Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

৩০ নভেম্বর, ২০২০ ০৫:০১ অপরাহ্ণ

পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষের ভূমিকা

পরিবেশ রক্ষায় গাছপালার ভূমিকা যে সর্বাধিক তা বলাই বাহুল্য। জীবন জগতে খাদ্য বা শক্তির জোগান উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে, অন্য কোনো প্রাণী নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না। সৌরশক্তিকে ব্যবহার করে সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভিদ কার্বোহাইড্রেট বা গ্লুকোজ নামক মৌলিক খাদ্য উপাদান প্রস্তুত করে। তারপর পর্যায়ক্রমে তার রূপান্তর ঘটে এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে স্থানান্তরিত হয়ে শক্তির জোগান দেয়। প্রত্যেক প্রাণীই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শক্তির জন্য উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল, তা সে মাংসাশী হোক বা নিরামিষাশিই হোক। তাই উদ্ভিদ হলো উৎপাদক আর বাকি সব প্রাণীই ভক্ষক। এক কথায় উদ্ভিদ ছাড়া এ পৃথিবীতে জীবন অকল্পনীয়। পরিবেশ রক্ষায় উদ্ভিদের ভ‚মিকা অতি ব্যাপক। উদ্ভিদ বাতাসে বিভিন্ন গ্যাসের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা অত্যধিক হলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, কারণ ওই গ্যাস তাপ শোষণ করে রাখে। বর্তমানে গ্রিন হাউস এফেক্ট নামে যা সুপরিচিত, সেটা এ কারণেই হয়। উদ্ভিদ বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে গ্রিন হাউস এফেক্টের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। অপরদিকে বাতাসে অক্সিজেন যোগ করে বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত বজায় রাখতে সাহায্য করে। এভাবে উদ্ভিদ বায়ুদূষণ কম করে বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখে। উদ্ভিদ বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে। উদ্ভিদের অভাবে উর্বর উৎপাদনশীল মাটি ধীরে ধীরে মরুভ‚মিতে পরিণত হয়। মাটির উর্বরতা বজায় রাখার জন্য দরকার বৃষ্টিপাত। বৃষ্টিপাত ঘটাতে আবশ্যক গাছপালা। ভূমিক্ষয় রোধে উদ্ভিদের ভূমিকা অপরিসীম। বৃষ্টির প্রচণ্ড গতি ও শক্তিকে প্রশমিত করে ভ‚মিকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করে। গাছপালার শিকড় মাটিকে আঁকড়ে বেঁধে তার ক্ষয়রোধ করে। জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রে গাছপালা অপরিহার্য। অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা উদ্ভিদই করে থাকে। গাছপালা থেকে মানুষ খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি, গৃহ নির্মাণ ইত্যাদি তো পেয়েই থাকে, অধিকন্তু গাছপালা পরিবেশ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে মানুষের মনে আনন্দের উদ্রেকও ঘটায়। পরিবেশ দূষণ কমিয়ে এবং পরিবেশ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে উদ্ভিদ মানুষের শারীরিক স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য উভয়ের উন্নতিতে সবচেয়ে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করে। উদ্ভিদের অপরিসীম গুরুত্ব শুধু বর্তমানকালে নয়, প্রাচীনকাল থেকেই উপলব্ধি করে আসছে। প্রাচীনকালে প্রকৃতির আরাধনা হতো বা বৃক্ষের পূজা করত এক শ্রেণির মানুষ। অনেক পীর-ফকিরের আস্তানাও তৈরি হয়েছে বৃক্ষতলে। বর্তমানে আমরা যে পরিবেশ সংকটে ভুগছি তার জন্য আমরাই দায়ী। তাই এ সঙ্কট থেকে মুক্তির জন্য প্রত্যেকেরই কিছু করণীয় আছে। নগরায়ন, শিল্পায়ন, কৃষির আধুনিকীকরণ ইত্যাদির ফলে পরিবেশ সঙ্কট বেড়েই চলেছে। অথচ শিল্পায়ন-নগরায়নের গতি থামানো বা কমানো মোটেই সম্ভব নয়। তাই দরকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা। এ ক্ষেত্রে উদ্ভিদ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভ‚মিকা পালন করতে পারে। উদ্ভিদের সংরক্ষণ ও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রত্যেক মানুষই কিছু অবদান রাখতে পারে। শুধু চাই মানুষের মনোভাব আর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, চাই পরিবেশ সচেতনতা। আজকাল আনুষ্ঠানিকভাবে গাছপালা লাগানোর কথা অনেক শোনা যায়। সরকারি বিভাগ তথা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গাছপালা লাগানো হয়। ঘটা করে পালিত হয় পরিবেশ দিবস। কিন্তু তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিছক আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। বাস্তবে এতে পরিবেশের তেমন উপকার হয় না। এক ঋতুতে রোপণ করা বৃক্ষের চারা পরবর্তী ঋতুর সাক্ষাত লাভে সমর্থ হয় না। নামিদামী ব্যক্তি যাঁদের পা মাটিতে পড়ে না, তাঁদের হাতে রোপণ করা বৃক্ষের চারা কি আর বৃক্ষে পরিণত হতে পারে? গাছ লাগিয়ে তাঁরা প্রচারের আলোয় আসেন বটে, কিন্তু তাঁদের লাগানো গাছ পরবর্তী ঋতুর আলো দেখতে পায় না। গাছ লাগানোর জন্য চাই গাছের প্রতি প্রকৃত ভালবাসা। চাই পরিবেশ প্রেম। চাই আধুনিক মানুষের যান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তন। পরিবেশ নিয়ে আমাদের উদ্বেগ ক্লাশরুম, সেমিনার, সভা সমিতি আর ভাষণেই সীমিত থাকলে চলবে না, তার বাস্তব প্রতিফলন দরকার। পরিবেশ সংকট সম্পূর্ণ রোধ করা সাধারণ মানুষের সামর্থ্যরে বাইরে হলেও এর মাত্রা অনেকটাই কম করা সম্ভব। শুধু গাছপালা পরিবেশ দূষণ সম্পূর্ণ রোধ করতে পারে না ঠিকই, তবে সেটাকে অনেকটাই কম করতে পারে, এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। এ কাজ সাধারণ মানুষের নাগালের একেবারে ভিতরেই। বাড়ি, রাস্তাঘাট, সরকারি অফিস, স্কুল-কলেজ সর্বত্রই কিছু পরিমাণে গাছপালা লাগানো সম্ভব। এ ব্যাপারে সবাই আন্তরিক হলে আমাদের পরিবেশকে অনেকটাই দূষণমুক্ত ও সবুজ করে তোলা যায়। তবে শুধূ গাছ লাগানোই শেষ কথা নয়, তাকে বাঁচিয়ে তুলতে হবে। আসছে বর্ষাকাল। বৃক্ষচারা রোপণের উপযুক্ত সময়। আসুন সবাই মিলে নিজ বাড়ীর আঙ্গিনায় স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যত বেশী সম্ভব বৃক্ষচারা রোপণ করি আর তা পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে বড় করে তুলি। মনে রাখতে হবে শুধু নিজে বৃক্ষচারা রোপণ করলেই হবে না অন্যকে যেমন পরিবারের সদস্য এবং সহপাঠীদের এ মহৎ কাজে উৎসাহী করে তুলতে হবে। এভাবে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই আমরা সুন্দর, সবুজ সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে পারি।