Loading..

খবর-দার

০৯ মে, ২০২১ ০৫:০৬ অপরাহ্ণ

শিক্ষা ব্যবস্থায় করোনার প্রভাব।

আমরা প্রায়ই একটি কথা শুনে থাকি, দেশে যখন সব কিছু সচল রয়েছে তাহলে বিদ্যালয় কেন বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকরা কেন বাড়ি বসে বেতন নেবেন। এ কথগুলো যারা বলেন তারা হয়তো কোন কিছু চিন্তা ভাবনা না করেই বলে থাকেন। আমরাও চাই বিদ্যালয় চালু থাকুক কিন্তু এর পিছনে অনেকগুলো কারণ আছে। যেমন- জীবিকা ও প্রয়োজনের তাগিদে এবং বিভিন্ন চাপে পড়ে সরকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হাট-বাজার বা পরিবহন চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যদিকে আমাদের কোমলমোতি শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুকির কথা চিন্তা করে এখনো পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রেখেছেন।

দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধের কারণে শিক্ষা ব্যাবস্থায় ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। একটি বিষয়ে সকলে অবগত আছেন যে দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থী এর মধ্যে জীবিকার সন্ধানে রত আছে। অনেকে মা/বাবার সাথে আয়মূলক কাজ করছে। অনেক মেয়ে শিক্ষার্থী বাল্য বিবাহের শিকার হয়েছে এবং অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। তবে যারা বিদ্যালয় খোলার অপেক্ষায় আছে তাদের শিখন ঘাটতি কোন ভাবেই পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারি এবং স্থানীয় ভাবে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও শিশুদের শিখন ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। করোনা কালীন সময়ে সরকার শিশুদের শিখন ঘাটতি পুষিয়ে নিতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছে, কিন্তু কোন পদক্ষেপ এখনো পর্যন্ত সফল হয়নি। গত বছর অনলাইন ক্লাস, রেডিও এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে যে পাঠদান প্রক্রিয়া চলেছে সেসকল পাঠে খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করেছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা করোনা কালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রাথমিকে খুবই কোমলমতি এবং গরীব শিশুরা পড়া-লেখা করে। এসব শিশুরা অনলাইল বা রেডিও-টেলিভিশনের ক্লাস ভালোভাবে বুঝতে পারেনি বা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের অভাব অথবা দূর্বল ইন্টারনেট ব্যবস্থার কারনে অংশ গ্রহনের সুযোগ ছিলনাশিশুরা খেলা প্রিয় বলে স্কুল বন্ধ থাকায় দিনের বেশিরভাগ সময় খেলাধুলায় কাটিয়ে দিচ্ছে। প্রাথমিকে গত ২রা মে গুগল মিটের মাধমে সরাসরি শিশুদের সাথে যে শ্রেণি কার্যক্রম চালু হোলো তা কতটা সফল হবে তা এখনই বলা যাছেনা। কেননা এখনো অনেক শিক্ষকের গুগল মিট সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা নেই, সেখানে শিশু এবং তার অভিভাবকের পক্ষে কীভাবে সম্ভব। সম্প্রতি গুগল মিট ছাড়াও ন্যাপ কর্তৃক প্রনীত বাড়ির কাজের জন্য যে ওয়ার্ক সিট বিতরণ ও সংগ্রহের কাজ দেওয়া হয়েছে তা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য ঝুকিপূর্ণ এবং ব্যায়বহুল। এর কার্যক্রমের ব্যায়ভার বহন করা বিদ্যালয়ের পক্ষে অসম্ভব মনে হচ্ছে।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিকের তুলনায় একটু বড় হওয়ায় তারা অপেক্ষাকৃত শিখন ঘাটতি কম হয়েছে। তবে মাধ্যমিকে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে যে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছিল তা খুব একটা সফল হয়েছে বলা যায় না। শিক্ষার্থীরা খুব সহজে অনলাইনে অ্যাসাইনমেন্টের উত্তরগুলো পেয়ে যেত যা তাদের বই বিমূখ করে তোলে। এ বিষয় গুলো আরো বেশি নজর দেওয়া দরকার ছিল।

গত বছর এস এস সি ও এইচ এস সি পরীক্ষায় অটোপাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল এবং অন্যান্য শ্রেণি গুলোতেও পরবর্তিতে ক্লাসে একই রোল নাম্বার দিয়ে প্রমোশন দেওয়া হয়েছিল। শ্রেণি মূল্যায়ন না থাকায় দূর্বল শিক্ষার্থীর শিখন ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। গ্রাম আঞ্চলের শিক্ষার্থীদের শহরের শিক্ষার্থীদের তুলনায় শিখন ঘাটতি বেশি হচ্ছে।

আমরা আশা করি আগামিতে করোনার প্রকোপ কমবে, লক ডাউন উঠে যাবে, আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবো। প্রতিটি পেশাজীবীর ন্যায় আমরাও আমদের কর্মস্থলে ফিরে যাব। প্রতিটি বিদ্যালয় শিশুদের পদচারনায় মুখরিত হবে। আমরা শিশুদের শিখন ঘাটতি দূরিভুত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব।

উজ্বল কুমার মজুমদার

সহকারি শিক্ষক ও ICT4E জেলা অ্যাম্বাসেডর

কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ।