Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

১২ এপ্রিল, ২০২১ ১২:৫০ পূর্বাহ্ণ

স্টুডেন্ট গাইডলাইন


মোহাম্মাদ আবু সাইদঃ ছাত্র জীবনে সফলতা অর্জনের কৌশল (স্টুডেন্ট গাইডলাইন )... শেয়ার করে পোস্ট লিংক সেইভ রাখুন ... সময় করে পড়ে নিবেন ... কাজে লাগবে .ও আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও ছোট ভাই-বোন দের ভালো পরামর্শ বা  দিকনির্দেশনা দিতে পারবেন... কাছের বন্ধু  ও ছোট ভাই-বোন দের কমেন্টে ট্যাগ করে পড়তে উৎসাহিত করুন ... 


শিক্ষার্থী মেধাবী হোক আর দুর্বল হোক পড়াশুনা নিয়ে তার কিছু সমস্যা থাকেই। কিছু সমস্যা আছে যা সে নিজেই সমাধান করতে পারে আর কিছু সমস্যা সে নিজে সমাধান করতে পারেনা। সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষক কিংবা ভাল কোচিং সেন্টারের সহায়তা নিতে হয়। সমস্যা যাই হোকনা কেন কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয় অসচেতনতা প্রসূত, আবার কিছু সমস্যা মানসিকও বটে। সমস্যাগুলো পারিবারিক কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগতও হতে পারে। “মেধাবী ছাত্র মানে ভাল ছাত্র নয়।” ভাল ছাত্র হতে হলে কিছু সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট কৌশল অবলম্বন করতে হয়।যদি আমরা প্রতিভাবানদের জীবনি লক্ষ করি তাহলে দেখতে পাব তারা ছাত্র জীবনে নানা রকম সমস্যায় ভুগেছিলেন। যেমন:

“ টমাস আলভা এডিসন ছেলেবেলায় এতই বোকা ছিলেন যে, মাস্টার মশাই তার মাকে লিখেছেন, ‘আপনার টমি এত বোকা যে তার পক্ষে লেখাপড়া শেখা সম্ভব নয়। তাকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিন।’


‘ বিজ্ঞানী আইনস্টনকে ছোট বেলায় বলা হতো গবেট। স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার কারণে তার লেখাপড়া শুরু করতে করতেই নয় বছর পেরিয়ে যায়। স্মৃতিশক্তি দুর্বলতার কারণে তিনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এরপর তার আপ্রাণ চেষ্টায় দুবছরে তার স্মুতিশক্তির অসাধারণ উন্নতি হয়। বাকি কথা তো সবারই জানা।”

ছাত্র-ছাত্রীরা কি কি ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয় এবং এগুলোর সমাধান কি?  এই সকল সমস্যার সমাধান নিয়ে নিবন্ধটি লেখা হয়েছে:


✩ ভাষায় দক্ষতা অর্জন

পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করতে হলে বাংলা ও ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে। এই দক্ষতা অর্জনের জন্য গ্রামারের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। বেশির ভাগ গবেষণা হতে দেখা যায় ছাত্র-ছাত্রীরা গ্রামারে যেমন দুর্বল হয় তেমনি তারা এ বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে ভয় পায়। একে মানসিক দুর্বলতা বলা যায়। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য একজন ভাল শিক্ষকের পরামর্শ নিতে হবে এবং নিয়মিত চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। নির্ভুল বানান, সুন্দর ও ঝকঝকে খাতা উচ্চনম্বরের নিশ্চয়তা দেয়।


✩ লেখাপড়ায় লেগে থাকা

জীবনে যা করনা কেন, তার পিছনে লেগে থাকতে হবে।তোমার পড়াশুনার বিভিন্ন সমস্যাগুলো চিহ্নিত করো এবং অন্যরা কিভাবে তার সমাধান করেছে তা থেকে ধারণা নিতে পার। পড়াশুনাকে ভালবাস দেখবে সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ।


✩ বুঝে পড়া ও লিখা

“১০০ বার অমনোযোগী হয়ে পড়ার চেয়ে ১ বার বুঝে পড়া উত্তম আর ৩০ বার বুঝে পড়ার চেয়ে ১ বার লিখা উত্তম।” যা পড়না কেন তা আবার লিখবে।মনে রাখবে অতিমূল্যবান ব্রেনের চেয়ে ৫ টাকার কলম অনেক বেশি মূল্যবান।


✩ শিক্ষকের উপদেশ মেনে চলা

তোমরা সবর্দা শিক্ষকের উপদেশ মেনে চলবে শিক্ষক তোমার গুরুজন এবং অভিজ্ঞব্যক্তি তিনি জানেন কিভাবে লেখাপড়া করলে সফলতা অনিবার্য।


✩ দলগত ভাবে লেখা পড়া করা 

লেখাপড়া সহজ ভাবে মনে রাখা এবং দীর্ঘস্থায়ী করার একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি হল গ্রুপ স্টাডি বা দলগতভাবে লেখা পড়া করা। একে ডিসকাস থেরাপিও বলা হয়। লেখাপড়ায় সফলতা অর্জনের জন্য এ পদ্ধতি খুবই কার্যকর। তোমার সহপাঠীদের সাথে দলবদ্ধ হয়ে যে কোন কঠিন বিষয় সহজেই আয়ত্ত করতে পার।


✩ ভাল নোট সংগ্রহ

 “ভাল ছাত্র মানে ভাল নোট, ভাল নোট মানে ভাল পরীক্ষা, ভাল পরীক্ষা মানে ভাল রেজাল্ট।” উন্নত নোট সংগ্রহের জন্য শিক্ষকের গাইডলাইন, ভাল বই ও ভাল ছাত্রদের নোট সংগ্রহ করা যেতে পারে।


✩ ইতিবাচক চিন্তা করা

“ইতিবাচক চিন্তা সমস্যার সমাধান দেয় ।”  হতাশ না হয়ে, সব সময় ইতিবাচক চিন্তা কর। তোমার চেষ্টা ও বিশ্বাস তোমাকে ইতিবাচক লেখাপড়ার দিকে ধাবিত করবে।


✩ রুটিন মাফিক জীবন পরিচালনা

বিশৃঙ্খল জীবন ব্যবস্থায় কখনো সফলতা আসেনা। তোমাকে সুনির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করে সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে। রুটিন কয়েক ধরনের হতে পারে, যেমন- স্কুলের রুটিন, গৃহশিক্ষকের রুটিন, বাড়িতে পড়ার রুটিন, খেলাধুলার রুটিন, অবসরকালীন পড়ার রুটিন ইত্যাদি।


✩ আগামীকালের পড়া দেখে নেয়া

টিচার যে পড়াটি পড়াবেন তা পূর্বেই দেখে রাখলে, টিচারের পড়া সহজেই বুঝতে পারবে। এটি একটি অসাধারণ কৌশল।বিশেষ করে যারা অনেক ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে পড়া বুঝতে পারেনা কিংবা দুর্বল, তাদের অবশ্যই একৌশল অবলম্বন করা উচিত।


✩ পড়ার ফাঁকে ফাঁকে খাওয়া ও বিশ্রাম

তুমি কি ভেবে দেখেছ, বছরের পর বছর কিভাবে হৃৎপিণ্ড অক্লান্তভাবে তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে?আসলে হৃৎকম্পনের প্রতিবারই সে বিশ্রাম নেয়, তাই সে কখনো ক্লান্ত হয়না। তোমাকেও এপদ্ধতি অনুসরণ করে সফল হতে হবে। অর্থাৎ পড়াশুনা করলে যথেষ্ট শারীরিক ও মানসিক শক্তি ব্যয় হয়। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ক্ষুধা লাগতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণের খাবার গ্রহণ ও বিশ্রাম নিতে হবে।


✩ নিজে নিজে পরীক্ষা দেয়া

প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষা দেয়ার পূর্বে বাসায় নিজে নিজে পরীক্ষা দিতে হবে। এটিকে পরীক্ষার মহড়া ও বলা যেতে পারে।


✩ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া

ফাইনাল পরীক্ষার আগে দরকার পরীক্ষার প্রস্তুতি। খেয়াল রাখতে হবে সব বিষয়ে যেন ভাল প্রস্তুতি থাকে। প্রস্তুতি সন্তোষজনক হলে পরীক্ষাও ভাল হয়।


✩ যখন কার পড়া তখনই শেখা

সময়ের কাজ সময়ে শেষ কর, পুনঃরায় ফিরে এসে সেকাজ করার সময় পাবেনা। পড়া জমিয়ে না রেখে সাথে সাথে শেষ করে ফেল।


