Loading..

ম্যাগাজিন

০৮ মে, ২০২১ ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ

প্রবল ইচ্ছা ও মনোবলই লিঙ্কনের সফলতার চাবি

প্রবল ইচ্ছা ও মনোবলই লিঙ্কনের সফলতার চাবি

ফেনী জেলার কুটিরহাট গ্রামের অদম্য মেধাবী লিঙ্কন চন্দ্র ঘোষ। তিনি শোনালেন তাঁর সফল হওয়ার গল্প। ছোট থেকে নানা প্রতিকূলতা দেখেছেন। অদম্য সাহস নিয়ে এগিয়ে গেছেন। সেই এগিয়ে যাওয়ার গল্পই উঠে আসে ৫ মে ২০২১ তারিখ প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠানে। তিনি ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী’ শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।

 

লিঙ্কন বলেন, 'প্রথম আলোকে আমার পাশে পাই ২০১০ সালে যখন আমার এসএসসি রেজাল্ট হয়। আমার পরিবারে আর্থিক অসচ্ছলতা ছিল। বাবা অসুস্থ। পরিবারের পক্ষে আমার পড়াশোনা করানো কষ্টসাধ্য ছিল। বাবা-মার ইচ্ছা শক্তিটা ছিল কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পারতেন না তাঁরা। ২০১০ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর প্রথম আলো স্থানীয় প্রতিনিধি আমাকে খুঁজে বের করেন। আমাকে নিয়ে প্রতিবেদন লেখেন। প্রতিবেদন দেখে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তির জন্য মনোনীত করা হয় আমাকে। এরপর আমার পথ চলা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। এ বৃত্তি পেয়ে পরবর্তীতে ২০১২ সালে এইচএসসিতে কৃতিত্ব ধরে রেখে স্নাতক পর্যায়েও বৃত্তি পাই। তখন অনেকটা নির্ভার হই আমি। ভালো করে পড়াশোনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমসে ভর্তির সুযোগ অর্জন করি। পরে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের ১৯ তারিখে কন্ট্রোলার জেনারেল ডিফেন্স ফাইন্যান্স অডিটর হিসেবে যোগাদান করি। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখে জনতা ব্যাংক লিমিটেডে সিনিয়র অফিসার পদে যোগদান করি। আসলে পড়াশোনা করা এবং এই যে চাকরি করছি এখানে প্রথম আলোর অবদান অনেক বেশি। এজন্য ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রথম আলোর কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। তাদের অনেক ধন্যবাদ।'এরপরের স্বপ্নটা কি জানতে চাইলে লিঙ্কন ঘোষ জানান, 'আমার স্বপ্ন হলো আমি যে পেশাতেই থাকি মানুষের সেবা করব। সেটা হোক ব্যাংক বা অন্য কোথাও। এখন ব্যাংকে আছি, বেটার অপশন পেলে অন্য কোথাও যাব।'

 

মা-বাবা ও প্রতিবেশীদের অনুভূতি কেমন জানতে চাইলে তিনি জানান, 'বাবা-মা অনেক খুশি। সব সময় গর্ববোধ করেন। শুধু তাঁরাই নন পাড়া-প্রতিবেশীরাও অনেক গর্ববোধ করেন আমাকে নিয়ে। তখন অনেক ভালো লাগে।'

 

বর্তমান অদম্যদের জন্য লিঙ্কনের পরামর্শ আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমি মনে করি ইচ্ছা ও মনোবল শক্ত থাকলে কোন প্রতিকূলতাই বড় কোন বাধা হতে পারে না। প্রবল ইচ্ছা সবচেয়ে বড় বিষয়। মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে। মাঝে মাঝে মনে হতে পারে যে, কোন কিছুই আমার অনুকূলে নেই। আমার সাথে কেউ নেই। আসলে নিজের ইচ্ছা ও মনোবল ঠিক থাকলে এগুলো কোনো বিষয়ই না। তারপরও এখন যে সকল অদম্য বৃত্তি পাচ্ছে তারা যদি এরকম কোনো পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ বা আলোচনা করতে পারেন। এতে করে তাদের মনোবল শক্ত হবে আশা করি।'

 

অনেকেই পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পাচ্ছেন না, ব্যবসা শুরু করতে পারছেন না তাদের প্রতি আপনার কোনো পরামর্শ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পড়াশোনা শেষ করার পর চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত সবার জন্য একটা কঠিন সময় যায়। চারপাশের লোকজন নানা কথা বলে। নিজের কাছেও খারাপ লাগে। এসময় আমি যেটা করেছি–ছয় মাসের একটা টার্গেট নিয়ে কঠোর পড়াশোনা করেছি। কারো সাথে কোনো সময় নষ্ট না করে ফুলটাইম পড়াশোনা করেছি। এটাই কাজে দিয়েছে। ৬ মাসের মাথায় আমার দুইটা চাকরি হয়ে যায়। সুতরাং যারা এরকম পরিস্থিতির মধ্যে আছেন তারা আমাদের সাথে বিশেষ করে আমাদের অনেকেই ভালো ভালো জায়গায় আছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করলে অনেক বিষয় সহজ হয়ে যাবে।'

লিঙ্কন আরো যুক্ত করে বলেন,'আমি নিজেও চাকরি পাওয়ার আগে আমার এক বড় ভাইয়ের (অদম্য মেধাবী) সাথে বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করতাম। আমার ভালো লাগত। উনার কাছ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ গাইডলাইন পেয়েছি যা আমার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক সহায়তা করেছে। তাই তোমরাও যোগাযোগ রাখো। এতে করে যেটা হবে মনোবল অনেক শক্ত হবে, অনেক অনেক বিষয়ে ভালো গাইডলাইন পাওয়া যাবে। ফলে কঠিন সময় পার করাটাও অনেক সহজ হয়ে যাবে।'

অনুষ্ঠানটি একযোগে প্রচার করা হয় প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেল, প্রথম আলো এবং প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক থেকে। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা

 

 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি