সহকারী শিক্ষক
১৮ জানুয়ারি, ২০২১ ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ
"মণিরাজ" বাংলায় বলে যার প্রকৃত নাম সাইকাস.(Cycas pectinata)
"মণিরাজ" বাংলায় বলে যার প্রকৃত নাম সাইকাস.(Cycas
pectinata)
সাইকাস গাছ বিদেশী হলেও বাংলাদেশের প্রায় সব বাগানেই শোভা বর্ধন করে
থাকে, সাপুড়েরা সাপের ফণীর মতো দেখতে এর ফুলকে সাপ বিতাড়িত করার কবজ হিসাবে
বিক্রয় করে থাকে। এই জন্য সাপুড়েরা এই গাছকে মনিরাজ গাছ বলে প্রচার করে। সাধারণত
গ্রীষ্ম মণ্ডলীয় এলাকার উদ্ভিদ এটি। মনিরাজ তথা সাইকাস দুষ্প্রাপ্য গাছ না হলেও এর
ফুল দুষ্প্রাপ্য। সব গাছে এই ফুল ফোটে না। শুধুমাত্র সাইকাসের মাদার প্লান্টই ফুল
দেয়, গাছের বয়স অন্তত এক যুগ অতিক্রম করলে। তাই সাইকাসে ফুল ফোটাকে সৌভাগ্য হিসেবে
বিবেচনা করা হয়।
প্রতিটি সাইকাস গাছের কেন্দ্রে শীতের শেষে বছরে একবার করে নতুন পাতা
আসে। ধুসর মোচার আকৃতি নিয়ে বের হওয়া সবুজ কচি পাতা ডানা মেলে ছড়িয়ে পড়ে গাছের
চারপাশে। পাতাই সাইকাসের সৌন্দর্য। ঘর সাজাতে, ফুলের ডালি ও তোড়া সাজাতে, তোরণ
তৈরীতে সাইকাস পাতার ব্যবহার আছে। পাহাড়ী এলাকাতে এই পাতায় তৈরী হয় মাদুর। একটি
গাছ একবার ফুল দিয়েই মারা যায়। এ গাছের ফুলে ঔষধি গুণ রয়েছে। ফুলের রেণুতে রয়েছে
তীব্র ঘ্রাণ। সাইকাস মূলত একটি অপুষ্পক উদ্ভিদ। দেখতে প্রায় তাল, নারকেল,খেজুর বা
পাম গাছের মতই।
এই গাছ পুর্ণ বয়স্ক হলে তার ঠিক মাথার মধ্যে গোলাকার,দৃষ্টি নন্দন
মোচা বের হয়। বের হবার শুরুর দিকে একে ফুল বলে মনে হতে পারে;কিন্তু আদতে তা ফুল
নয়। আবার ফলও নয়। ফুলের মতই অসংখ্য নরম সুন্দর সুন্দর স্পোর টিস্যু কেকের মত ভাঁজে
ভাঁজে সাজানো থাকে। এই স্পোর গুলোই পর্যায়ক্রমে কচি কচি পাতা হিসেবে আবির্ভূত
হয়।পরবর্তিতে তা সাইকাস গাছের পাতা হিসেবে পরিপুষ্টতা লাভ করে। কিন্তু এটা বের হলে
প্রথম দর্শনেই যে কারও কাছে ফুল বলেই মনে হবে। সাইকাস এর স্ত্রীরেণুপত্র দেখতে
অনেকটা ফণা তোলা সাপের মাথার মতো। শহর-বন্দরের রাস্তার ধারে, ‘সর্পমণি’ নাম করে এগুলো
বিক্রি করা হয় সর্প রোগের ওষুধ হিসেবে। আসলে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
এটি মুলত: নগ্নবীজী উদ্ভিদ। Cycas circinalis এর স্ফীতকন্দ ও বীজ হতে
একপ্রকার এরারুট (বার্লি) প্রস্তুত করা হয়। Cycas revoluta এর বীজ খাদ্য হিসেবে
ব্যবহৃত হয়। Cycas pectinata উদ্ভিদের কান্ড থেকে সাবুদানা তৈরি হয়। ফুলটি ফোটার
পর প্রথমে সাদা রংয়ের থাকলেও দিনদিন এটি খয়েরি রং ধারণ করে। এভাবে ২ মাস থাকে
ফুলটি।
মনিরাজ ফুল কবজ করে হাতে রাখলে সাপে কামড়াতে পারেনা যা নাগ নাগিনীর
কল্পকাহিনির মতো সাপুড়েদের ব্যাবসায়ী কৌশল। হ্যাঁ, তবে বাংলায় ঘুঘু লতা নামে
একজাতীয় গাছের শেকড়ের ঘ্রাণে সাপ দূরে সরে যায়। দেখা যায় আমাদের উপমহাদেশে রাস্তার
পাশে সাপখেলা দেখায় সাপুড়েরা। কখনো কখনো তাদের ঝোলায় এক ধরনের শিকড় থাকে যা তারা
বিক্রি করে সর্প নিরোধক হিসেবে। সেই শিকড় সামনে আনা মাত্র সাপ ফণা তোলার পরিবর্তে
মাথা নিচু করে পালিয়ে যেতে চায়। এই শিকড়টি 'ঈশের মূল' বা অ্যারিস্টোলোকিয়া
ইন্ডিকার শিকড়। অ্যারিস্টোলোকিয়া সারপেনটারিয়া প্রজাতির গাছের সাপ তাড়ানোর ক্ষমতা
বেশি। সর্পবহুল এলাকায় বিদেশে অনেকে নিরাপত্তার জন্য এই গাছ রোপণ করে থাকেন।।