Loading..

ম্যাগাজিন

২২ নভেম্বর, ২০২২ ১১:২৬ অপরাহ্ণ

আন্তর্জাতিক গণনাট্য সংগীত শিল্পী----হেমাঙ্গ বিশ্বাস।

হেমাঙ্গ বিশ্বাস।

 আন্তর্জাতিক গণনাট্য সংগীত শিল্পী। জন্ম গ্রহণ করেন হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার  মিরাশী গ্রামে।

মিরাশী গ্রামের সন্তান হলেন বৃটিশ আমলের শিক্ষা মন্ত্রী রায়বাহাদুর এডভোকেট প্রমোদ চন্দ্র দত্ত, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল সি আর দত্ত বীর উত্তম,সিলেট বিভাগের প্রথম গায়িকা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্নেহধন্যা অমলা দত্ত কুইনী,

রায়সাহেব মহেন্দ্র দত্ত,কলকাতা ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রিন্সিপাল সুপ্রভা দত্ত,আসামের পুলিশের আইজি দীনেশ দত্তসহ অনেক গুনীজন। এই মিরাসী গ্রামে জন্মগ্রহন করেছিলেন গনসঙ্গীতের হারকিউলিকস ও প্রমিথিউস কমরেড হেমাঙ্গ বিশ্বাস। 


১৯১২ সালের ১৪ ডিসেম্বর এক জমিদার পরিবারে হেমাঙ্গ বিশ্বাস জন্ম গ্রহন করেন। 


১৯২৯ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়   "উদ্বোধনী সমিতি" নামে বিপ্লবী দল গঠন করে সমগ্র হবিগঞ্জ মহকুমায় আলোড়ন সৃষ্টি করেন। 


১৯৩০ সালে হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কলকাতা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দুইটি বিষয়ে লেটার নিয়ে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাশ করেন। ভর্তি হন সিলেট এম সি কলেজে।বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে সিলেট এমসি কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন এবং ৬ মাস জেল কাটেন। 


১৯৩২ সালে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে আড়াই বছর গৌহাটি জেলে ছিলেন। 


১৯৩৯ সালে ৭ নভেম্বর নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুকে হবিগঞ্জ শহরের শিরিষতলায় সংবর্ধনা দেয়া হলে হেমাঙ্গ বিশ্বাস মানপত্র পাঠ করেন। 


১৯৪৩-৪৪ সালে বানিয়াচং  থানায় ম্যালেরিয়ায় হাজার লোকের মৃত্যু ঘটলে হেমাঙ্গ বিশ্বাস স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেন। 


১৯৪৫ সালে ভারতীয় কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করেন এবং কমরেড মুজাফফর আহমেদের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক হয়।


 ১৯৪৫ -৪৬ সালে সুরমা ভ্যালি কালচারাল স্কোয়াড নিয়ে সমগ্র আসাম প্রদেশে পরিভ্রমন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্টান করেন। 


১৯৫২ সালে রাষ্টভাষা আন্দোলনের সময়   "ঢাকার গান" রচনা করেন। 


১৯৫৭ সালে টিবি রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসার জন্য চীনে চলে যান। তিন বছর চীনে ছিলেন। 


১৯৫৯ সালে কমিউনিষ্ট পার্টির নেত্রী রানু দত্তকে বিয়ে করেন। এরপর কলকাতা শহরের হুগলী জেলার শিয়ালখালা গ্রামে বসবাস শুরু করেন। 


১৯৬০ সালে আসামে বাঙ্গালী ও আসামীদের মাঝে ভয়াবহ সংঘর্ষ বাধলে হেমাঙ্গ বিশ্বাস ও ভুপেন হাজারিকা গননাট্য সংঘের উদ্যেগে শান্তি সম্প্রিতির অভিযান শুরু করেন। সেই সময় হেমাঙ্গ বিশ্বাস  ও ভুপেন হাজারিকার শান্তি সম্প্রীতি সমগ্র ভারতের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে ফলাও করে প্রচার করা হয়। এদুজন ভারত ও বাংলাদেশের জনগনের কাছে প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠেন। 


