সিনিয়র শিক্ষক
১৮ মে, ২০২১ ০৭:৩১ অপরাহ্ণ
দেশে অক্সিজেন ও আইসিইউ-এর সক্ষমতা রোগী বাড়লেই হবে সংকট
দেশে অক্সিজেন ও আইসিইউ-এর সক্ষমতা
রোগী বাড়লেই হবে সংকট
সারা দেশে করোনা আইসিইউ শয্যা ১০৬৯টি, সব সুবিধা সংবলিত অক্সিজেন প্ল্যান্ট ৩০টি
সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে আইসিইউ শয্যা আছে ১ হাজার ৬৯টি। আর সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ অক্সিজেন প্ল্যান্ট আছে ৩০টিতে। শুধু মডিফাই কন্ট্রোল ব্যবস্থা সংবলিত অক্সিজেন প্ল্যান্ট আছে ৩১টি হাসপাতালে।
অনেক হাসপাতালে আইসিইউ থাকলেও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত নার্সের অভাবে সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া কিছু হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হলেও চালু হয়নি। দেশে অক্সিজেনের উৎপাদন সক্ষমতা অনেক কম। এসব কারণে হঠাৎ সংক্রমণে রোগী বাড়লে অক্সিজেন ও আইসিইউ-এর প্রাপ্যতা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হয়ে পড়বে-এমন মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে দেশে অক্সিজেন মজুত থাকলেও সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘাটতি দেখা দেবে। এর আগেও এমনটি ঘটেছে। রোগীর সংখ্যা ৭ হাজারের উপরে উঠলে অক্সিজেনের চাহিদা দাঁড়ায় ২৫০ টনের উপরে। অথচ আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা ১২০ থেকে ১৫০ টন। আগে ভারত থেকে আমদানি করা হতো, বর্তমানে সেটি বন্ধ। এছাড়া রাজধানীতে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৮৩৬টি। আর ঢাকার বাইরে আছে মাত্র ২৫৭টি। সব মিলিয়ে দেশে আইসিইউ শয্যা ১ হাজার ৬৯টি, যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।
এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আহমদ পারভেজ জাবীন যুগান্তরকে বলেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সুপার স্পেডার হিসাবে পরিচিত। দেশে এটির বিস্তার ঘটলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, সেটি মোকাবিলা করার সক্ষমতা এখনো আমাদের হয়নি। কারণ ভারতের মতো রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়লে অক্সিজেন ও আইসিইউ শয্যার ঘাটতি দেখা দেবে। পাশাপাশি সাধারণ শয্যার চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না।
তাছাড়া ঈদের কারণে গ্রামাঞ্চলে যদি এটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে সামগ্রিক চিকিৎসাব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহতে হতে পারে। এ ধরনের সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি সরকারি পর্যায়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান। পাশাপাশি সীমান্তগুলোয় আরও কড়াকড়ি আরোপের পরামর্শ দেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় সংক্রমণ চলছে। ঈদকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধকোটি মানুষ রাজধানী ছেড়েছে। যারা কোনো স্বাস্থ্যবিধির ধার ধারছে না। এদিকে ‘সুপার স্পেডার’ হিসাবে পরিচিত করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দেশে শনাক্ত হয়েছে। বানের পানির মতো গ্রামমুখী জনস্রোতের সঙ্গে এই ভ্যারিয়েন্ট যদি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা একেবারে বিধ্যস্ত করে ফেলেছে।
সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, ওই ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এখনো আমাদের নেই। এখনো অনেক জেলায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়নি। অন্তত অর্ধেক জেলা হাসপাতালে নেই আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) সুবিধা। অনেক জেলার হাসপাতালে নামমাত্র আইসিইউ শয্যা থাকলেও নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স। ঈদের পরে সংক্রমণের হার বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, বর্তমানে ৩০টি হাসপাতালে আধুনিক সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট রয়েছে। যেখানে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাকের সঙ্গে মডিফাই কন্ট্রোল সিস্টেম আছে। এর মধ্যে ১১টিই ঢাকায়। ৩১টি হাসপাতালে শুধু মডিফাই কন্ট্রোল ব্যবস্থা আছে। এর মধ্যে দুটি ঢাকায়। এছাড়া শুধু সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয় ২৫টি হাসপাতালে। যার মধ্যে ৫টি ঢাকায়। তবে দেশের সব উপজেলা হাসপাতালে সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, কোভিড রোগীদের চিকিৎসার প্রস্তুতি আছে। বর্তমানে সাড়ে ১২ হাজার শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে। বর্তমানে বেশির ভাগ হাসপাতালেই শয্যা খালি পড়ে আছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
যুগান্তরের বিভিন্ন ব্যুরো ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে দেখা যায়, বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় শয্যা সংখ্যা ১০৮টি, আইসিইউ শয্যা আছে ৮টি। গত মাসে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ইউনিট চালু করা হয়েছে। বর্তমানে এটি রিজার্ভ রেখে সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে। সিলিন্ডার সংকট হলে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ইউনিট ব্যবহার করা হবে। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শফিকুল আমিন কাজল এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় শয্যা সংখ্যা ১০০টি। আইসিইউ শয্যা ৮টি এবং এইচডিইউ শয্যা ৫টি। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ইউনিট চালু আছে। হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আবদুল ওয়াদুদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
বগুড়া বেসরকারি পর্যায়ে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও রফাতউল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতাল ১৬০ শয্যা করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার হচ্ছে। হাসপাতালের মুখপাত্র আবদুর রহিম রুবেল জানান, এই হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা আছে ১০টি। তবে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ইউনিট নেই।
দিনাজপুর এম আব্দুর রহীম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ওয়ার্র্ডে শয্যা ৭১টি। আইসিইউ শয্যা ১৫টি। সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট রয়েছে। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে শয্যা আছে ৫০টি। সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট থাকলেও নেই কোনো আইসিইউ শয্যা। লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে শয্যা রয়েছে ১২টি। তবে এই হাসপাতালে কোনো সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট এবং আইসিইউ শয্যা নেই। গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ২০টি।
তবে এই হাসপাতালেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট ও আইসিইউ শয্যা নেই। পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালে মাত্র ১০ শয্যার কোভিড ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে দুই শয্যা আইসিইউ, তবে এখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট নেই। ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ৫০টি শয্যা রয়েছে। এই হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট ও আইসিইউ নেই। নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে শয্যা আছে ৫০টি। তবে এখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট আইসিইউর ব্যবস্থা নেই।
বরিশাল বিভাগের ৮ জেলার দেড় লাখ মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র ২৬টি আইসিইউ শয্যা। তবে এগুলো পরিচালনার জন্য নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এদিকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ ও ভোলা সরকারি হাসপাতাল ছাড়া আর কোথাও নেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট। বরিশালের স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাজশাহী বিভাগে চারটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। আর বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে ছয়টি। জেলা হাসপাতাল রয়েছে সাতটি। পুরো বিভাগে ৬০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। এগুলোয় মোট ৪১টি আইসিইউ শয্যা আছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট রয়েছে। বাকিগুলোয় নেই। এ তথ্যগুলো নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার। তিনি জানান, আইসিইউ পরিচালনার জন্য লোকবলের কিছুটা সংকট রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার সরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় আইসিইউ শয্যা রয়েছে মাত্র ৮২টি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরের তিনটি হাসপাতালে রয়েছে ৩৮টি আইসিইউ শয্যা। এছাড়া সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ সিস্টেম রয়েছে বিভাগের মাত্র তিনটি হাসপাতালে।
চট্টগ্রাম নগরীর দুটি সরকারি হাসপাতাল এবং কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এ সেবা মিলছে। বাকি নয় জেলার কোথাও এই সুবিধা নেই। বিভাগের বিভিন্ন জেলার সরকারি হাসপাতালে কোভিড-পরবর্তী সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হলেও এখনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। কোথাও কোথাও আইসিইউ শয্যা স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ায় কবির বলেন, এই বিভাগে সরকারি পর্যায়ে করোনা রোগীর চিকিৎসায় ৮২টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১৮টি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টি, জেনারেল হাসপাতাল-২-এ ১০টি ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ৫টিসহ ৪৩টি শয্যা রয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে ২০টি শয্যা।
তিনি বলেন, বিভাগের তিনটি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ রয়েছে। এগুলো হলো-চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল ও কক্সবাজার সদর হাসপাতাল। বান্দরবান জেলা সদর সরকারি হাসপাতালে কোনো আইসিইউ শয্যা না থাকলেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনও করা হলেও এখনো সেটি চালু হয়নি। কবে নাগাদ তা চালু হবে, তা-ও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। রাঙামাটি জেলা সদর সরকারি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হলেও এখনো চালু হয়নি। খাগড়াছড়ি জেলা হাসপাতালেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমও স্থাপন করা হয়েছে।
পর্যটন শহর কক্সবাজারে ২৫০ শয্যার সরকারি হাসাপাতালে দুটি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এছাড়া ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে ৮টি আইসিইউ শয্যা স্থাপন করা হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টও আছে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই অক্সিজেন সেবা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানান এই হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এসএম নওশাদ রিয়াদ।
খুলনায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দুটি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে খুলনা করোনা হাসপাতালে এখন পর্যন্ত অক্সিজেন প্ল্যান্টটি বসানো হয়নি। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন থেকে নতুন সংযোগ দিয়ে করোনা হাসপাতালের রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। ঈদের পর আরও ২০টি আইসিইউ শয্যাসহ স্থাপন করা হবে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়কারী ও উপাধ্যক্ষ ডা. মো. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, লিকুইড অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনে ট্যাংকসহ আনুষঙ্গিক মালামাল দেওয়া হলেও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এখনো সেটি স্থাপন করতে পারেনি।
যশোর ব্যুরো জানিয়েছে, যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও বক্ষব্যাধি হাসপাতাল দুটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা চালু আছে। সম্প্রতি এখানে ৩টিতে আইসিইউ শয্যা, ৮টি ভেন্টিলেটর ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
নড়াইলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শ্বাসকষ্টের চিকিৎসায় হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর এবং আইসিইউ সুবিধা নেই। মৃদু উপসর্গ রোগী ছাড়া বাকিদের খুলনা বা ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। তবে নড়াইল সদর হাসপাতালে ১৭২টি, কালিয়ায় ৪১টি ও লোহাগড়ায় ৪৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত আছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের দুই ওয়ার্ডকে এক করে করোনা ওয়ার্ড করা হয়েছে। সেখানে মোট ৪৬টি শয্যা রয়েছে। এছাড়া কুষ্টিয়ার ৬ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও রয়েছে করোনা ওয়ার্ড। সারা দেশে ১০০টি সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টের মধ্যে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ১০টি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে রোগীদের ২৪ ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়।
চুয়াডাঙ্গায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর জন্য কোনো আইসিইউ নেই। এমনকি জেলার কোথাও কোনো ভেন্টিলেটর নেই। এখানে অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে ৫৪টি। এসব কেন্দ্রে ৩০ জন ডাক্তার ও ২৭ জন নার্স দায়িত্ব পালন করছেন। জেলায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট নেই। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের তত্ত্বাবধানে থাকা মেডিকেল অফিসার ডা. আওলিয়ার রহমান যুগান্তরকে বলেন, সদর হাসপাতালে একটি প্ল্যান্ট তৈরি করা হয়। কিন্তু যান্ত্রিক কারণে সেটা চালু হয়নি।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনে ৫০ শয্যার একটি ওয়ার্ডে কোভিড-১৯ ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট রয়েছে। পর্যাপ্ত তরল অক্সিজেনও মজুত আছে বলে নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম।
মাগুরায় ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ৫০টি এবং বাকি তিনটি উপজেলায় ৫টি করে মোট ৬৫টি কোভিড শয্যা রয়েছে। এখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা রয়েছে। ১৫০টি পোর্টের মাধ্যমে যেখানে রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব। এছাড়াও রয়েছে ৩টি হাই ফ্লো অক্সিজেন সাপ্লাই এবং ১৮৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার। তবে এখানে কোনো আইসিইউ ব্যবস্থা নেই। শিগগিরই ১০ শয্যার আইসিইউ-এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লাহ দেওয়ান।
করোনা চিকিৎসায় সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন সাফায়েত জানান, ৩৫টি আইসোলেশন শয্যা রয়েছে সেখানে। মেহেরপুরে তিনটি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা চলছে। জেলা সদরে ২৫০ শয্যার হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য দুটি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এছাড়া সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টও চালু আছে।