেখতে পেতাম তাঁকে? কেমন তিনি দেখতে? কীভাবে ভাইয়া আমাদের মন রাঙিয়ে তোলেন? কল্প কাহিনীর স্বপ্নরাজ্যে কি করে তিনি মধুর কথায় ভুলিয়ে দেন মন? শিশুবন্ধু ভাইয়াকে দেখেছি ঠিকই। তবে সশরীরে নয়, তাঁর কথা লেখায়। জেনেছি তাঁর শিশুতোষ বন্ধুময় প্রাণবন্ত প্রকৃতি। সে দিনগুলোর প্রাণময় স্মৃতি আজও মনের আয়নাতে দেখি। অত্যন্ত শিশুমনস্ক সংগঠক ভাইয়াকে লেখক হিসেবে বড় পরিসরে খুঁজে পাই আশির দশকের শুরুতে ওনার গ্রন্থপাঠে। উচ্চতর শিক্ষার সূত্রে ঢাকায় এসে বড় বড় পাঠাগারে পাঠের মধ্য দিয়ে এই লেখক বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। বিজন বনের রাজকন্যা, আগডুম-বাগডুম, সাগরপাড়ের রূপকথা, পুতুলের মিউজিয়াম, গল্পের ফুলঝুরি, বনে বাদাড়ে, লেজ দিয়ে যায় চেনা, হীরা মতি পান্না, বনমোরগের বাসা ইত্যাদি শিশু সাহিত্যের জনক তিনি। অনুবাদ সাহিত্যে তিনি যুক্ত করেছেন চীনা প্রেমের গল্প, জন কেনেডি, জীবনের জয়গান পাল তুলে নাও গ্রন্থ। বড়দের জন্য লিখেছেন কবিতাও। তাঁর সৃজনী ভাণ্ডারে উপাত্ত নামে একটি কাব্যগ্রন্থও রয়েছে। পরিবার, সমাজ রাষ্ট্রের কল্যাণমুখী এসব সৃষ্টিশীল লেখা বেশিরভাগই ১৯৬১ থেকে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে রচিত। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যিক হাবীবুর রহমান সুসম্পাদিত কিশোর সাহিত্য সংকলন সপ্তডিঙ্গা বের হয় কলিকাতার বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দেবসাহিত্য কুটীর থেকে। সে সময় দুবাংলায় শিশু কিশোর সাহিত্যের আকাল চলছিলো। সপ্তডিঙ্গা সে অভাব মোচন করে সম্পাদক হাবীবুর রহমানের কৃতিত্বে। বেশ কিছু নাটকের রচয়িতাও তিনি। শিশুতোষ নাটক কালের পুতুল বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে। কিন্তু ছোটদের উপযোগী নাটক আলোর ফুল, মায়া কানন এবং চিতল হরিণ তিনি প্রকাশ করে যেতে পারেননি। আজও তা অপ্রকাশিত!

 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি