Loading..

প্রকাশনা

১৫ জানুয়ারি, ২০১৫ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুবিধা না বাড়িয়েই ৪৯১ প্রাথমিকে ৮ম শ্রেণি চালু
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি না করেই ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করা হয়েছে। ফলে নানামুখি বিপাকে পড়তে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। পাশাপাশি গলদগর্ম হতে হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তাদের। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি না করেই এভাবে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু কেন? শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের জন্য তড়িঘড়ি করে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। ২০১৩ সালে প্রতি উপজেলায় একটি করে মোট ৪৯১টি স্কুলে ষষ্ঠ, ২০১৪ সালে সপ্তম এবং এবার অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করা হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সন্তোষ কুমার অধিকারী বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে একটি ঘোষণা আসবে। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা প্রাথমিক শিক্ষার আওতাভুক্ত হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্ব্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে হবে। শুরুতে কিছু বাধা তো থাকবেই। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জাফরাবাদ আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৩ সাল থেকে চালু হয় ষষ্ঠ শ্রেণী। পর্যায়ক্রমে এবার অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু হয়েছে। দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়ছে এই স্কুলে। এ কারণে অবকাঠামো সুবিধাও আশপাশের স্কুলের চেয়ে ভালো। শিক্ষকও আছেন ২১ জন। এবার এ স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমপানী পরীক্ষায় ২৩০ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই উত্তীর্ণ হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিকে উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থী ওই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হবে। কিন্তু অবকাঠামো সুবিধা না থাকায় ষষ্ঠ শ্রেণীর সব শিক্ষার্থীকে ওই স্কুলে ভর্তি করা যাচ্ছে না। প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন জানান, শিক্ষার্থী বসার জায়গা নেই। কিভাবে এত শিক্ষার্থী ভর্তি করবো। এ নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরাও বিপাকে পড়েছেন। এভাবে দেশের চালু করা প্রতিটি স্কুলেই কম বেশি সমস্যা রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ১২টি সমস্যা চিহ্নিত করে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। সমস্যার মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো, শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, ছাত্রীদের জন্য বিশেষ সুবিধা ইত্যাদি। গাজীপুরের কাপাসিয়া থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহমেদ জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম পর্যন্ত চালু করতে গিয়ে কিছুটা সমস্যা তো হচ্ছেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে সকল বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত চালু হবে সে সকল বিদ্যালয়ে উপযোগী শ্রেণীকক্ষ, টয়লেট সুবিধাসহ ছাত্রীদের জন্য পৃথক কমনরুম দরকার। কিন্তু অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু হওয়া স্কুলগুলোতে এ সুবিধা নেই। বর্তমানে স্কুলগুলোতে যে শিক্ষক রয়েছেন তাদের ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী পড়ানোর প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী পড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রয়োজন। সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতির আলোকে পড়ানোর জন্য এসব শিক্ষকদের কোন প্রশিক্ষণ নেই। প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষক পাঠদান করতে গেলে সব শিক্ষার্থীর মধ্যে গলদ থেকে যেতে পারে। পাশাপাশি ফল বিপর্যয়ের সম্ভবনা থাকবে। ৬ষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য প্রশ্নপত্র প্রণয়ন এবং মূল্যায়ন পদ্ধতির ওপর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন কিন্তু যে শিক্ষকরা পড়াচ্ছেন তাদের সে প্রশিক্ষণ নেই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক নেই। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে পড়ানোর জন্য বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক প্রয়োজন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত চলমান কারিকুলাম লানির্ং আউটকাম বেসপ এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুসৃত কারিকুলাম কম্পিটেন্সি বেসড। উভয় কারিকুলামের মধ্যে সমন্বয় ও ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কিন্তু এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেই। ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করতে বোর্ড স্বীকৃতিও প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের সাময়িকসহ বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলের স্বীকৃতি এবং জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিতসহ রেজিষ্ট্রেশন করা প্রয়োজন বলে মনে করে প্রাথমিক ও শিক্ষা অধিদপ্তর। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় বলছে, প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত হলে এটি থাকবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে। এ কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ঢাকা বোর্ডের অনুমোদনের প্রয়োজন আছে কিনা এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া প্রাথমিক স্তরের বই ছাপার দায়িত্ব পালন করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। এভাবে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত হলে জেএসসি পরীক্ষা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বোর্ডগুলোর অধীনে হতে পারে। এ বিষয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় ও সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পায়। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরাও উপবৃত্তি পায়। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চালু ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পাচ্ছে না।

আরো দেখুন