Loading..

ম্যাগাজিন

২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ০৮:৩১ পূর্বাহ্ণ

খ্যাত একজন লোক ডা. মরিস বুকাইলি কি ফেরাউনের লাশ গবেষণা করতে গিয়ে মুসলমান হয়েছিলেন? মরিস বুকাইলি

মরিস বুকাইলি (১৯ জুলাই ১৯২০ - ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮), একজন ফরাসি চিকিৎসাবিদ। একই সাথেই ছিলেন মিশরতত্ত্ব এর ফরাসি সোসাইটির সদস্য এবং একজন লেখক। তিনি ফেরাউনের মমির উপর ফরাসি অধ্যয়নের সিনিয়র সার্জন ছিলেন।

বুকাইলি ১৯৪৫ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত মেডিসিন চর্চা করেন এবং গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির উপর তিনি একজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন । ১৯৭৩ সালে, বুকাইলি সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সালের পরিবারের চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত হন। একই সাথে মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের পরিবারের সদস্যরা তার রোগী ছিলো ।

এবার প্রশ্নে আসা যাক..

ডা. মরিস বুকাইলি কি ফেরাউনের লাশ গবেষণা করতে গিয়ে মুসলমান হয়েছিলেন?

ডা. মরিস বুকাইলি কি ফেরাউনের লাশ গবেষণা করতে গিয়ে মুসলমান হয়েছিলেন কিনা এ সম্পর্কে বিতর্ক রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে তিনি কুরআনের বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো উদ্ভাবন করে বই লিখেছেন ঠিক কিন্তু ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম হননি। আবার অনেকেই মনে করেন, তিনি ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম হয়েছিলেন। আসলে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন কিনা তা তার একটি বক্তব্যে বোঝা যায়।

তিনি তার একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, যখন আমি ৪০ বছর বয়সি ছিলাম প্যারিসে আমার মুসলিম রোগীর সাথে কথা বলতাম। তাদের ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম। একসময় আমি ভাবতাম এটা মানুষের লেখা। খ্রিস্টান পাদ্রীরা বলতো এটা বাইবেল থেকে চুরি করে মুহাম্মদ নিজে লিখেছে। আমি তখন ৫০ বছর বয়সী, সিদ্ধান্ত নিলাম আরবি শেখার। আরবি শেখার পর আমি নিশ্চিত হলাম স্রষ্টার মাধ্যমেই প্রেরিত এই গ্রন্থ। মানুষের দ্বারা এটি অসম্ভব।

তার লিখিত বই “দ্যা বাইবেল দ্যা কুরণআন, অ্যান্ড সাইন্স’ ১৯৭৬ সালে প্রকাশ পায়। এবং ১৯৮৬ সালে “গোল্ডেন বুক” সম্মাননা অর্জন করে। ১৯৮৭ সালে ১৩তম মুদ্রণে বইটির জনপ্রিয়তা এতটাই বেড়ে যায় যে, সে সময় ১ লাখ ৪০ হাজার কপি বিক্রি হয়।

তবে তিনি যে ঘটনা থেকে বইটা লিখেছিলেন, ঘটনাটা শুরু হয়েছিল যখন তখন ফ্রান্সের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত ফ্রাঁসো মিতেরাঁ । তিনিই আশির শতকের শেষার্ধে মিসরকে অনুরোধ করেন ফেরাউনের লাশ পাঠাতে। তারা ময়নাতদন্ত করবেন প্রত্নতাত্ত্বিক পরীক্ষার শর্তে। মিসরের সরকার তাতে রাজি হলে কায়রো থেকে ফিরাউনের লাশ প্লেনে করে প্যারিসে নিয়ে আসা হয়। লাশকে স্বাগত করার জন্য রাষ্ট্রপতি নিজেই উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রিমণ্ডল এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে। সম্মান জানাতে সকলে ফেরাউনের লাশের সামনে মাথা নত হন। যেন লাশ নয় জীবিত ফেরাউনকে স্বাগত করা হচ্ছে। রাজকীয় অনুষ্ঠান শেষে নিয়ে যাওয়া হয় ফ্রান্স আর্কিওলজিকাল সেন্টারের একটি বিশেষভাবে তৈরিকৃত ওয়ার্ডে। যেখানে ফ্রান্সের সেরা সার্জন এবং এটোস্পিরা লেগে পড়েন মমির রহস্য উৎঘাটনে। থেরাপিস্ট যারা ছিলেন তারা মমিটাকে পুনর্গঠন অর্থাৎ মমির ক্ষত অংশগুলো ঠিক করতে চাচ্ছিল, আর ড.মরিস বুকাইলি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন যে, কীভাবে ফেরাউন মারা গিয়েছিল,আর কয়েক হাজার বছর ধরে কীভাবে লাশটা অক্ষত রইল?

তিনি ও তাঁর সহযোগিরা লাশ গবেষণা ও পরীক্ষায় আত্মনিয়োগ করলেন। তাদের পরীক্ষাগারের রিপোর্টে বলা হয়েছে ফেরাউনের শরীরে লবণের অংশ আছে আর এটাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে, সে পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল।

এখানে ফিরাউনের মমিটি প্রফেসর মরিসকে অবাক করে দিল, যে কিভাবে এই মমি অন্য মমিদের তুলনায় সুরক্ষিত অবস্থায় থাকল, যেখানে এটা সমুদ্র থেকে তোলা হয়েছে। কারণ ভিজা পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে আর প্রতিটি আদ্র বা ভেজা বস্তুকে দ্রুত ধ্বংস করে দেয়।

এমন সময় তিনি জানতে পারলেন যে মুসলমানদের কুরআনে নাকি ফিরাউনের ডুবে যাওয়া ও তার লাশ সংরক্ষণের ব্যাপারে বিশদ আলোচনা আছে।

এটা জানার পর তিনি কিছুটা অবাক হয়েছিলেন। একপর্যায়ে তিনি তিনি বাইবেলে ফেরাউনের লাশ সম্পর্কে জানতে চাইলেন।তিনি দেখলেন, বাইবেলে ফিরাউন কর্তৃক মুসার পিছু নেয়ার কথা বলা আছে কিন্তু ফিরাউনের লাশের পরিনতি সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলা নাই।

এই ব‍্যাপার তাকে আরও ভাবিয়ে তুল্লো এরপর তিনি তোরাহ (তাওরাহ) আনালেন এবং সেটা পড়লেন। তোরাহতে বলা আছে,

পানি আসলো এবং ফিরাউনের সৈন্য এবং তাদের যানবাহনগুলোকে ঢেকে দিল, যারা সমুদ্রে ঢুকল তাদের কেউই বাঁচতে পারল না।

ড.বুকাইলি আশ্চর্য হয়ে দেখলেন যে, তাওরাতেও লাশের সংরক্ষণের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।

অতপর তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি মুসলিম দেশে যাবেন এবং সেখানে প্রখ্যাত মুসলিম বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সাক্ষাৎকার নিবেন ও আলোচনা করবেন। তিনি তথায় পৌছে ফিরাউনের লাশ ডুবে যাওয়া পরবর্তী সংরক্ষণের যে রেজাল্ট পেয়েছেন তা নিয়ে আলেচনা করেন, তখন একজন মুসলিম বিশেষজ্ঞ পবিত্র কুরআন খুললেন এবং আয়াতটা ড. বুকাইলিকে শুনালেন যেখানে সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা বলেন,

"অতএব, আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।"আল-কুরআন; সুরা:১০,আয়াত-৯২

তিনি এই আয়াতের দ্বারা খুবই প্রভাবিত ও অভিভূত হয়ে যান এবং কয়েক বছর ধরে আরবি ভাষা,আরবি সাহিত্য ও কুরআনের অনুবাদ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা ও অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে যান। তিনি কুরআন গবেষণা করে দেখেন যে, আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বের কুরআন আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে আশ্চর্যভাবে সঙ্গতিপূর্ণ।

ইসলামিক জ্ঞান নিয়ে ফ্রান্সে ফিরে এসে মরিস বুখাইলি আর চাকরি করেননি, ১০টি বছর তিনি কোরআন নিয়ে গবেষণা করেন। খুব সূক্ষ্মভাবে জানতে-বুঝতেই তিনি আরবি ভাষা রপ্ত করতে ব্যয় করেন পুরো সময়। এক প্রকার অনুসন্ধান আরম্ভ করেন কোরআনে কোন বৈজ্ঞানিক দ্বন্দ্ব খুজে পান কি না।

বুকাইলির মতে, বিভ্রান্ত শ্রেণির লোক বিশ্বাস করতে পারেনি যে, কুরআনই একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যা পবিত্রতা এবং সমস্ত সংযোজন, পরিবর্তন এবং বিরক্তি থেকে মুক্ত ছিল। ফলস্বরূপ এটি এখনও সমস্ত যুগ, স্থান এবং প্রতিটি সংকটে মানবজাতিকে পথনির্দেশনা দেবার পবিত্রতা ধরে রেখেছে। হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এটি মহাবিশ্ব এবং জীবন সম্পর্কে, নিজের সম্পর্কে একাই ধর্মীয় ও মহাজাগতিক জ্ঞানের একমাত্র ধনঘর।

মানবজ্ঞানের মূল্যবান অবদান হিসেবে ডা. বুকাইলির গবেষণাগুলো স্বীকৃতি ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করতে থাকে। খুব বিখ্যাত হয়ে ওঠেন তিনি। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে এক্সটেনশন বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। তার কুরআনীয় চিন্তাধারার দ্বারা এবং কুরআনীয় চিন্তার প্রতি তার নজিরবিহীন বাস্তবসম্মত আলোচনা ও দৃষ্টিভঙ্গী সকলকে বিস্মিত করে ।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি