Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

১৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ১০:১৪ অপরাহ্ণ

ইলমুল ফারায়েজ এর সূত্রাবলী
“ইলমুল ফারায়েজ” হচ্ছে মীরাস বা উত্তরাধিকার সম্পত্তি ও তার ভাগ-বন্টনের জ্ঞান।
কোন মুসলমান ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তি ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী তার পাওনাদার এবং উত্তরাধিকারীদের মাঝে ভাগ করে দিতে হয়। একজন ব্যাক্তির মৃত্যুর পর তার সম্পদ ওয়ারিশদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার পূর্বে যেই কাজগুলো লক্ষ্যণীয় নিন্মে তা সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হলো।
(১) সর্বপ্রথম তার সম্পদ থেকে দাফন-কাফনের খরচ দিতে হবে। এক্ষেত্রে অপচয় করা যাবেনা। কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তিনদিন, সাতদিন বা চল্লিশ দিন পর ‘কুলখানি’, ‘চল্লিশা, ‘মেহমানী’ বা ‘মেজবানী’ নামে আমাদের দেশে যেই বিশাল খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করার প্রথা চালু আছে, শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। অনেকে সমাজের চাপে, লোকদের সমালোচনার ভয়ে কিংবা আত্মীয় স্বজনদেরকে খুশি করতে গিয়ে ঋণ করে হলেও এই ধরণের বিদআ’তী অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে, যা এক প্রকার অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই না। আবার এক শ্রেণীর হুজুরেরা মৃত্যুর পূর্বে অসুস্থ থাকার কারণে কোন ব্যক্তির নামায কাযা হলে তার জন্য কাফফারা দাবী করে বসে। এমন কাফফারা দেওয়ার কোন নিয়ম শরীয়তে নেই। মৃত ব্যক্তির সম্পদ থেকে শরীয়ত বহির্ভূত একটা টাকা খরচ করে সম্পদ নষ্ট করা যাবেনা।
(২) মৃত ব্যক্তি নিকট যদি কারো কোন সম্পদ আমানত হিসেবে গচ্ছিত থাকে, তাহলে সেটা তার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।
(৩) দাফন-কাফন সম্পন্ন করার পর মৃত ব্যক্তির যদি কোন ঋণ থাকে অথবা কোন কিছু বন্ধক দিয়ে রাখে, তাহলে তার সম্পদ থেকে সেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে কিংবা বন্ধক থাকলে তা মুক্ত করতে হবে। এটা খুব জরুরী, কেননা মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত তার আত্মার পুরষ্কার নাকি শাস্তি সেই ফয়সালা করা হয়না। যদি ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে সমস্ত সম্পদ শেষ হয়ে যায় তবুও তা শোধ করতে হবে, সেক্ষেত্রে তার ওয়ারিশরা কোন সম্পদ পাবেনা। উল্লেখ্য, মৃত ব্যক্তি যদি স্ত্রীর মোহর আদায় না করে থাকে, তাহলে সেটাও এক প্রকার ঋণ। সম্পদ ভাগ করার পূর্বেই মৃত ব্যক্তির সম্পদ থেকে তার বিধবা স্ত্রীর মোহর আদায় করে দিতে হবে। এছাড়া, যাকাত, মান্নত, কাজের লোকদের বেতন, কোন ঘর ভাড়া, মৃত ব্যক্তির উপর এ ধরণের কোন দায়-দায়িত্ব বাকী থাকলে সেইগুলো সম্পদ ভাগ করার পূর্বেই আদায় করতে হবে।
(৪) অতঃপর সে যদি তার সম্পদের কিছু অংশ ‘অসীয়ত’ বা উইল করে যায়, তাহলে তার সেই ইচ্ছা পূরণ করতে হবে। উল্লেখ্য, অসীয়ত যদি শরীয়ত সম্মত হয় তাহলে সেটা বাস্তবায়ন করা যাবে। শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে যদি কোন অবৈধ বা অন্যায় অসীয়ত করে থাকে, তাহলে সেটা পূর্ণ করা যাবেনা। নাহক অসীয়ত পূর্ণ করলে মৃত ব্যক্তি এবং যারা অন্যায় অসীয়ত পূর্ণ করবে, তারা সকলেই গুনাহগার হবে। অসীয়ত পূর্ণ করতে হবে সর্বোচ্চ এক তৃতীয়াংশ সম্পদের মধ্য থেকে। এক তৃতীয়াংশের বেশি কেউ অসীয়ত করতে পারেনা, করলেও সেটা বাস্তবায়ন করা যাবেনা। আবার মীরাসের ভাগ পাবে এমন কোন ব্যাক্তির জন্য অসীয়ত কার্যকর হবেনা।
(৫) উপরোক্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার পর মৃত ব্যক্তির বাকী সম্পদ ক্বুরআন ও সুন্নাহর আইন অনুযায়ী তার মুসলমান ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারীদের মাঝে ভাগ করে দিতে হবে। ওয়ারিশদের মাঝে কোন ব্যক্তি যদি মুরতাদ বা ইসলাম বিমুখ হয়ে যায় তাহলে সে কোন অংশ পাবেনা। অধিকাংশ সাহাবী এবং ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বাল রহি’মাহুল্লাহ এবং সত্য সন্ধানী একদল আলেমদের মতে বেনামাযী ব্যক্তি মুসলমান নয়। সুতরাং বেনামাযী ব্যক্তি তার মুসলমান পিতার ওয়ারিশ পেতে পারেনা, যদিও আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির কারণ শরীয়তের এই বিধান বাস্তবায়ন করা সম্ভব না

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি