Loading..

প্রকাশনা

২৩ জুন, ২০২২ ০৮:২৬ পূর্বাহ্ণ

প্রাকৃতিক দুর্যোগগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের অন্যতম নৈতিক দায়িত্ব

প্রাকৃতিক দুর্যোগগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের অন্যতম নৈতিক দায়িত্ব

প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক অনেক সময় মানুষকে জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করে মহৎ প্রাণ ধর্মভীরু করে তোলে। যখনই কোনো বালা-মুসিবত বা বিপদ-আপদ পৃথিবীতে নেমে আসে, তখন মানুষ আল্লাহর ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আত্মবিশ্লেষণের সুযোগ পায়। তাই অতিবৃষ্টি, ঝড়, বন্যা,ভূমিকম্প,জলোচ্ছাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুহূর্তে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো দল-মত-নির্বিশেষে সব শ্রেণী-পেশার ধর্মপ্রাণ মানুষের অবশ্য কর্তব্য। বিপদের সময় এসকল দূর্যোগগ্রস্থ  মানুষের সেবায় এগিয়ে এসে প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তি তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। বিপদগ্রস্ত লোকেরা সাহায্যের অর্থ, ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ, খাওয়ার স্যালাইন, বিশুদ্ধ পানি বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে খুবই উপকৃত হয়।
যারা অসহায়, বিপদগ্রস্থ, অভাবী, গরিব-দুঃখী এবং অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থানহীন মৌলিক অধিকারবঞ্চিত মানুষকে ত্রাণ সাহায্য করে ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন, আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন। মর্মে পবিত্র কুরআনে পাকে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) তোমাদের ভয়, ধা এবং ধনসম্পদ, জীবন ফল-ফসলের ক্ষতি দিয়ে অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি ধৈর্যশীলদের শুভ সংবাদ দাও, যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, ‘আমরা তো আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী’ (সূরা আল-বাকারা-১৫৫-১৫৬)
দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে সিলেট বিভাগে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণে অসহায় মানুষ যখন পানিবন্দী অবস্থায় জীবনযাপন করছে, তখন সমাজের বিত্তবানদের বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানো সাহায্য-সহযোগিতা করা ইসলামের বিধান। টাকা-পয়সা, খাদ্য, বস্ত্র, পানি, ওষুধ যার যা কিছু আছে, তা নিয়েই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসার এখনই সময়। হাদিস শরিফে দুনিয়াতে ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত মানুষকে অন্ন বস্ত্রদানের পরকালীন প্রতিদান ঘোষণা করে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘ যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়াতে মানুষকে খাদ্য দান করেছে, সেদিন তাকে খাদ্য দান করা হবে। যে আল্লাহকে খুশি করার জন্য মানুষকে পানি পান করিয়েছে, তাকে সেদিন পানি পান করিয়ে তার পিপাসা দূর করা হবে। যে মানুষকে বস্ত্র দান করেছে, তাকে সেদিন বস্ত্র পরিধান করিয়ে তার লজ্জা নিবারণ করা হবে’ (আবু দাউদ)
বন্যায় অনেক দরিদ্র পরিবারের বাড়িঘর, সহায়-সম্পদ জীবন-জীবিকার ক্ষতি হয়েছে। বহু রাস্তাঘাট, দোকানপাট, বসতভিটা, জমি-জিরাত ফল-ফসল নিশ্চিহ্ন বিলীন হয়ে গেছে। অবস্থায় বন্যাকবলিত অঞ্চলের অসহায় বানভাসি মানুষ কতটা দুঃখ-কষ্টের মধ্যে পড়েছে, তা সহজেই অনুমেয়। বন্যাদুর্গত বিভিন্ন এলাকায় পানিবাহিত নানা ধরনের রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের অভাবে তারা সুচিকিৎসা পাচ্ছে না। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘ তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ বা রুগ্ন ব্যক্তির সেবা করো এবং বন্দীকে মুক্ত করো অথবা ঋণের দায়ে আবদ্ধ ব্যক্তিকে ঋণমুক্ত করো’ (বুখারি)
সমাজে যারা বিত্তবান, তারা সবাই চিত্তহীন নন, বর্তমান প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ সময়ে তারা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। জন্য দেশের ধনাঢ্য সঙ্গতিসম্পন্ন লোকেরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র ব্যক্তিদের পরিবার-পরিজন আত্মীয়স্বজনকে ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী মুক্তহস্তে দান-সদকা করে সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়াসে গতিসঞ্চার করতে পারেন। সাহায্যকারীর দান কখনো বৃথা যায় না, যদি না তা লোক দেখানো হয়ে থাকে। অসহায় মানুষকে অন্নদানে বেহেশতের সুসংবাদ দিয়ে নবী করিম সা: ঘোষণা করেছেন, ‘একটি রুটি দানের কারণে তিন ব্যক্তিকে জান্নাতে পাঠানো হবে। . আদেশদাতা . রন্ধনকর্তা . সেই পরিবেশন কর্তা যে রুটি নিয়ে গরিবকে দিয়ে পরিবেশন করেছে’ (হাকিম, তাবারানি)
যে ব্যক্তি শুধু প্রথাগত ইবাদত করেন, কিন্তু আল্লাহর রাস্তায় বিপদগ্রস্ত দুস্থ মানবতার কল্যাণের জন্য দান-খয়রাত, জাকাত-সদকা, ত্যাগ-তিতিক্ষা সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন না তিনি আল্লাহ তাঁর রাসূলের কাছে কখনোই প্রিয়ভাজন হতে পারবেন না। বৈধ সম্পদ থেকে দরিদ্র ব্যক্তিকে দানের সওয়াব সম্পর্কে নবী করিম সা: বলেছেন, ‘কেউ হালাল উপার্জন থেকে দান করলে আল্লাহ নিজে সেই দান গ্রহণ করেন, সেটি উত্তমরূপে সংরক্ষণ করেন। একসময় সেই দানের সওয়াব পাহাড়তুল্য হয়ে যায়’ (বুখারি মুসলিম)
সুতরাং যে প্রান্তেই থাকুন, নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যার্তদের সাহায্য-সহযোগিতা করুন! বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য অর্থ তহবিল সংগ্রহ, সাহায্য-সহযোগিতা বিতরণের সময় স্থানীয় প্রশাসন, উন্নয়নকর্মী বা স্বেচ্ছাসেবী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ইসলামের মর্মবাণী অনুসারে মানুষ মানুষের জন্য সাহায্যে এগিয়ে আসবেন, সদাচরণ করবেন- এটাই স্বাভাবিক। ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বালা-মুসিবত যত বড়ই হোক না কেন, তার মোকাবেলা করা কঠিন হতে পারে না। বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বিত্তবানরাও আর্তমানবতার কল্যাণে ঝাঁপিয়ে পড়ে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যার যেভাবে সুবিধা হয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করুন। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে কবুল করুন,আমিন।

তথ্য সূত্রঃ আংশিক সংগৃহিত।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি