Loading..

ভিডিও ক্লাস

০৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

পরিবেশ সংরক্ষণ || আরবী ১ম ||নবম-দশম শ্রেণী || নুরুল হক || BY NIDM

প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়ে থাকে। পৃথিবীর পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যাবলী মোকাবিলার জন্য জাতিসংঘের উদ্যোগে স্টকহোমে এক মহাসম্মেলন বসেছিল ১৯৭২ সালে। এই সম্মেলনের পর গৃহীত হয় বিশ্ব পরিবেশ কর্মসূচী টহরঃবফ ঘধঃরড়হং ঊহারৎড়হসবহঃ চৎড়মৎধসসব. এ কর্মসূচীর আওতায় গত ৪৮ বছর যাবত আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে পরিবেশজনিত সমস্যাবলী নিরসনে তৎপরতা চলে আসছে। এ কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য তিনটি: (এক) পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের নিজস্ব অঞ্চলভিত্তিক পরিবেশগত সমস্যাবলী নির্ধারণ করবে। (দুই) বিভিন্ন দেশ চিহ্নিত সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাবলীর ব্যাপারে গবেষণা চালাবে। এতে সমবেতভাবে এবং পারস্পরিক সমঝোতা রেখে অংশগ্রহণ করবেন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণাগারগুলোর বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদরা। প্রয়োজনে তাঁরা আন্তর্জাতিক গবেষকদের সাহায্য নেবেন এবং সেই সঙ্গে এক দেশের গবেষণালব্ধ ফলাফল যাতে অন্যান্য দেশের গবেষকরা অবাধে পেতে পারেন তার ব্যবস্থা থাকবে। (তিন) গড়ে তুলতে হবে যথাযথ পরিচালন ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করবে দেশের সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যার লক্ষ্য হবে জনসাধারণের মাঝে পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে উপযুক্ত মানসিকতা গড়ে তোলা। ১৯৭২ সালের পর থেকে প্রতিবছর তুলে ধরা হয় পরিবেশগত এক একটি বিষয়। কোন বছর পানিদূষণ, কোন বছর বায়ুদূষণ। কোনো বছর বা শব্দদূষণ ইত্যাদি। বিভিন্ন সভা-সমিতি এবং প্রচার মাধ্যমে সেসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলে। কিন্তু পুরো ব্যাপারটাই শেষ পর্যন্ত সমাপ্ত হয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। তারপর সব চুপচাপ। যেসব আমলার উপর পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যাবলী সমাধানের পরিচালনাভার ন্যস্ত, তাদের অনেকেই বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেন কম। কাজ করেন দায়সারার মত, চাকরির তাগিদে। মুখে বলা হয়, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে উদ্বুদ্ধ করুন। কাজ করতে সাহায্য করুন। বাস্তবে তার প্রায় কিছুই হয় না। গবেষণার নামে আমাদের দেশে যা চলছে, তার সঙ্গে বাস্তবের যোগ কম। এক কথায়, গত ৪৮ বছরে সামগ্রিকভাবে গোটা বাংলাদেশের পরিবেশগত সমস্যাবলীর তথ্যনির্ভর কোন ছবি এখন পর্যন্ত তুলে ধরতে পারেননি আমাদের গবেষকরা। তৈরি করতে পারেনি এমন মানসিকতা, যা দেশের নাগরিকদের পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে উদ্যোগী করে তুলতে পারে। বিদেশ থেকে ধার করা কিছু চিন্তা-ভাবনা নিয়ে তারা তাত্তি্বক বা পরীক্ষামূলক গবেষণা করেন। পরিবেশ দূষণ বেশিরভাগই আঞ্চলিক সমস্যা। গবেষণা যদি আঞ্চলিক সমস্যানির্ভর না হয়, তার প্রক্ষেপ জনসাধারণের মনে কোনো প্রতিক্রিয়াই সৃষ্টি করতে পারে না। গড়ঃরাধঃরড়হ-এর ব্যাপারে এটা বড় রকমের একটা অন্তরায়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রকমের পরিবেশগত সমস্যা দুটো। (এক) ভূমির অবক্ষয়, (দুই) বনাঞ্চলের বিলোপ। