প্রধান শিক্ষক
১১ মে, ২০২১ ০৮:৩৫ অপরাহ্ণ
সানজো সিটি ইউনিভার্সিটিতে শাহরিয়ার আহমেদ প্রেসিডেন্ট...; মোছাঃ মারুফা বেগম, প্রধান শিক্ষক, ডিমলা, নীলফামারী।
নিইগাতা জেলার সানজো শহরে চালু হওয়া বিজ্ঞান
ও প্রযুক্তিবিষয়ক নতুন বিশ্ববিদ্যালয় সানজো সিটি ইউনিভার্সিটিতে শাহরিয়ার আহমেদ
প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। বাংলাদেশি একজন শিক্ষাবিদ ও গবেষকের জন্য এ বিরল এক অর্জন। জাপানের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই ভাইস চ্যান্সেলরের কোনো পদ নেই এবং
প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী।
জাপানকে
তিনি প্রথম জেনেছিলেন সেই শৈশবে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বাবার চাকরির সুবাদে।
নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের আবাসিক ভবনে থাকতেন তাঁরা। ভেড়ামারা
তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি জাপানি সহায়তায় তৈরি হচ্ছিল। তাই সে সময় বেশ কয়েকজন জাপানি
প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ সেখানে কর্মরত ছিলেন। শিশু শাহরিয়ার আহমেদ তখন প্রাথমিক
স্কুলের ছাত্র। জাপানিদের কর্মনিষ্ঠা ও আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে শৈশবেই প্রকৌশলী
হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এমনকি কখনো সুযোগ হলে জাপান নামের দেশটিতে লেখাপড়া করবেন বলে
মনে মনে ঠিক করেন।
শৈশবের
স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন শাহরিয়ার। জাপানে যে শুধু লেখাপড়া করেছেন তা নয়,
লেখাপড়া শেষ করে দেশটিতে তিনি গবেষণা এবং শিক্ষকতায় যুক্ত থেকেছেন।
পেশাগত দক্ষতা ও পারদর্শিতার মধ্যে দিয়ে শিক্ষকতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে তিনি
পৌঁছেছেন। এ যেন শৈশবে দেখা স্বপ্নের মধুর বাস্তবায়ন। এ বছর এপ্রিল মাসে নিইগাতা
জেলার সানজো শহরে চালু হওয়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রসর গবেষণার ওপর আলোকপাত করা
একেবারে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দিয়েছে। বাংলাদেশি
একজন শিক্ষাবিদ ও গবেষকের জন্য এ বিরল এক অর্জন।
জাপানের
সরকারি কিংবা বেসরকারি, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই ভাইস
চ্যান্সেলরের কোনো পদ নেই এবং প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান
নির্বাহী। ফলে এই দায়িত্ব অনেকটাই বিস্তৃত এবং একই সঙ্গে হচ্ছে চ্যালেঞ্জিং। সানজো
সিটি বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিশিক্ষার একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নগর
প্রশাসনের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত বলে অন্য অর্থে এটা হচ্ছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
শাহরিয়ার
আহমেদ জাপানে আসেন ১৯৮৮ সালে। তখন তিনি কলেজ পর্যায়ের লেখাপড়া শেষ করা এক তরুণ। জাপানের
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে লেখাপড়া করতে হলে জাপানি ভাষা জানা প্রয়োজন। তাই তিনি ভর্তি
হয়েছিলেন টোকিওতে জাপানি ভাষা শেখার একটি স্কুলে। ভাষা রপ্ত হওয়ার পর তিনি ভর্তি
হন তাকুশোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। চার বছরের স্নাতক
পর্যায়ের শিক্ষা শেষ করে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন এবং
এরপর পিএইচডি পর্যায়ের ডিগ্রি লাভের জন্য ভর্তি হন টোকিও দেনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বৈদ্যুতিক
যন্ত্রপাতিকে জাপানি ভাষায় বলা হয় দেনকি। বিজ্ঞানচর্চার সেই বিশ্ববিদ্যালয়
বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি উদ্ভাবনের একটি সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল
পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর পর্যায়ের গবেষণায় নিয়োজিত থাকার সময় শাহরিয়ার আহমেদ
কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড নিয়ে কাজ করেছেন। কৃত্রিম হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা,
বিশেষ করে মানবদেহে এটা ব্যবহারের সময় রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়ার সমস্যা
সমাধান করে নেওয়ায় তাঁর উদ্ভাবন ছিল ব্যতিক্রমী এক অর্জন। পিএইচডি শেষ করার পর একই
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতার সুযোগ হয় তাঁর। এরপর নিইগাতার সাঙ্গিও বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ
কয়েক বছর শিক্ষকতা করে পরে তিনি যোগ দিয়েছিলেন ওকিনাওয়ার আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে। সেখান থাকা অবস্থায় এ বছর এপ্রিল মাসে চালু হওয়া নিইগাতা
জেলার সানজো বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের পদ তিনি
গ্রহণ করেছেন এবং নতুন এই বিদ্যাপীঠকে প্রযুক্তিশিক্ষার ক্ষেত্রে জাপানের একটি
ব্যতিক্রমী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলায় তিনি এখন সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত
আছেন।
জাপানে
সাত শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিদেশি প্রেসিডেন্ট আছেন,
সে রকম বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে মাত্র আটটি। তবে সানজো বিশ্ববিদ্যালয়
ছাড়া অন্য সাতটি হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সেদিক থেকে প্রথমবারের মতো সরকারি
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হয়ে শাহরিয়ার আহমেদ অন্য অর্থে জাপানের
শিক্ষা খাতের আন্তর্জাতিক পথে যাত্রা শুরুর প্রতিনিধিত্ব করছেন।
ব্যস্ততার মধ্যেও সময় করে প্রথম আলোর সঙ্গে তিনি
কথা বলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার
কথা বলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একেবারে নতুন একটি দিক হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের
প্রযুক্তির বাস্তব ব্যবহারের শিক্ষা শিক্ষার্থীদের হাতেকলমে লাভের সুযোগ করে
দেওয়া। নিইগাতা জেলার সানজো এবং পাশের শহর সুবামে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের
অগ্রসরমাণ প্রযুক্তির শিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিত।
বিস্তৃত
সেই এলাকার ১০৩টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারমূলক
সম্পর্ক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে নিয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার
সঙ্গে সঙ্গে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাজ করার মধ্যে দিয়ে প্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগ
সম্পর্কেও বিস্তারিত জানার সুযোগ পাবে, যা একই
সঙ্গে জাপানের শিল্প খাত ও বিশ্ববিদ্যালয়—উভয়ের জন্য উপকারী হয়ে উঠবে বলে শাহরিয়ার আহমেদ মনে করেন। তাঁর মতে,
এটা ঠিক ইন্টার্ন ধরনের কাজ নয়, বরং এটা হচ্ছে
ক্যাম্পাসের বাইরে প্রশিক্ষণ। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের
ল্যাবরেটরিতে করতে হচ্ছে, সানজো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তা
শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাজে জড়িত হওয়ার মধ্য দিয়ে করে নিতে পারবে।
(সংগৃহীত)
মোছাঃ
মারুফা বেগম (এম এ, এম এড)
প্রধান
শিক্ষক
খগা বড়বাড়ী
বালিকা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়
ডিমলা, নীলফামারী।
ICT4E জেলা অ্যাম্বাসেডর,
নীলফামারী
ও সেরা কনটেন্ট নির্মাতা,
a2i.gov.bd
Email ID: lizamoni355@gmail.com