Loading..

সফলতার গল্প

শিক্ষক বাতায়নের স্পর্শে পেয়েছি সফলতা
article

আমি মো. নুর কুতুবুল আলম, পেশায় শিক্ষক। আমার বেড়ে ওঠা একটা প্রত্যন্ত গ্রামে। এখন অবশ্য গ্রাম বলা যায় না, কারণ আমাদের গ্রামটি এখন কালো রাস্তায় মোড়ানো। লাল-নীল বাতির আলোয় আলোকিত আমাদের গ্রাম। গ্রামে রয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সুবিশাল খেলার মাঠ, একটি ২০ শয্যার হাসপাতাল, সাপ্লাই পানির ব্যবস্থা। আমার বাবা পেশায় একজন সফল কৃষক ছিলেন। আমি ভাই-বোনদের মধ্যে পরিবারে সবার ছোট হওয়ায়, বেশ আদরেই বড় হয়েছি।

 

২০০৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার শাপলাকলি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষক পদে যোগদান করি। তখন কম্পিউটার শিক্ষা ছিলো চতুর্থ বিষয়। তাই, এই বিষয়ে শিক্ষার্থী ম্যানেজ করা ছিলো বেশ কষ্টকর। আমার বিদ্যালয়ে আমার দেয়া একটি কম্পিউটার ছিলো, যা দিয়ে শিক্ষার্থীরা কাজ করতো। আমি সবসময়ই আমার শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখাতাম, শ্রেণিকক্ষে তাদের বলতাম, ‘এমন একদিন আসবে যেদিন কম্পিউটার ছাড়া একটি মুহূর্ত চিন্তাও করা যাবে না’। ঠিক তাই, এখন আমরা সে সময়ে পদার্পন করেছি! আমি শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি সবসময় নতুন কিছু করার আগ্রহে বিভোর থাকতাম।

 

২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো ৩০ দিনের জন্য আইসিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ করতে যাই, ঢাকা পলিটেকনিকে। খুব ভালোভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করে ফিরে আসি বিদ্যালয়ে। এসে শুরু হয় নতুন কর্মযজ্ঞ।

 

এরপর যশোর সরকারি টিচার্স টেনিং কলেজে ১২ দিনের ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি বিষয়ক প্রশিক্ষণ করি। প্রশিক্ষণে গিয়ে আমি Ning এর সদস্য হই। আমরা যারা Ning সদস্য ছিলাম তারা পরবর্তীতে শিক্ষক বাতায়নের সদস্য হয়ে নতুন করে পথচলা শুরু করি। সে সময় শিক্ষক বাতায়নের আকাশে অনেক তারকা দেখতাম আর ভাবতাম আমি কি কোন দিন পারব বাতায়নের মাধ্যমে দেশের সেরাদের কাতারে যেতে! ২০১৬ সালের শেষের দিকে আমার সে আশটা পূরণ হলো। নিজেকে আবিষ্কার করলাম ভিন্ন আঙ্গিকে, হলাম শিক্ষক বাতায়ন এর সপ্তাহের সেরা কনটেন্ট নির্মাতা। 

 

২০১৬ সালে খুলনা সরকারি টিচার্স টেনিং কলেজে Advance ICT ট্রেনিং থেকে এ+ প্রাপ্ত হই। ২০১৭ সালে সেই সদূর কক্সবাজারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (a2i)  কর্তৃক আয়েজিত সেরা কনটেন্ট নির্মাতার সম্মাননা স্মারক অর্জন করি। সেই অনুপ্রেরণা থেকেই শুরু হলো পথ চলা…।

 

তারপর এটুআইকে থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলার অ্যাম্বাসেডর শিক্ষক  হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হই। তখন থেকে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসটা আরও বেড়ে গেলো।

 

ব্রিটিশ কাউন্সিল এর কানেক্টিং ক্লাসরুমের মাধ্যমে, পৃথিবীর অনেক দেশের সাথে আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রজেক্ট শেয়ারিং হয়। ২০১৬ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে আমার বিদ্যালয়টি ISA (International School Award) প্রাপ্ত হয় যা আমার জীবনে আরেকটি সফলতা। এর মধ্য দিয়ে আমাদের বিদ্যালয়ের সুনাম ছড়িয়েছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে।


২০১৮ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণে থাইল্যান্ডের ক্যাসেট সার্ট ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার সুযোগ হয়। ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে ICT বিষয়ে অনেক জ্ঞান লাভ করি যা, আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মান বাড়িয়ে দিয়েছে।


কোভিড-১৯ চলাকালিন সময় নিয়মিত কাহুত ও জুম আইডি ব্যবহার করে আমাদের শিক্ষার্থীদের সাথে ক্লাস কার্যক্রম চালিয়েছি।

 

আমার বিদ্যালয়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব  রয়েছে, সেখানে আমি আমার শিক্ষার্থীদের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ তথা স্মার্ট নাগরিক হওয়ার জন্য তাদের প্রস্তুত করছি। ২০২৩ সালে আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী Green Earth Quest অনলাইন প্রতিযোগিতায় জেলায় প্রথম স্থান অর্জন করে। বিভাগীয় পর্যায়ে রানার্সআপ হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের জন্য।

 

তাছাড়া, আমার বিদ্যালয়ে রয়েছে কম্পিউটার ক্লাব। যেখানে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসে ও সমাধান নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। শিক্ষক হিসেবে আমি তাদের সফলতার উচ্চ শিখরে দেখব এ আশা রাখি।

 


মো: নুর কুতুবুল আলম

সিনিয়র শিক্ষক

ডিজিটাল প্রযুক্তি

শাপলাকলি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়

জীবননগর, চুয়াডাঙ্গা। 

 

মন্তব্য করুন