সহকারী শিক্ষক
১৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৭:২১ অপরাহ্ণ
রক্ত
ধরন: সাধারণ শিক্ষা
শ্রেণি: সপ্তম
বিষয়: বিজ্ঞান
অধ্যায়: পঞ্চম অধ্যায়
প্রথমেই প্রশ্ন রক্ত কী? রক্ত হলো একধরনের তরল যোজক কলা। এরপর প্রশ্ন রক্তের কাজ কী? রক্ত আমাদের দেহে পরিবহনের কাজটি করে থাকে।ধরো, তোমার শরীরের কোনো একটি অংশে সমস্যা হলো। তুমি কোনো ওষুধ খেলে। ওষুধটি পাকস্থলী কিংবা ক্ষুদ্রান্ত্রে শোষিত হলো। তারপর ওই নির্দিষ্ট অঙ্গে পৌঁছাবে রক্তের মাধ্যমে এবং সমস্যাটি থেকে মুক্তি মিলবে।অন্যদিকে লিউকোসাইট বা শ্বেত রক্তকণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণুকে ধ্বংস করে। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, জীবের জন্য রক্ত কতটা গুরুত্বপূর্ণ।রক্ত দেখতে অস্বচ্ছ। এটি লবণাক্ত তরল এবং মৃদু ক্ষারীয়। কিন্তু রক্ত লাল দেখায় কেন? রক্তের লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন নামের একধরনের রঞ্জক পদার্থ থাকে, এর কারণেই রক্তের রং লাল।
রক্তের জন্ম হয় হাড়ের লাল অস্থিমজ্জায়। রক্ত রক্তরস এবং রক্তকণিকা দিয়ে গঠিত। শতকরা ৫৫ ভাগ হলো রক্তরস এবং ৪৫ ভাগ রক্তকণিকা। রক্তরসের প্রধান উপাদান পানি। এ ছাড়া প্রোটিন, গ্লুকোজ, হরমোন, খনিজ লবণ, অ্যান্টিবডি, বর্জ্য পদার্থ ইত্যাদি রক্তরসে বিদ্যমান থাকে। মোদ্দা কথা, রক্তে বর্ণহীন তরল অংশটিই রক্তরস।এবার আসি রক্তকণিকা নিয়ে রক্তে তিন ধরনের রক্তকণিকা থাকে। লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা ও অনুচক্রিকা। মানবদেহে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এটি অক্সিজেন পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তোমরা আগেই জেনেছ, লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন থাকে। এই হিমোগ্লোবিন অক্সিহিমোগ্লোবিন হিসেবে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবহন করে। এদিকে রক্তে যদি যথেষ্ট পরিমাণ হিমোগ্লোবিন না থাকে তখন রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। বাংলাদেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী এই রোগে আক্রান্ত।
শ্বেত রক্তকণিকার গড় আয়ু ১-১৫ দিন। এদের হিমোগ্লোবিন থাকে না, তবে এরা নিউক্লিয়াসযুক্ত বড় আকারের কোষ। শ্বেত রক্তকণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু খেয়ে ফেলে।
গঠনগতভাবে শ্বেত রক্তকণিকাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। অ্যাগ্রানুলোসাইট ও গ্রানুলোসাইট। অ্যাগ্রানুলোসাইট দুই রকমের—লিমফোসাইট ও মনোসাইট। লিমফোসাইট অ্যান্টিবডি গঠন করে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে আর মনোসাইট ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু মেরে ফেলে। আবার গ্রানুলোসাইট তিন প্রকার—নিউট্রোফিল, ইওসিনোফিল, বেসোফিল। বেসোফিল হেপারিন নিঃসৃত করে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। অনুচক্রিকার গড় আয়ু ৫-১০ দিন। এরা রক্ত তঞ্চন ও রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। ধরো, তোমার হাতের কোনো স্থান কেটে গেল। রক্ত পড়ছে। তখন অনুচক্রিকাই রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করবে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি
লোহিত রক্তকণিকার গড় আয়ু ১২০ দিন। মানুষের লোহিত রক্তকণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে না।
একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি রক্তে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা প্রতি ঘনমিলিমিটারে প্রায় ৫০ লক্ষ। শ্বেত রক্তকণিকার চেয়ে ৫০০ গুণ বেশি।
মানুষের দেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে ৪-১০ হাজার শ্বেত রক্তকণিকা থাকে।
রক্ত তঞ্চন প্রক্রিয়ায় ক্যালসিয়াম আয়নও জড়িত থাকে।