✩ সকল বিষয়কে সমান গরুত্ব দেয়া

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় A+ পেতে হালে প্রতিটি বিষয়ে সমান ভাবে দক্ষ হতেহবে।তাই কেবল ইংরেজি ও অংক বিষয়ে বেশি সময় দিতে গিয়ে অন্যান্য বিষয়ের কথা ভুলে যেয়না।


✩ দ্রুত পড়ার অভ্যাস করা

ধীর গতিতে পড়লে সময় বেশি লাগে, ফলে বেশি পড়া- শুনা করা যায়না। আবার অনেকেই একই বাক্য দুবার পড়ে, কোন কঠিন শব্দের কাছে এসে থেমে যায়, পড়ায় মনোযোগ নেই, কেউ বিড় বিড় করে পড়ে ইত্যাদি বদঅভ্যাস পড়ার গতি কমিয়ে দেয়। পড়ার সময় প্রতিটি বিষয়ের সারাংশ বোঝার চেষ্টা কর, উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন হও।বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ দাগ দেবে বা নোট করবে। প্রয়োজনে অন্য কোন বইয়ের সহায়তা নেবে।সহজ ও কঠিন বিষয় পড়ার সময় প্রয়োজনমত সময় হ্রাস-বৃদ্ধি করবে।


✩ হতের লেখা সুন্দর ও দ্রুতকর

সুন্দর হাতের লেখার প্রশংসা সবাই করে।লেখা আকর্ষণীয় হলে শিক্ষক ধরে নেন এটি একজন ভাল ছাত্রের খাতা। শিক্ষা ক্ষেত্রের সকল স্তরেই হাতের লেখার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।হাতের লেখা সুন্দর ও দ্রুত করার জন্য সুন্দর কোন হাতের লেখা অনুসরণ করতে পার।এছাড়া এই ব্যাপারে একজন অভিজ্ঞ শিক্ষকের ও পরামর্শ নিতে পার।


✩ অধ্যয়ন পদ্ধতি

ছাত্র জীবনে ভাল ফলাফল করতে হলে সঠিক নিয়মে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। পড়া-শোনার ব্যাপারে কৌশলি ও নিয়ম মেনে চলতে হয়।Robinson অধ্যয়নের শ্রেষ্ঠ নিয়মা বলি প্রণয়ন করেছেন। তার পদ্ধতিকে বলা হয় S Q 3 R পদ্ধতি। এর পূর্ণরূপ হল Survey(জরিপকর), Question(প্রশ্নকর), Read(পড়), Recite(আবৃত্তিকর), Review(পুনরায়স্মরণকর)। অধ্যয়নকালে এই কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করলে অবিশ্বাস্য ফলাফল পাওয়া যায়।


শেষ কথাঃ  

“If you have hard work to do ...........Do it now


today the sky is clear and blue


tomorrow clouds may come in view


yesterday is not for you


so do it now”.


একাগ্র হওয়া ও প্রচুর অধ্যয়ন করা বা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া দু’টোই একজন মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। এ জন্য জ্ঞানীরা বা মনীষীরা বলেছেন, “ইচ্ছা থাকিলে উপায় হয়।”

 আজ এই বিশ্বায়নের যুগে টিকে থাকতে হলে, নিজেকে ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে, সফলতার স্বর্ণশিখরে আরোহণ করতে চাইলে প্রবল ইচ্ছাশক্তির যথাসম্ভব ব্যবহারের বিকল্প নাই। এই ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে জীবনের প্রারম্ভে অর্থাৎ ছাত্র জীবনে। ছাত্র জীবনের সফলতা জীবনের প্রথম সোপানের সফলতা। এই সফলতাই পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে জীবনের নানাবিধ বিষয়ে সফলতা অর্জনের দিকে এগিয়ে যেতে। তাই আমাদের শিক্ষার্থীর জীবনের প্রতিটি দিন সফলতার বীজ বুননের দিন। অতএব, সমস্ত আলস্য, জড়া ঝেড়ে ফেলে আজ সকল ছাত্র ছাত্রীদের শপথ নিতে হবে ‘কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রচুর অধ্যয়ন করে সময়কে পূর্ণ মাত্রায় কাজে লাগানো আমাদের কাজ’।