শাহবাগের বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে গতকাল শনিবার বিকেলে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আলোচকেরা। জগদীশ চন্দ্র বসুকে স্মরণ করতে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এই আলোচনার আয়োজন করে।
আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পদার্থবিজ্ঞানী অজয় রায় বলেছেন, ‘ভারতবর্ষে আধুনিক বিজ্ঞান প্রচলনের পথিকৃৎ ছিলেন বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু। তাঁর কারণেই এ অঞ্চলে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা প্রয়াস পেয়েছে। আধুনিক চিন্তাধারার এই বিজ্ঞানীর চিন্তায় দার্শনিক পটভূমিও ছিল। আমরা তাঁর কাছে ঋণী।’
অজয় রায় বলেন, ‘জগদীশ চন্দ্র বসু আমাদের আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। বিজ্ঞানী মার্কনি রেডিও আবিষ্কারের আগেই বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু বিনা তারে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে তথ্য-সংকেত বিনিময়ে সক্ষম হয়েছিলেন এবং প্রদর্শনও করেছিলেন। পদার্থবিজ্ঞানসহ বিজ্ঞানের নানা শাখায় তিনি বিভিন্ন সমস্যা সামধানের চেষ্টা করেছিলেন। বিজ্ঞানের নানা ক্ষেত্রে তাঁর বিচরণ ছিল, বিশেষ করে জীব পদার্থবিদ্যা, জীববিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান ও পুরাতত্ত্ব—এগুলো নিয়েও তাঁর কাজ আছে। এত কাজ তিনি কীভাবে করলেন তা নিয়েও কৌতূহল আছে।’
জগদীশ চন্দ্র বসুর জন্ম ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর ময়মনসিংহে। তিনি একজন বাঙালি পদার্থবিদ, উদ্ভিদবিদ ও জীববিজ্ঞানী এবং প্রথম দিকের একজন কল্পবিজ্ঞান রচয়িতা। তাঁর গবেষণা উদ্ভিদবিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে তোলে এবং ভারতীয় উপমহাদেশে তিনি ব্যবহারিক ও গবেষণাধর্মী বিজ্ঞানের সূচনা করেন। এই বিজ্ঞানী ১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর মারা যান। তাঁকে স্মরণ করতেই এই আলোচনার আয়োজন।
আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য সমর চন্দ্র পাল বলেন, জগদীশের আলোচনা চিরকাল বললেও শেষ হবে না। বিজ্ঞানী ছাড়াও জগদীশ চন্দ্রের বাইরের পরিচয় হলো তিনি একজন জাতীয়তাবাদী, ভাষা ও দেশপ্রেমী, মরমি সাধক ও গবেষক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁর বৈজ্ঞানিক কাজগুলোর আজও ব্যাখ্যা বের করা যায়নি। জগদীশ চন্দ্র বলেছিলেন, জীব ও জড়ের (উদ্ভিদের) মধ্যে সাযুজ্য বা মিল আছে।
এই আলোচনা সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের জনশিক্ষা বিভাগের কিপার শিহাব শাহরিয়ার। এতে আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন কথাসাহিত্যিক ও ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সহযোগী অধ্যাপক আহমাদ মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিজ্ঞানী বললেই চোখে-মনে ভেসে ওঠে জগদীশ চন্দ্রের কথা। তিন বছরে ১৩টি বিশ্বমানের বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছিলেন জগদীশ চন্দ্র। তবে তাঁর কাজের দুই-তৃতীয়াংশই এখন পর্যন্ত ব্যাখ্যা করা যায়নি। তিনি এক রহস্যময় বিজ্ঞানী। তিনি সব সময় জীব ও জড়ের মধ্যে ঐক্যের সন্ধান খুঁজতেন। তিনি বলেছিলেন, মানুষ যেভাবে সাড়া দেয়ে, গাছও একইভাবে সাড়া দেয়। সে সময় উদ্ভিদকে জড় হিসেবেই দেখা হতো। বিজ্ঞানের ও জ্ঞানকাণ্ডের বিভিন্ন শাখায় জগদীশ কাজ করেছিলেন শুধু সত্য জানার উদ্দেশ্যে।
আরেক আলোচক মুন্সিগঞ্জের সরকারি হরগঙ্গা কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীর বড় বিজ্ঞানীরা যেখানে ৬০ মিলিমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রেডিওয়েভ নিয়ে কাজ করতে পারছিলেন না, সেখানে জগদীশ চন্দ্রই প্রথম পাঁচ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের রেডিও তরঙ্গে সংকেত বিনিময় আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি দুই শ বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেছিলেন। ভারতবর্ষে পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানচর্চা (এক্সপেরিমেন্টাল সায়েন্স) তাঁর হাত ধরেই আসে।
মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, জগদীশ বসু রাতের অন্ধকারে ছবি তোলার উপযোগী ক্যামেরাও বানিয়েছিলেন। সাহিত্যের সঙ্গে তাঁর প্রবল অনুরাগ ছিল। আজকের তরুণ প্রজন্মের জন্য তিনি অনুকরণীয় ও স্মরণীয়।