Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

১৯ নভেম্বর, ২০২০ ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে জেন্ডারভিত্তিক অসমতা


আসসালামু আলাইকুম,

নারী হলো পৃথিবীর অর্ধেক জনসমষ্টি। সভ্যতা সৃষ্টির লগ্ন থেকেই পৃথিবীর কল্যাণে নারীর অবদান অনঃস্বীকার্য। একজন নারী শুধুমাত্র কারো মা, বোন বা স্ত্রীই নয় বরং ধৈর্য্য , সংগ্রাম, সাহস, দৃঢ়তা ইত্যাদি বিশেষনের অন্যরূপ। নারীর হাত ধরেই হাজার হাজার বছর ধরে এ সভ্যতা গড়ে উঠেছে। তাই নারীকে অবহেলা করে কখনো উন্নতির নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়। আধুনিক সমাজে নারী পুরুষ সকলেরই মৌলিক অধিকার এক ও অভিন্ন – এ কথাটি বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। কিন্তু নারীরা এখনো অনেকাংশেই পুরুষদের তুলনায় পিছিয়ে। সৃষ্টিলগ্ন থেকেই এ সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য বিরাজমান। এ বৈষম্য বিধাতা প্রদত্ত নয়। বরং তার সৃষ্টির দ্বারা সৃষ্ট এ বৈষম্য। জন্ম থেকেই একটি কন্যা শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে নানা ক্ষেত্রে তার বৈষম্যের ফর্দটাও বড় হতে থাকে। সভ্যতা বিকাশে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অবদান দৃশ্যমান কখনও বা মায়ের রূপে, কখনও বা বোনের রূপে, কখনও বা মেয়ের রূপে আর কখনও বা স্ত্রীর রূপে। শিশুকাল থেকেই নারীরা সকল ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়ে চলেছে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এখনো নারীদেরকে পুরুষের অধস্তন করে রাখে। সকলক্ষেত্রে পুরুষ নারীর উপর তার আধিপত্ত বিস্তার করে। ফলে দক্ষ ও মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও নারীরা বঞ্চিত হয়। অনেক চেষ্টার পর এ অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হলেও অধিকাংশ স্থানে নারী –পুরুষের বৈষম্য কমেনি। নারীর প্রতি এ বৈষম্য দূরীকরণে প্রয়োজন - নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার নিরসন, কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষ উভয়ের অন্তর্ভূক্তি ইত্যাদি। তাহলে সমাজের প্রতিটি স্তরে এমন এক পরিস্থিতি বজায় থাকবে যেখানে নারী আপন মহিমায় স্বাধীনতা এবং মর্যাদার অধিকারী হয়ে উঠবে এবং নারী –পুরুষে থাকবে না কোনো ভেদাভেদ।

শিক্ষাক্ষেত্রে অসমতা:

বর্তমানে সারা বিশ্বে  যে বিষয় গুলো আলোচনায় ঝড় তুলেছে নারী শিক্ষা তার মধ্যে অন্যতম। নারী শিক্ষার বিষয়টি আমাদের সামাজিক অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে অপরিহার্যভাবে জড়িত। “নেপোলিয়ন বোনাপার্ট” বলেছেন,

“আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি শিক্ষিত জাতি দিব”

এ উক্তি থেকে বোঝাই যাচ্ছে নারী শিক্ষার গুরুত্ব কতটুকু। একটি শিশু জন্মের পর থেকে বেশিরভাগ সময় তার মায়ের সংস্পর্শে থাকে। একজন মা যদি শিক্ষিত হন, তিনি তার সন্তানদেরকেও শিক্ষিত করে তুলতে পারেন। এজন্য আরবিতে একটি প্রবাদ আছে

“একজন পুরুষ মানুষকে শিক্ষা দেওয়া মানে একজন ব্যক্তিকে শিক্ষিত করে তোলা আর একজন নারীকে শিক্ষা দেওয়া মানে একটি গোটা পরিবারকে শিক্ষিত করে তোলা।”

নারী শিক্ষার গুরুত্ব বর্ণনাতীত। কিন্তু নারী শিক্ষার এতো প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা সত্ত্বেও প্রশ্ন থেকেই যায়, নারী শিক্ষা কী সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়েছে?

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলা যেতে পারে যে, এ দেশের অনেক নারীরা এখনো শিক্ষার আলো পায়নি। হয়তো তাদের সে সুযোগই হয়ে ওঠেনি। কেবলমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই নারীরা এগিয়ে যেতে পারবে। এটি নারী উন্নয়নের প্রাথমিক উপাদান। একজন শিক্ষিত নারী তার নিজের অধিকার, স্বাস্থ্য, পরিবার সম্পর্কে সচেতন। কিন্তু নারী শিক্ষার প্রসারে প্রধান অন্তরায় হলো সচেতনতার অভাব। সাধারণ মানুষ ছেলেদের তুলনায় মেয়েদেরকে শিক্ষাদানে ইচ্ছুক নয়। তাদের মতে মেয়েদেরকে শুধু রান্নাঘর রক্ষণাবেক্ষণ এবং ঘরের কাজ শেখাতে হবে। কিন্তু তারা অবগত নন যে শিক্ষা জীবনের সকল স্তরেই প্রয়োজন। শিক্ষা শুধুমাত্র চাকরি পাওয়ার জন্যই নয়, উন্নত মানুষ হবার জন্য প্রয়োজন। এজন্য নারী শিক্ষার প্রসারে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এছাড়া একশ্রেনির মানুষ ধর্মীয় অজুহাত দেখিয়ে নারীদেরকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত  করেছে।  কিন্তু কোনো ধর্মেই নারীদেরকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রাখার কথা বলা হয়নি। তাই ভ্রান্ত ধারণা ভুলে নারীদেরকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে হবে। প্রত্যন্ত এবং মফস্বল অঞ্চলে নারীশিক্ষা সম্বন্ধে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। শিক্ষার মান বাড়াতে হবে এবং নারীর প্রতি জনসাধারনের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। আর এ জন্য নারীকেও এগিয়ে আসতে হবে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সহায়তায় আমরা লাভ করব একটি শিক্ষিত নারী জাতি। অবশ্য আজকাল এদেশের শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা। প্রতিবছর পাসের হার ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বেশি থাকছে। মেয়েদের ঝরে পড়ার হার কমে যাচ্ছে । এভাবে চলতে  থাকলে সেই সময় বেশি দুরে নয় যখন বাংলাদেশ হবে শতভাগ শিক্ষিত নারীর দেশ।

ধন্যবাদ....