১৯৬১ সালে রাশিয়ার দুতাবাসে কনসুলেটর পদে চাকুরী পান। 


১৯৬২ সালে প্রিয় জন্মভুমি হবিগঞ্জকে নিয়ে গান লিখেন।  

হবিগঞ্জের জালালী কইতুর সুনামগঞ্জের কুড়া,

সুরমা নদীর গাংচিলরে ভাই শুন্য দিলাম উড়া।


১৯৬৪ সালে কমিউনিষ্ট পার্টি দুইভাগ হলে রাশিয়া দুতাবাসের চাকুরী ছেড়ে দিয়ে চীনপন্থী সিপিআই ( এম) এ যোগ দেন।


 ১৯৬৫ সালে বাংলায় অনুবাদ করেন:

   আমরা করবো জয় আমরা করবো জয় আমরা করবো জয় একদিন।

এই গানটি গাওয়ার পর সমগ্র ভারতের রেডিও ও বিবিসিতে প্রচার করা হয়। সমগ্র পৃথিবীর সংগীত জগতে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান ছড়িয়ে পড়ে। 


১৯৬৮ সালে " লালন ফকির " চলচিত্রে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের সুরে গান গেয়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ভারতের রাষ্টীয় পুরষ্কার লাভ করেন। 


১৯৬৯ সালে নকশাল আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে আলোচিত হন। 


১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গঠন করেন " মাস সিঙ্গার্স" নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। এই সংগঠন নিয়ে শরনার্থী ক্যাম্প ও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে গান গেয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠকের কাজ করেন। 


হেমাঙ্গ বিশ্বাস অসংখ্য গান রচনা করেছেন। বাংলা, চীনা, অসমিয়া, ইংরেজী ভাষায় যেমন কথা বলতে পারতেন, তেমনি গান গাইতে পারতেন।চীনা ভাষায় অনেক গান লিখেছেন। 


হেমাঙ্গ বিশ্বাস পুজিবাদী সমাজ ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে নোংরা ভাবতেন। 


হেমাঙ্গ বিশ্বাস ও ভুপেন হাজারিকা ছিলেন ঘনিষ্ট বন্ধু। ভুপেন হাজারিকা আমেরিকা থেকে  Phd করেছেন। তখন হেমাঙ্গ বিশ্বাস বন্ধু ভুপেন হাজারিকাকে বললো, তুমি আমেরিকা থেকে ডিগ্রী নিয়াছো। তুমি একদিন মৌলবাদীদেরকে সমর্থন করবে। ভুপেন হাজারিকা মৌলবাদী দল বিজেপি থেকে লোকসভার নির্বাচন করে বিতর্কিত হয়েছিলেন।


 হেমাঙ্গ বিশ্বাস মতাদর্শে এবং অঙ্গীকারে সব সময় সঠিক পথ অনুসরন করতেন। সাম্প্রদায়িকতাকে ঘৃনার চোখে দেখতেন।


 তিনি ছিলেন মেহনতি মানুষের মুক্তিকামী রানার।  সংগঠন প্রতিষ্টা করতেন কিন্তু কোন পদ গ্রহন করতেন না। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের একজন অকৃত্রিম বন্ধু। বাংলাদেশের একজন মুক্তিযোদ্ধা।


 হবিগঞ্জ জেলায় দুজন ব্যক্তি বিপিন চন্দ্র পাল ও হেমাঙ্গ বিশ্বাস জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহন করেও শেষ বয়সে অনেক কষ্ট করেছেন। দুজনই ত্যাজ্যপুত্র হয়েছিলেন। 


১৯৮৭ সালের ২২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক গননাট্য সংগীত শিল্পী ও বাংলাদেশের একজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হেমাঙ্গ বিশ্বাস  আজকের দিনে কলকাতায় মৃত্যুবরন করেন।


 হবিগঞ্জ জেলাবাসী হারালো এক সুর্য সন্তানকে। চিরজীবী হউক  হেমাঙ্গ বিশ্বাস।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি