Loading..

মুজিব শতবর্ষ

১৬ মে, ২০২১ ০৯:৩৪ অপরাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৭ই মার্চ ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের (৩রা চৈত্র ১৩২৭ বঙ্গাব্দ) শেখ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। শেখ বোরহানউদ্দিন নামে এক ধার্মিক পুরুষ এই বংশের গোড়াপত্তন করেছেন বহুদিন পূর্বে। তার বাবার নাম শেখ লুৎফুর রহমান। তার বাবা গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার বা হিসাব সংরক্ষণকারী ছিলেন। তার মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। দুই ভাই এবং চার বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। শেখ মুজিবুর রহমান নামকরণ করেন তার নানা শেখ আবদুল মজিদ। ছোট বেলায় তার ডাক নাম ছিলো খোকা।

রাজনৈতিক সাফল্য

তিনি ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি।
তিনি ব্রিটিশ ভারত থেকে শুরু করে ভারত বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন বাঙালির অধিকার রক্ষায়। তিনি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। প্রথমে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি, তারপর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
শেখ মুজিবুর রহমানকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে কৃতিত্ব দেয়ার পাশাপাশি প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি হিসেবেও বিবেচনা করা হয় পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন অর্জনের প্রয়াস এবং পরবর্তীকালে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পেছনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে ।

অর্জিত উপাধিসমূহ

তাকে বাঙালি জাতির “জাতির জনক” ও “জাতির পিতা” বলা হয়। বাংলাদেশের জনগনের কাছে তিনি “শেখ মুজিব” ও “শেখ সাহেব” নামে বেশি পরিচিত। তিনি “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত ।
শেখ হাসিনা তার বড় কন্যা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে আছেন।

রাজনীতি 

ভারত বিভাজন এবং পরবর্তী পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির প্রাথমিক পর্যায়ে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের দিক শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তরুণ ছাত্রনেতা। পরবর্তীকালে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। তিনি আন্দোলন গড়ে তোলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর প্রতি সকল ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি ছয় দফা স্বায়ত্তশাসন প্রস্তাব করেন। যা তৎকালীন পাকিস্তান সরকার একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিকল্পনা হিসেবে ঘোষণা করেছিল। তিনি আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের অন্যতম বিরোধী পক্ষে পরিণত হন ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রধান দাবি প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের কারণে ।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা

১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের ত্রিপুরা অঙ্গরাজ্যের অন্তর্গত আগরতলা শহরে ভারত সরকারের সাথে এক বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করেছে অবিহিত করে শেখ মুজিবকে এক নম্বর আসামি করে মামলা করা হয়। যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। তাকে পাকিস্তান বিভক্তিকরণ ষড়যন্ত্রের মূল হোতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের কারণে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হয় এবং গ্রেফতারকৃত সবাইকে মুক্তি দেয়া হয়।

১৯৭০ এর নির্বাচন 

শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। কিন্তু নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করা সত্ত্বেও তাকে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়া হয়নি। পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে পাকিস্তানের নতুন সরকার গঠন বিষয়ে শেখ মুজিবের আলোচনা বিফলে যায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে ঢাকা শহরে গণহত্যা চালায়। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেই রাতেই তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছিলেন ব্রিগেডিয়ার রহিমুদ্দিন খানের সামরিক আদালত কিন্তু তা কার্যকর করা হয়নি।

স্বাধীনতা ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তন 

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিশ্ব মানচিত্রে “বাংলাদেশ” নামক স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। শেখ মুজিব ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

রাষ্ট্র পরিচালনা 

মতাদর্শগতভাবে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র,সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী ছিলেন। যা সম্মিলিতভাবে মুজিববাদ নামে পরিচিত। এগুলোর উপর ভিত্তি করে সংবিধান প্রণয়ন এবং তদানুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার চেষ্টা করা হয়। রাষ্ট্র পরিচালনার সময় তীব্র দারিদ্র্য, বেকারত্ব, সর্বত্র অরাজকতাসহ ব্যাপক দুর্নীতি মোকাবেলায় তিনি কঠিন সময় অতিবাহিত করেন।

মুজিব হত্যা

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দমনের লক্ষ্যে তিনি একদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে বাধ্য হন। একদল সামরিক কর্মকর্তার হাতে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই আগস্ট তিনি সপরিবারে নিহত হন।

শেখ মুজিবুর রহমান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে নির্বাচিত হন ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে বিবিসি কর্তৃক পরিচালিত জনমত জরিপে ।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি