![img](https://teachers.gov.bd/shared/profile_pictures/2024/01/10/als4QWlrLYkqV6fI1dWPEo2IU1HbmUEHofq7jpsQ.jpg)
কনসালটেন্ট
![article](https://teachers.gov.bd/shared/success_story_image/2024/June/18/171868552466710f546f832.webp)
১৮ জুন, ২০২৪ ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ
কনসালটেন্ট
আমি উম্মে হাবিবা।
বর্তমানে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, ঢাকায় বাংলা বিষয়ের
শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি। জাতীয় শ্রেষ্ঠ শিক্ষক -২০২৪ নির্বাচিত হয়েছি। অনেকেই আমার
সফলতার পেছনের ইতিহাস জানতে চান। আমি খুবই সাধারণ একজন মানুষ এবং শিক্ষক।
২০০৫ সালে সরকারি
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। শিক্ষক হবার স্বপ্ন বা ইচ্ছা
কোনোটাই ছিলো না। কিন্তু কীভাবে যেন শিক্ষক হয়ে গেলাম!!আমার শিক্ষকতা জীবনের প্রথম
ক্লাস ছিলো দশম শ্রেণির বাংলা বিষয়ে। খুবই ভয়ে ভয়ে ক্লাসে প্রবেশ করেছিলাম। কীভাবে
দাঁড়াতে হবে, হাত কীভাবে রাখবো, কী কথা বলব!! - এরকম অসংখ্য ভীতি মনে। সেই শুরু!!
আমার মধ্যে নতুন
কিছু করার, কাজ ভালো করার প্রবল শক্তি কাজ করে। আমার সর্বোচ্চ দেওয়াই লক্ষ্য থাকে।
তাই নিজের কাজের প্রশংসা পেতে শুরু করি যা আমাকে আরো এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দিয়েছে।
করোনার সময় সংসদ টিভির ক্লাস, অনলাইন ক্লাস, ফেসবুক লাইভ ক্লাস, কিশোর বাতায়নের লাইভ
অনুষ্ঠান এইসব কাজ শিখতে শিখতে কখন যেন আরো সচেতন হয়ে উঠলাম। আরো ভালো কিছু করার তীব্র
ইচ্ছা।
আমি প্রফেশনাল
জীবনকে সবসময় প্রফেশনাল রাখি এবং দেখি। আমি বিশ্বাস করি একমাত্র প্রফেশনাল আচরণ আপনাকে
যে কোনো সাফল্য এনে দিতে পারে। আমার জীবনে অনেক সমস্যা,বাধা ছিলো যেটা আমার ব্যক্তিগত
জীবনের, পারিবারিক জীবনের অংশ। আমি সেটাকে কখনোই আমার প্রফেশনাল জীবনের অংশ হতে দেইনি।
আমি আমার শিক্ষার্থীদের ভালোবাসি, আমার শ্রেণিকক্ষকে ভালোবাসি।
আমি মনে করি একজন
শিক্ষকের প্রথম কাজ ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট।
এটা জানা না থাকলে সফলভাবে পাঠদান করা সম্ভব না। আমি সময়ের প্রতি যত্নশীল। আমি একজন সময় সচেতন শিক্ষক। আমি আমার শ্রেণিকক্ষে ১০০% দেওয়ার জন্য কাজ করি।
আমি শিক্ষার্থীদের শুধু ভালোবাসি না প্রয়োজনে শাসনও করি। আমি মনে করি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে
আমি ওর অভিভাবক। শিক্ষার্থীদের ভালো- মন্দের ভার আমার।
আমি সবার ভালো
কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হই। ভালো কাজ থেকে নিজেও শিখি। কীভাবে পাঠদানকে আরো আকর্ষণীয় করা
যায় এবং শিক্ষার্থীদের মনোযোগী করা যায় সে বিষয়ে আরো পড়াশোনা করি। অন্য সহকর্মীদের
কাছ থেকে পরামর্শ নিতে লজ্জা পাই না।
আমি শিক্ষক বাতায়নের
শুরুর অংশীজন। শিক্ষক বাতায়নে তখন মাত্র কাজ চলছে। আমার প্রথম পল্লীজননী কবিতার কনটেন্ট
আপলোড করা হয় যা সকলের কাছে প্রশংসিত হয়। বিভিন্ন টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষকগণ
আমাকে পল্লীজননীর হাবিবা নামেই চিনতেন। এসব ভালোলাগা আরো ভালো ভালো কাজ করতে আমাকে
অনুপ্রাণিত করেছে।
আমি ট্রেইনার হিসেবে
কাজ করেও নিজের সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকি। একসময় সকলের কাছে ট্রেইনার হিসেবেও
প্রশংসা পাই।
আমি মনে করি সফলতার
পেছনে নিজের সর্বোচ্চ পরিশ্রম, সততা প্রয়োজন। অন্যের কাজকে প্রশংসা করা, অন্যকে প্রশংসা
করা এগুলোও সফলতার পথে অন্যতম সঙ্গী। আমি কখনো কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবি না। আমি মনে
করি সবাই সবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে এবং যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী তিনি সফল হবেন।
আমি কখনোই ভাবিনি
যে আমি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হবো!! আমার ২০ বছরের পরিশ্রম, হেরে
না যাওয়া, সততা আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি- কাজই আপনাকে
শ্রেষ্ঠ হতে সাহায্য করে। আপনার কাজের প্রোফাইল যেন স্বচ্ছ হয়,গোছানো হয়। শুরু থেকেই
গুছিয়ে কাজ করলে আলাদা কোনো প্রস্তুতি নিতে হয় না। আপনার প্রতিটি কাজই আপনার মূল্যায়নের
ক্ষেত্রে PI.
আমি আমার গায়ের রঙের জন্য প্রচুর বুলিং এর শিকার হয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা মেয়েটির যোগ্যতা তার গায়ের রঙের কাছে হেরে যেতো বারবার। আমি মন খারাপ করেছি। আর আয়নায় নিজেকে দেখেছি। আমার মনে হয়েছে যে- আলহামদুলিল্লাহ!! আমি মহান আল্লাহর সৃষ্টি অনেক সুন্দর একজন মানুষ। মেডিটেশন করেছি নিজেকে শক্তিশালী করেছি কাজের মাধ্যমে।কোনো বাধাই আপনাকে পিছিয়ে রাখতে পারবে না যদি আপনি আপনার প্রফেশনাল জীবনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। আমি প্রচুর কাজ করেছি।
আমার শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার শতভাগ দায়িত্ব পালনের চেষ্টা আমাকে আজ জাতীয় শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমি মনে করি শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি মানে আমার দায়িত্ব শুরু। এখন আমাকে আরো বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে।
আমি একজন আজীবন শিক্ষার্থী। এখন আমার লক্ষ্য পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা। শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করা। স্রষ্টার প্রতি অগাধ বিশ্বাস আর নিজের পরিশ্রম সব স্বপ্ন পুরণ করতে সাহায্য করে।
উম্মে হাবিবা
সিনিয়র শিক্ষক
গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল,
ঢাকা ।