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক দফতর থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বলা হয়েছে, প্রতিবছর শুধু ভারতীয় নদীগুলোই বাংলাদেশে পরিবহন করে আনে ২৪০ মিলিয়ন ঘনমিটার মাটি। বাংলাদেশ সীমান্তে এসে বিপুল পরিমাণ এ মাটি ঐ সব নদী মজিয়ে দেয়। ব্যাহত করে তাদের স্বাভাবিক প্রবাহ। এর ফলে বর্ষার সময় ঐ সব অঞ্চলে দেখা দেয় বন্যা। এছাড়াও উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে এ উপমহাদেশের বিস্তীর্ণ চাষের জমির আলগা মাটিও বর্ষায় নদী-নালায় এসে জমে। বন্যার সম্ভাবনা বাড়ায় অনেক অঞ্চলেই। যেসব অঞ্চলে এ ধরনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করা দরকার। তারপর মজা নদী-নালার পলি অপসারণে হাত দিতে হবে। জমির মাটি যাতে সরাসরি নদী-নালায় গিয়ে না পড়ে তার ব্যবস্থা করতে হবে। টঘঊচ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ৩০ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা নেই। এর ফলে প্রচন্ড ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে চাষের জমি, মাছ। চাষের ক্ষেত্র প্রভৃতি। বাংলাদেশের প্রায় বিশ হাজারের মত গ্রামের দেড় কিলোমিটারের মাঝে স্থানীয়ভাবে পানির কোন ব্যবস্থা নেই। এর ফলে ঐসব গ্রামে সংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেক বেশি। ঢাকায় অতিরিক্ত নোংরা অঞ্চলে বাস করে শহরের ৩৩-৩৪ শতাংশ মানুষ। দুর্ভাগ্য এই, যারা ধনী তাদের পয়সা আছে। পয়সার জোরে শহর এবং গ্রামাঞ্চলে পরিবেশগত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে তাদের অসুবিধা হয় না। কিন্তু যারা দরিদ্র যাদের শ্রমের উপর নির্ভর করে তাদের ভোগ বিলাস, তাদের নৈমিত্তিক প্রয়োজন মেটানোর দায় যাদের উপর ন্যস্ত তাদের কল্যাণের ব্যাপারে তারা কোন লক্ষই রাখে না। বনের কাঠ কাটে দরিদ্র মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে। বনের কাঠের বড়লোক ক্রেতা কাঠ কেনে নিজের বৈভব বৃদ্ধির তাগিদে। পরিবেশের অবক্ষয়ে দুটো কারণই দায়ী। বন সংরক্ষণ এদেশে সত্যিই বড় রকমের সমস্যা। জনসংখ্যা বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান জনতার আহার যোগানোর জন্য প্রতিবছর বাড়ান হচ্ছে চাষের জমি। বন কেটে বা পুড়িয়ে। এতে করে দেশের বনাঞ্চলের বিস্তৃতি কমছে। এছাড়াও দেশের বহু অঞ্চলে মানুষ জ্বালানি এবং ঘরবাড়ি তৈরির জন্যও নির্ভর করে গাছপালার উপর। ফলে বনের কাঠ কাটা চলে অবাধে। উদ্ভিদ অপসারণের দরুন তাই দেশের বহু অঞ্চল এখন খরায় কবলিত। মরু অথবা প্রায় মরু অঞ্চলে রূপান্তরিত। চাষের জন্য চাই পানি। খরার সময় সেচের পানির জন্য বেশিরভাগ অঞ্চলকে নির্ভর করতে হয় নলকূপের উপর। ফলে ভূগর্ভে সঞ্চিত পানির উপর চাপ পড়ছে। কোন কোন অঞ্চলে নলকূপ শুকিয়েও গেছে। কোথায় এমন পরিস্থিতি ঘটল তা খতিয়ে দেখা দরকার। কেন ঘটল ভূগর্ভস্থ বিজ্ঞানীদের তা অনুসন্ধান করা দরকার। সেই মতে দরকার ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের। এটাও আঞ্চলিক ব্যাপার। কথা নয়, চাই কাজ। এত কিছুর পরও আমাদের শিক্ষা হওয়া প্রয়োজন। কথার বানে মানুষকে না ভুলিয়ে সকলের উচিত পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য আন্তরিকতার সাথে কাজ করা। বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণের সময় এসেছে। ৫ জুন যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতা না হয় বরং এর যথাযথ প্রয়োগ যদি হয় আমাদের সমাজ, রাষ্ট্রীয় জীবনে তাহলেই কল্যাণ আসবে।