Loading..

ম্যাগাজিন

১৭ মে, ২০২১ ০৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য...; মোছাঃ মারুফা বেগম, প্রধান শিক্ষক, ডিমলা, নীলফামারী।

 

দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা!

আমি যে বেকার পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা!!

ঔপন্যাসিক মনীন্দ্রলাল বসুর"রমলা"উপন্যাসের প্রধান চরিত্রের নামেই রাখা হয়েছিল তাঁর নাম। নামটি রেখেছিলেন তাঁর চাচাতো বোন রাণী।"রমলা" উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুকান্তের নামেই আদরের ভাইটির নাম"সুকান্ত"রেখেছিলেন বড় বোন রাণী।"রমলা"খ্যাত সাহিত্যিক মনীন্দ্রলাল বসুর এক গল্পের মতোই তিনি নিজেকে,আমি এক দুর্ভিক্ষের কবি’ বলে প্রকাশ করেছেন।বোন রাণী উৎসাহেই লেখালেখিতে সুকান্তের হাতে খড়ি।শৈশবে সুকান্ত বোন রাণীর কাছেই প্রথম কবিতার পাঠ শেখেন।

সুকান্ত ভট্টাচার্য সাহিত্যের পরিবেশ পেয়ে যান পারিবারিক পরিমণ্ডল থেকেই।স্কুলের ছাত্র হিসেবে ভালো নম্বর পাওয়া মেধাবী ছাত্র হওয়ার নজির ছিল না সুকান্তের!সাধারণ মানের ছাত্র ছিলেন তিনি।তাই লেখাপড়ায় খুব একটা আগ্রহ দেখাতেন না।কৈশোর থেকেই সুকান্ত যুক্ত হয়েছিলেন সাম্যবাদী রাজনীতির সঙ্গে।যে আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা দেখার জন্য নিজের ক্ষুদ্র জীবনের সব স্বপ্নকে বেঁধেছিলেন বিপ্লবের বন্ধনে,তা তিনি দেখে যেতে পারেননি স্বল্পায়ু জীবনে জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ায়।তবুও তা দেখেছে ভারতবর্ষ সহ বিশ্ববাসী।পরাধীন দেশের দুঃখ দুর্দশাজনিত বেদনা এবং শোষণমুক্ত স্বাধীন সমাজের স্বপ্ন,শোষিত মানুষের কর্মজীবন এবং ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য সংগ্রাম তাঁর কবিতার মূল প্রেরণা।

কবিতা আর বিপ্লব এই এক জোড়া শালিক তাঁর রক্তের ভেতর ধুমিয়ে আলোবাদ্যির উৎসব জাগিয়েছিল।সময় কারো কাছে মাটির গভীরে উদ্ভিদের শেকড় ছড়ানোর মতো ধীর ও নিঃশব্দ।কিন্তু কারো কারো কাছে সময় দেখা দেয় ঝড় বিজলি বারুদের তীব্রতা আর গতি নিয়ে।সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর সময়'কে সে রকম তীব্রতাতেই পেয়েছিলেন।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে,বাংলার দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ নর নারী শিশুর মৃত্যু সইতে হচ্ছে,ওদিকে ছড়িয়ে পড়ছে বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের ঢেউ।চলছে তেভাগা আন্দোলন,দেশ বিভাগের ধাক্কায় মানচিত্র কাঁপছে,মানুষ কাঁপছে,সমাজ ভাঙছে।সেই ভাঙা গড়ার মধ্যে কবির হৃদয় স্থির থাকতে পারেনি এক মুহূর্তেও।তাই কবিতায় লিখে যান তিনি বিপ্লবের রক্তমাখা ইতিহাস!

আর তখনই কবির এমনি প্রকাশ.........

কবিতা তোমায় দিলাম আজ ছুটি!

ক্ষুদার রাজ্যে পৃথীবি গদ্যময়

পূর্নিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি!!

কবি সুকান্ত যে আদর্শের কথা বলে গেছেন তা পৃথিবীর সমস্ত মতবাদের চেয়েও প্রাচীন,সমস্ত আদর্শর চেয়েও বড়.......

সুকান্ত ভট্টাচার্য কানে একটু কম শুনতেন ঠিকই,কিন্তু সর্বহারার আর্তচিৎকার শুনতে একদম ভুল করেননি!সুকান্তের কবিতার সহজ সরলতা অনেককে আশ্চর্য ও মুগ্ধ করেছে,সেই সরলতার সমগ্র তাৎপর্য সকলের কাছে ধরা পড়েনি,কারণ আমরা শুধু প্রকাশভঙ্গিটাই বুঝতে চাই বার্তাটি নয়! সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসু সুকান্তের বর্ণনা দিয়েছেন এমন করে গর্কীর মতো,তার চেহারাই যেন চিরাচরিতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।কানে একটু কম শোনে,কথা বেশি বলেনা,দেখামাত্র প্রেমে পড়ার মতো কিছু নয়,কিন্তু হাসিটি মধুর,ঠোঁট দু'টি সরল।

বুদ্ধদেব বসু সুকান্তের কথা আরো বলেছেন,যে চিলকে সে ব্যঙ্গ করেছিলো,সে জানতো না সে নিজেই সেই চিল,লোভী নয়,দস্যু নয়,গর্বিত নিঃসঙ্গ আকাশচারী, স্খলিত হয়ে পড়লো ফুটপাতের ভিড়ে,আর উড়তে পারলো না,অথবা সময় পেলো না।কবি হবার জন্যই জন্মেছিলো সুকান্ত,কিন্তুু কবি হতে পারার আগে তার মৃত্যু হলো।

১৩ই মে!১৯৪৭ সালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছিলেন দ্রোহের কবি নজরুল সম বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য।দুঃসহ দারিদ্রতার কষাঘাত আর বিনা চিকিৎসার অবহেলায় অনেকটা অভিমানে মাত্র ২১ বছর বয়সেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন এই বিস্ময়কর প্রতিভা।

ফুল'টি আর ফোটেনি!

ফলও জোটেনি!

তার আগেই ঝড়ে পরে গেছে!!

তবে তার প্রেমময় রোমান্টিক পূর্ণিমার চাঁদকে ঝলসানো রুটি বলার দুঃসাহসটি টিকে গেছে স্থায়ীভাবেই।তাই আজ ৭৪ বছর পরেও কবিকে স্মরণ করতে বাধ্য হচ্ছি।নিশ্চিত জানি আজ থেকে আরো ৭৪ হাজার বছর পরেও অন্য কেউ কবি'কে স্মরণ করবে পরম শ্রদ্ধায়।কবি টিকে থাকুক তার ভাবনার অসীমতায়,সাহসিকতায় ..............

"অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি

জন্মেই দেখি ক্ষুব্ধ স্বদেশ ভূমি"

স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর এই ক্ষণ জন্ম কবি স্বাধীনতা দেখে যেতে পারেননি আমৃত্যু দু'চোখে বুনে গেছেন স্বাধীনতার স্বপ্ন..........!

আর তার কবিতায় ফুটে উঠেছে নির্যাতিত,অবহেলীত মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ..........!!

 

মোছাঃ মারুফা বেগম (এম এ, এম এড)

প্রধান শিক্ষক 

খগা বড়বাড়ী বালিকা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়

ডিমলা, নীলফামারী।

 ICT4E জেলা অ্যাম্বাসেডর, নীলফামারী

ও সেরা কনটেন্ট নির্মাতা, a2i.gov.bd

Email ID: lizamoni355@gmail.com

 

 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি