এভাবেই এগিয়ে চলেছি
আমি মোঃ তারেক হাসান, সহকারী শিক্ষক, বাড়েয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোচাগঞ্জ, দিনাজপুর। শিক্ষকতা পেশায় যোগদান ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে সহকারী শিক্ষক হিসেবে।
২০১১ সালে সি-ইন-এড করার সময় আন্তঃপিটিআই প্রতিযোগিতায় উপস্থিত বক্তৃতা ইভেন্টে জেলা ও বিভাগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে জাতীয় পর্যায়ে ৩য় স্থান অর্জন করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়ের কাছ থেকে পুরস্কার ও সনদ গ্রহণ করি। এটিই ছিল শিক্ষকতা জীবনে প্রথম কোনো বড় অর্জন।
কম্পিউটারের হাতেখড়ি আজ থেকে প্রায় ২৭ বছর আগে ১৯৯৭ সালে। চাচার কম্পিউটার প্রতিষ্ঠান থাকায় এই সুযোগ পাই। প্রযুক্তির প্রতি খুব বেশি আগ্রহ থাকার কারণে শিক্ষকতা পেশায় যোগদানের ৬ মাসের মধ্যেই একটি ল্যাপটপ ক্রয় করি। সেসময় আমার কর্মরত বিদ্যালয় এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। আমি বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ নিয়ে গিয়ে ল্যাপটপেই শিশুদের অনেক কিছু দেখাতাম। তখনও ডিজিটাল কনটেন্ট সম্পর্কে খুব বেশি জানতাম না। ধীরে ধীরে দেখলাম বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা PTI তে ১২ দিনের ICT in Education প্রশিক্ষণ করতে যাচ্ছে। সেখান থেকেই শিক্ষক বাতায়ন সম্পর্কে অবগত হই।
এরপর ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দিনাজপুর PTI তে ১২ দিনের ICT in Education প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি এবং সেখানে শিক্ষক বাতায়নের সদস্য হই। শুরু হয় প্রাণের শিক্ষক বাতায়নের সাথে অবিরাম পথচলা।
এরপর থেকে শিক্ষক বাতায়নে চলে প্রতিনিয়ত লগইন করে নিজের তৈরিকৃত কনটেন্ট আপলোডসহ ব্লগ লেখা, ছবি আপলোড ইত্যাদি। ফলস্বরূপ ২০১৯ সালের ২৪ মে বাতায়নের সপ্তাহের সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা নির্বাচিত হই। এই অর্জনে নিজেকে খুবই সম্মানিত বোধ করেছি।
মাত্র ১ মাস পরেই ২৫ জুন ২০১৯ এটু্আই কর্তৃক দিনাজপুর জেলার ‘আইসিটি ফর জেলা অ্যাম্বাসেডর শিক্ষক’ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হই। অন্যদিকে মুক্তপাঠে নিয়মিত বিভিন্ন কোর্স সম্পন্ন করতে থাকি। এতে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হই।
কোভিড-১৯ চলাকালে বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়, তখন শুরু করি অনলাইনে পাঠদান। শিক্ষক বাতায়ন ও এটুআই কর্তৃক পরিচালিত ঘরে বসে শিখি পেইজে নিয়মিত পাঠদান করি। এছাড়া প্রাথমিকে প্রথম অনলাইন স্কুল বাংলাদেশ আলোকিত প্রাথমিক শিক্ষক পেইজেও পাঠদান করি। অন্যদিকে জুম ও গুগল মিট ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে পাঠদান করি।
কর্মরত বিদ্যালয়কে মাইক্রোসফ এডুকেশনে অন্তর্ভূক্ত করি এবং নিজেও পর পর দুই সেশনে (২০২০-২০২১ এবং ২০২১-২০২২) MIE Expert হিসেবে নির্বাচিত হই।
২০১৮ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত ইংরেজি বিষয়ে TOT প্রশিক্ষক হিসেবে URCতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করি। এছাড়া ২০২২ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিলের তত্বাবধানে দুইজন বিদেশী প্রশিক্ষকের অধীনে ১৪ সপ্তাহের TMTE (Training of Master Trainers of English) প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করি এবং পরবর্তীতে উপজেলায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করি।
জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদকে ২০১৯ ও ২০২৩ সালে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হই।
২০২২ সালে শিক্ষক দিবসে ব্লেন্ডেড লার্নিং বিষয়ে আপ-স্কিলিং ও রি-স্কিলিং এর উপর ভিডিও কনটেন্ট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সারাদেশে ৯ম স্থান অর্জন করে মাউশি’র ডিজি মহোদয়ের হাত থেকে সম্মাননা পুরস্কার গ্রহণ করেছিলাম।
২০২৩ সালে নতুন কারিকুলামের অধীনে শিক্ষক সহায়িকা অ্যাপ ডেভলপমেন্টে (১ম শ্রেণি) NCTB তে ওয়ার্কসপ-এ অংশগ্রহণ করি।
আমার উপরোক্ত কর্মযজ্ঞে প্রাণের শিক্ষক বাতায়নের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শিক্ষক বাতায়নকে ঘিরে যুক্ত রয়েছে দেশের অসংখ্য শিক্ষক। শিক্ষক বাতায়নের কল্যাণে আজ আমরা একে অপরকে চিনছি, জানছি। চিরকৃতজ্ঞ শিক্ষক বাতায়নের প্রতি।
মোঃ তারেক হাসান
সহকারী শিক্ষক
বাড়েয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
বোচাগঞ্জ, দিনাজপুর।