কনসালটেন্ট
০৬ মে, ২০২৪ ০৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ
শিক্ষার্থীরাই আমার স্বপ্ন
আমি রোকসানা আক্তার।
মৌলভীবাজার জেলার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 'দি ফ্লাওয়ার্স কে জি এন্ড
হাইস্কুল ' এ শিক্ষকতা শুরু করার সুযোগ পেয়েছিলাম ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাস থেকে।
শিক্ষকতার প্রতি গভীর টান অনুভব করা শুরু হয়েছিল বিয়ের পর থেকেই। ২০০০ সালের ২৫
আগস্ট আমার বিয়ে হয় একজন অসাধারণ কলেজ শিক্ষকের সাথে। তিনি বিসিএস ১৭তম ব্যাচের
শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা।
'শিক্ষকতা পেশার প্রতি
শ্রদ্ধাবোধ এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি আন্তরিকতা দেখে আসছি উনার চালচলনে। তাই, আমি
উনার মতো একজন শিক্ষক হতে চেয়েছি বরাবরই।
জীববিজ্ঞানের শিক্ষক
হিসেবে নিয়োগ হয়েছিল আমার। প্রচন্ড ভালোলাগা নিয়ে শুরু করি আমার কাজ।অল্প দিনেই আমি
সকলের প্রিয় হয়ে উঠি। ধীরে ধীরে আমার কাজের প্রতি আগ্রহ বেড়েই চলেছিল। কখনও থেমে
থাকিনি। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি নতুন কিছু শেখার।
২০০৯ সাথে আমি ব্রিটিশ
কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এর কানেকটিং ক্লাসরুম এর প্রশিক্ষণ এর সুযোগ
পেয়েছিলাম। সেই প্রশিক্ষণে লব্ধ জ্ঞান আমি আমার ক্লাসরুমে প্রয়োগ করি। এতে আমার
নিজের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।
২০১৪ সালে আমি সুযোগ পেয়েছিলাম নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে কাজ করার। মৌলভীবাজার জেলার বিজ্ঞান শিক্ষকদের নিয়ে নতুন কারিকুলাম বিষয়ক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করি আমি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশের ২০১৯ সাথে আমি সুযোগ পেয়েছিলাম নিউজিল্যান্ডে বিজ্ঞান বিষয়ের প্রশিক্ষণ গ্রহণের।
২০২০ সালের করোনাকালীন
সময়ে শিক্ষাক্ষেত্রে যোগ হয় নতুন অধ্যায়। শুরু হয় অনলাইন ক্লাস। আমার এতে কোনো
অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই সরাসরি লাইভ ক্লাস করি।কিছুদিন পরই আমার মনে হলো, ‘বিজ্ঞান বিষয়ের ক্লাসে আরও নতুনত্ব আনার খুবই গুরুত্বপূর্ণ’। তাই আমি নিজের
পরিকল্পনায় ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি শুরু করি। আমার একটা এডুকেশন পেইজ আছে ২০১৭ সালের
মে মাস থেকে। আমি ভিডিও কন্টেন্টগুলো আমার পেইজে আপলোড দিতে শুরু করি।সাথে সাথে
ইউটিউব চ্যানেলেও আপলোড দিয়ে রাকি।করোনাকালীন ঘরবন্দী জীবনে অনেক ভিডিও কন্টেন্ট
তৈরি করেছি এবং সবগুলোই শিক্ষক বাতায়নে আপলোড দিয়ে আসছিলাম। কর্তৃপক্ষ আমাকে
মৌলভীবাজার জেলার অ্যাম্বাসেডর শিক্ষক হিসেবে মনোনিত করেন যা, আমার কাজের আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছিল। সময় পেলেই আমি শিক্ষক বাতায়নে কাজ করি।
ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে আপলোড দেওয়া ছাড়াও নিয়মিত ব্লগ লিখতে শুরু করি। কর্তৃপক্ষ
আমাকে অনলাইন এবং সরাসরি প্রশিক্ষণের সুযোগ দেন বিভিন্ন সময়। ২০২২ সালের ডিসেম্বর
মাসে আমি শিক্ষক বাতায়নে সেরা কনটেন্ট নির্মাতা হয়েছি। তারপর থেকে, আমার আগ্রহ আরও বেড়ে
যায়। ২০২২ সাথে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে আমি জেলার শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি এবং ২০২৩ সালে সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক (
মাধ্যমিক) হিসেবে নির্বাচিত
হয়েছি। এই অর্জনের জন্য আমি অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি প্রিয় শিক্ষক বাতায়ন
কর্তৃপক্ষের প্রতি।
২০২৩ সালে আমার জীবনে ঘটে গেছে একটা দারুণ ঘটনা যা আমাকে শিক্ষক বাতায়নের প্রতি ঋণী করে দিয়েছে। এটুআই কর্তৃপক্ষের বিশেষ মূল্যায়নে ‘নির্ভয়া এওয়ার্ড’ আমার হাতে তুলে দিলেন স্টেফান লিলার, ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি। আমার ক্যাটাগরি ছিল ডিজিটাল এডুকেশন। এই মূল্যায়নের জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি a2i - Aspire to Innovate এবং প্রিয় শিক্ষক বাতায়য়ের প্রতি।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ০৫ মার্চ এক অনুষ্ঠানে দ্য ডেইলি স্টার এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি বাংলাদেশ কর্তৃক ছয় ব্যক্তিকে "নির্ভয়া (নির্ভয়)" হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। প্রোগ্রামটি অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশন দ্বারা সমর্থিত ছিল। রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম; স্টেফান লিলার, ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি; এবং অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার নারদিয়া সিম্পসন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শুধু তাই নয়, The Daily Star ' ইংরেজি পত্রিকা আমার শিক্ষা বিষয়ক কার্যক্রম সম্পর্কে ' For the Love of Education ' শিরোনামে প্রকাশ করেছেন বিশেষ লেখা।
তখন থেকেই আমি নিজেকে
নির্ভয়া ভাবতে শুরু করি।এই নির্ভয়া এওয়ার্ড এবং খেতাব আমাকে কাজের প্রতি আরও
দায়িত্বশীল এবং সচেতন হতে আগ্রহী করেছে।শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে
অনুপ্রাণিত করেছে।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে আমি সুযোগ পেয়েছিলাম দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের উদ্যোগে আমন্ত্রণমূলক তথ্যায়ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার। অত্যন্ত চমৎকার আয়োজনের প্রশিক্ষণে লব্ধ জ্ঞান দিয়ে আমি নিজের দক্ষতা বাড়াতে চেষ্টা করে চলেছি। আর শিক্ষার্থীদের জন্য শুরু থেকেই আমি ভালো কিছু করতে চেষ্টা করে আসছি।করোনাকালীন ঘরবন্দী সময় থেকেই তাদের জন্য আমি শুরু করেছি ডিজিটাল বিজ্ঞান ক্লাব।এই ক্লাবের নাম ' সিস্টার্ণি' এবং সদস্য সংখ্যা ৩৫০। এই ক্লাবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী করতে চেষ্টা করে আসছি। আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আমার বিজ্ঞান ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনার গতি বেড়েই চলেছে।ইতিমধ্যেই ক্লাবের আয়োজনে একটি বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং বিজয়ী শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করেছি নিজের উদ্যোগে। প্রায়ই আয়োজন করি বিজ্ঞান এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সেশন।
নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে শুরু থেকেই কাজ করছি আমি। ২০২৩ সালে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে জেলা মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি । হবিগঞ্জ এবং মৌলভীবাজার জেলার বিজ্ঞান শিক্ষকদের সাথে কাজের সুযোগ পেয়ে খুব ভালো লেগেছে।
শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশে বিদ্যালয়ে একটি সায়েন্স কর্ণার স্থাপন করেছি আমি। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে আমার এই উদ্যোগ। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিষয়ের সৃজনশীল কাজগুলো প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছি।প্রতি মাসে শিক্ষার্থীদের দেওয়া কাজগুলো বাছাই করে সায়েন্স কর্ণারে রাখা হবে এক মাস ব্যাপী। আশা করছি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল মেধা বিকাশে এই উদ্যোগ অনেকটাই ভূমিকা রাখবে।
প্রতি বছর আমার প্রিয় শিক্ষার্থীরা জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ে। তাদেরকে শিক্ষক হিসেবে অনুপ্রেরণা দেওয়া ও সাপোর্ট করা নিজের দায়িত্ব মনে করি সবসময়ই। আমার কাজের শক্তি এবং আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে প্রিয় শিক্ষক বাতায়ন। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
দোয়া করবেন আমি যেন
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক ভালো কিছু করতে পারি।
রোকসানা আক্তার
সিনিয়র শিক্ষক
দি ফ্লাওয়ার্স কে জি
এন্ড হাইস্কুল,
মৌলভীবাজার।