Loading..

প্রকাশনা

১৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ১১:০১ পূর্বাহ্ণ

শেখ মুজিব তুমি অন্তরে ।

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই মার্চ (৩রা চৈত্র১৩২৭ বঙ্গাব্দরাত ৮টায় তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের বাইগার নদীতীরবর্তী টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শেখ মুজিবুর রহমান শেখ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। শেখ বোরহানউদ্দিন এই বংশের গোড়াপত্তন করেন। শেখ মুজিবের বাবা শেখ লুৎফুর রহমানযিনি গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার (যিনি আদালতের হিসাব সংরক্ষণ করেনছিলেনএবং মায়ের নাম সায়েরা খাতুন চার কন্যা এবং দুই পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। শেখ মুজিবুর রহমানের বড় বোনের নাম ফাতেমা বেগমমেজ বোন আছিয়া বেগমসেজ বোন হেলেন  ছোট বোন লাইলী এবং তার ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসে

শেখ মুজিবুর রহমান” নামকরণটি করেন তার নানা শেখ আবদুল মজিদ। শেখ মুজিবুরের ছোটবেলার ডাকনাম ছিল “খোকা ছোটবেলা থেকেই তিনি মানুষের প্রতি সহমর্মী স্বভাবের ছিলেন। দুর্ভিক্ষের সময় নিজের গোলা থেকে ধান বিতরণ করতেন। সমিতি করে অন্যদের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করে গরিব ছাত্রদের মধ্যে বিলি করতেন।

  • শিক্ষা

 

১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে ফুটবল খেলায় ট্রফি বিজেতা শেখ মুজিব

১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন যখন তার বয়স সাত বছর। নয় বছর বয়সে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে গোপালগঞ্জ পাবলিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। পিতার বদলিসূত্রে ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চতুর্থ শ্রেণিতে মাদারীপুর ইসলামিয়া বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখানে ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বেরিবেরি নামক জটিল রোগে আক্রান্ত হন এবং তার হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তার চোখে গ্লুকোমা ধরা পড়ে। ফলশ্রুতিতেতার চোখে অস্ত্রোপচার করাতে হয় এবং  থেকে সম্পূর্ণরূপে আরোগ্যলাভ করতে বেশ সময় লেগেছিল।  কারণে তিনি ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চার বছর বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেননি। তিনি ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে সুস্থ হবার পর গোপালগঞ্জে মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন।  সময়ে ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী এবং বহু বছর জেল খাটা কাজী আবদুল হামিদ (হামিদ মাস্টারনামে একজন ব্যক্তি শেখ মুজিবুর রহমানের গৃহশিক্ষক ছিলেন। পরবর্তীকালে গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তিনি ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমান নাম মওলানা আজাদ কলেজথেকে আই. এবং ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ইতিহাস  রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এই কলেজটি তখন বেশ নামকরা ছিল। ইসলামিয়া কলেজে ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি বেকার হোস্টেলের ২৪ নং কক্ষে থাকতেন। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ২৩  ২৪ নম্বর কক্ষকে একত্রিত করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানার্থে “বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষ” তৈরি করে । ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে ফেব্রুয়ারি কক্ষটির সম্মুখে তার আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। ভারত বিভাজনের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য ভর্তি হন। তবেচতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি দাওয়ার প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার বিরুদ্ধে তাদের বিক্ষোভ প্রদর্শনে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে তাকে ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে।পরবর্তীতে২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়।

ব্রিটিশ ভারতে রাজনৈতিক সক্রিয়তা

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে মহাত্মা গান্ধী  হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর সাথে শেখ মুজিব (দণ্ডায়মান)

শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয়েছিল ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে মিশনারি স্কুলে পড়ার সময় থেকে।  বছরই বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন তদানীন্তন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা  কে ফজলুল হক এবং খাদ্যমন্ত্রী  পরবর্তীকালে বাংলা  পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী  সময় বিদ্যালয়ের ছাদ সংস্কারের দাবি নিয়ে একটি দল তাদের কাছে যায়। দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শেখ মুজিব স্বয়।  ব্যক্তিগত রেষারেষির জেরে ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রথমবারের মতো গ্রেফতার করা হয়।  দিন হাজতবাস করার পর তিনি ছাড়া পান। একই বছর তিনি গোপালগঞ্জ মহকুমা মুসলিম ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি এবং মহকুমা মুসলিম লীগের ডিফেন্স কমিটির সেক্রেটারি নির্বাচিত হন।  ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন।  সময়ে তিনি এক বছর মেয়াদের জন্য নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের কাউন্সিলর জন্য নির্বাচিত হন। ১৯৪১ সালে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে কাজী নজরুল ইসলামহুমায়ুন কবিরপ্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ প্রমুখ যোগদান করেন। শেখ মুজিব এই সম্মেলনের অন্যতম আয়োজক ছিলেন। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন (এনট্র্যান্সপাশ করার পর ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং এখানে পড়াশোনাকালীন তিনি বাংলার অগ্রণী মুসলিম নেতা হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর সংস্পর্শে আসেন। এমভাস্কর তাকে সোহ্রাওয়ার্দীর ছত্রতলে রাজনীতির উদীয়মান বরপুত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন। একই বছর কলকাতায় ছাত্রনেতা আবদুল ওয়াসেক প্রমুখের নেতৃত্বে হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।  সময় থেকে তিনি সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বেঙ্গল মুসলিম লীগে যোগ দেন। এখানে তার ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য বিষয় ছিল পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে শেখ মুজিব বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি কলকাতায় বসবাসকারী ফরিদপুরবাসীদের নিয়ে তৈরি “ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশনের” সেক্রেটারি মনোনীত হন। এর দুই বছর পর ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের মহাসচিব নির্বাচিত হন।

পাকিস্তান আন্দোলনযুক্তবঙ্গ  দেশভাগ

১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর সাথে শেখ মুজিবুর রহমান

১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের পর মুসলিম লীগ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য মাঠে নেমে পড়ে। মুসলিম লীগের তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিব  সময় পাকিস্তান আন্দোলনে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। পাকিস্তান দাবির পক্ষে গণভোট” খ্যাত ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে শেখ মুজিব বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলে লীগের ওয়ার্কার ইনচার্জ হিসেবে একনিষ্ঠভাবে কাজ করেন। একেবারে তৃণমূল পর্যায়েসাধারণ কৃষক সমাজের কাছে গিয়ে তিনি পাকিস্তান দাবির ন্যায্যতা প্রচার করে ভোট চান। এই নির্বাচনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোতে মুসলিম লীগ বিজয় লাভ করে। তবে একমাত্র বাংলায় তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং সোহ্রাওয়ার্দীর নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। 

১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই আগস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস পালনের সময় কলকাতায় ভয়ানক হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। এসময় মুজিব মুসলিমদের রক্ষা এবং দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতায় শরিক হন। সেই সময় সোহ্রাওয়ার্দীআবুল হাশিমশরৎচন্দ্র বসু প্রমুখের নেতৃত্বে ভারত  পাকিস্তান কর্তৃত্বের বাইরে অবিভক্ত স্বাধীন বাংলা গঠনের যে “যুক্তবঙ্গ আন্দোলন” সংগঠিত হয়শেখ মুজিব তাতেও যুক্ত হন। পরবর্তীকালে ভারত  পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি নিশ্চিত হয়ে গেলে আসাম প্রদেশের বাঙালি মুসলমান অধ্যুষিত সিলেট জেলার ভাগ্য নির্ধারণে গণভোট হয়। শেখ মুজিব সিলেট গণভোটে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে সংগঠক  প্রচারক হিসেবে কাজ করেন। তিনি এসময় প্রায় ৫০০ জন কর্মী নিয়ে কলকাতা থেকে সিলেট গিয়েছিলেন। গণভোটে জয়লাভ সত্ত্বেও করিমগঞ্জ পাকিস্তানে না আসায় এবং দেশভাগের সীমানা নির্ধারণের সময় পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন ভৌগোলিক অপ্রাপ্তির বিষয়ে তিনি তার আত্মজীবনীতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি