Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

১৬ জুন, ২০২১ ১১:০১ পূর্বাহ্ণ

একজন পরাজিতের বিজয়

      আবুল কালাম আজাদ ওরফে শিপন,পিতা- মোঃ আব্দুল কাদের,মাতা-পারভীনা খাতুন,গ্রাম-তাহেরহুদা,উপজেলা-হরিণাকুন্ডু,জেলা ঝিনাইদহ-শারিরীক প্রতিবন্ধি হিসাবে জন্ম নেওয়া এক শিশু। জন্মের পর একটু বুদ্ধিপ্রাপ্ত হলেই সমাজের সকল অনাদর অবহেলা দেখে সে স্পষ্ট বুঝতে পারে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হিসাবে জন্ম নেওয়াই তার আজন্ম পাপ। পরিবার থেকে পায়নি কোনো সহমর্মিতা -এমনকি বন্ধুদের কাছ থেকেও। পারিবারিক অনিচ্ছা সত্বেও ভর্তি হয় স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু বিধি বাম। সহপাঠিদের বিদ্রুপপূর্ণ আচরণ ও শিক্ষা ব্যবস্থায় অপ্রতুল প্রযুক্তির কারণে শিক্ষা কার্যক্রম শেষ হতে চললেও দমে যায়নি শিপন। অনেক সংগ্রাম করে প্রাথমিকের পাঠ চুকিয়ে ঠাই নেয় আন্দুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসাবে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচিত হতে যেয়ে নজরে আসে ছেলেটি। ওর সম্পর্কে জানতে চাইলে লক্ষ্য করলাম,তার চোখের কোণে দুফোঁটা জল যা আমার হৃদয় ভেঙ্গে দেয়। অনুভব করলাম,মাননীয় প্রধান মণ্ত্রীর শত প্রচেষ্টা কি বিফলে যাচ্ছে? না-তা হতে পারেনা। দ্বায়ীত্ব নিলাম শিপনকে নিয়ে লড়াই করার।ওর উপবৃত্তির ব্যবস্থা করলাম।সমষ্যা হল -প্রতিবন্ধী ভাতার ক্ষেত্রে। স্থানীয় ইউ পি চেয়ারম্যান এর সাথে শিপনের বাবার মতা্নৈক্য থাকায় সে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। অনেক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে শিপনের প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করলাম। বিদ্যালয়ের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ওর জন্য উন্মুক্ত করে দিলাম। লক্ষ্য করলাম, কোন কিছুতেই তার আগ্রহের কমতি নেই। অল্পদিনের মধ্যেই বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-কর্মচারী,ছাত্র-ছাত্রীর মনের মণিকোঠায় আসন গেড়ে বসে শিপন। সে যেদিন অনুপস্থিত,সেদিন যেন পূরা ক্লাস অনুপস্থিত। এভাবেই চলতে থাকে শিপনের পড়াশুনা ও আই সি টি চর্চা। বিদ্যালয়ের দুটি পাবলিক পরিক্ষা-জে এস সি ও এস এস সি তে যথাযথ সাফল্য প্রদর্শন করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়ে আর দমতে হয়নি শিপনকে। কারণ, মানুষের মনের মণিকোঠায় স্থান করে নেওয়ার মন্ত্র তো সে আন্দুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে শিখে নিয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল আমাকে হতাশ করেনি। কিছুটা কষ্ট পেয়েছি সে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পাওয়াতে। ভর্তি হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত স্থানীয় সরকারি লালন শাহ কলেজে। এই কলেজেও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষ সম্মান শ্রেণির ছাত্র ইতোমধ্যে সবার অন্তরে স্থান করে নিয়েছে। যে কথা বলা হয়নি তা হল-শিপনের আই সি টি চর্চা কিন্তু থেমে নেই। দুহাতের ১০ টি আঙ্গুলই অকার্যকর হলেও সে মোবাইল ও ল্যাপ্টপ/কম্পিউটারে অত্যন্ত সাবলীলভাবে কাজ করতে পারে। আই সি টিতে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার উভয় ক্ষেত্রেই কাংক্ষিত দক্ষতা অর্জন করে ইতোমধ্যেই অত্র এলাকায় সে পরিচিতি লাভ করেছে আই সি টি শিপন নামে। এতদঞ্চলে আই সি টি বিষয়ক যে কোনো সমষ্যা সমাধানের শেষ আশ্রয়স্থলই যেন আবুল কালাম আজাদ ওরফে শিপন।

আসুন, আমরা শিপনদেরকে অবহেলা নয়,করুণা নয়, উৎসাহিত করি, অনুপ্রেরণা দিই-যেন ওরা সমাজের আর পাঁচটি শিশুর মত মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, নিজেকে মেলে ধরতে পারে।