সিনিয়র শিক্ষক
২৬ আগস্ট, ২০২৩ ০৩:১৮ অপরাহ্ণ
ডেঙ্গু জ্বর - কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বর - কারণ, লক্ষণ,
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু জ্বর কি?
উপক্রান্তিয় এবং
ক্রান্তীয় অঞ্চলের গ্রীষ্ম-প্রধান
দেশে
ডেঙ্গু
এবং
ডেঙ্গু
জ্বর
একটি
অত্যন্ত সাধারণ
ভেক্টর-বাহিত ভাইরাসঘটিত রোগ।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পশ্চিম
প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, ল্যাটিন আমেরিকা এবং
আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি
ডেঙ্গুর প্রকোপ
দেখা
যায়।
ভারতবর্ষে প্রধানত প্রাক-গ্রীষ্ম এবং বর্ষা সময়
এই
রোগের
প্রকোপ
বৃদ্ধি
পায়।
ডেঙ্গু
সংক্রমণের হার
সবচেয়ে
বেশি
থাকে
মার্চ
থেকে
জুন
পর্যন্ত যায়।
এপ্রিল
মাসে
এই
হাড়
সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। জুন-জুলাই মাস থেকে
ডেঙ্গু
আক্রান্তের সংখ্যা
সাধারণত হ্রাস
পেতে
দেখা
যায়।
ইউরোপ এবং
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ
অংশেও
এর
প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতি
বছর
বিশ্বব্যাপী লক্ষ
লক্ষ
ডেঙ্গু
সংক্রমণ ঘটে।
সময়
এবং
অঞ্চল-বিশেষে এই রোগ
মহামারির আকারও
ধারণ
করে।
বিনা
চিকিৎসায়, ভুল
চিকিৎসায়, এবং
দেরিতে
চিকিৎসার জন্য
অনেক
ক্ষেত্রেই রোগীর
মৃত্যু
পর্যন্ত হয়।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের কোন
বিশেষ
লক্ষণ
দেখা
নাও
যেতে
পারে।
সঠিক
চিকিৎসায় বাড়ি
তে
থেকেই
এই
রোগের
নিরাময়
করা
সম্ভব।
শুধুমাত্র বিশেষ
কিছু
ক্ষেত্রেই রোগীকে
হসপিটালে ভর্তির
প্রয়োজন হয়।
সেই
ক্ষেত্রেও 1–2 সপ্তাহের মধ্যে
রোগী
ভাল
হয়ে
যাওয়ার
পূর্ণ
সম্ভাবনা থাকে।
এই
রোগ
সম্বন্ধে জনমানসে সচেতনতা বৃদ্ধি
ভীষণ
জরুরী।
সামান্য কিছু
উপায়
মেনে
চললে
ডেঙ্গুর প্রকোপ
থেকে
আমরা
নিজেদের রক্ষা
করেতে
পারি।
এই
রোগ
লোকালয়ে ছড়িয়ে
পরার
হাত
থেকে
সহজেই
নিষ্কৃতি পাওয়া
যায়।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
ডেঙ্গু (DENG-gey) জ্বর হল
একটি
মশা-বাহিত ভাইরাস-ঘটিত
রোগ।
বেশীর
ভাগ
ক্ষেত্রে প্রথমবার ডেঙ্গু-তে আক্রান্ত রোগীর
বিশেষ
কোন
উপসর্গ
বা
লক্ষণ
দেখা
যায়
না।
শুধু
অল্প
কিছু
ক্ষেত্রেই রোগের
প্রভাব
গভীর
হয়।
ডেঙ্গুর সাধারণ
উপসর্গ
গুলি
হোল
-
·
উচ্চ জ্বর (40°C/104°F)
·
তীব্র মাথার যন্ত্রণা
·
চোখের পিছনে ব্যথার অনুভূতি
·
মাংসপেশি এবং অস্থি সন্ধি (bone) তে যন্ত্রণা
·
বমিভাব
·
মাথাঘোরা
·
গ্রন্থি ফুলে যাওয়া
·
ত্বকে বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি
এই উপসর্গ
গুলি
রোগ
সংক্রমণের 4 থেকে
10 দিনের
মধ্যে
দেখা
দেয়।
সাধারণত 2 থেকে
7 দিন
পর্যন্ত উপসর্গ
স্থায়ী
হতে
পারে।
দ্বিতীয় বার
ডেঙ্গু
তে
আক্রান্ত হলে
রোগের
ভয়াভয়তা বৃদ্ধি
পায়।
সেই
কারনে
পূর্বে
ডেঙ্গু
তে
আক্রান্ত ব্যক্তিদের অতিরিক্ত সতর্কতা মেনে
চলতে
বলা
হয়।
ডেঙ্গুর গুরুতর উপসর্গ গুলি হোল -
·
প্রচণ্ড পেট ব্যথা
·
ক্রমাগত বমি হওয়া
·
মারি বা নাক থেকে রক্তপাত
·
প্রস্রাবে এবং মলের সাথে রক্তপাত
·
অনিয়ন্ত্রিত পায়খানা
·
ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ (যা ক্ষতের মতো দেখাতে পারে)
·
দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস
·
ক্লান্তি
·
বিরক্তি এবং অস্থিরতা
ডেঙ্গুর জীবাণু
মানুষের শরীরের
রক্তনালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ফলে
রক্তনালীতে ছিদ্র
তৈরি
হয়।
রক্ত
রবাহে
ক্লট-তৈরির কোষগুলির (প্ল্যাটলেট) সংখ্যা
কমে
যেতে
থাকে।
এর
জন্য
মানুষের শরীরে
শক
লাগা,
শরীরের
বিভিন্ন অংশ
থেকে
রক্তপাত, যে
কোন
অঙ্গের
ক্ষতি
এবং
শেষ
পর্যন্ত রোগীর
মৃত্যু
হতে
পারে।
রোগীর
শরীরে
গুরুতর
উপসর্গ
গুলির
কোন
একটি
দেখা
দিলে
অতি
অবশ্যই
দ্রুত
ডাক্তারের সাথে
যোগাযোগ করা
উচিত
বা
রোগী
কে
নিকটবর্তী হসপিটালে ভর্তি
করানো
দরকার।
অন্যথায় রোগীর
প্রাণসংকট হতে
পারে।
ডেঙ্গুতে প্লেটলেটের সংখ্যা সাধারণত কত হয়?
স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সম্পন্ন একজন
প্রাপ্ত বয়স্ক
একজন
মানুষের প্লেটলেট সংখ্যা
হয়
150,000 থেকে
450,000 প্লেটলেট প্রতি
microliter রক্তে।
উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ডেঙ্গু-আক্রান্ত রোগীদের এই
সংখ্যা
20,000 এর
নিচে
চলে
যেতে
পারে।
এই
সময়
রক্তপাতের ঝুঁকি
সর্বোচ্চ হয়।
মাঝারি
ঝুঁকি
পূর্ণ
রোগীদের প্লেটলেট সংখ্যা
21-40,000/cumm মধ্যে
থাকে।
অবশ্য
ডেঙ্গু
সংক্রমণে অনেক
ক্ষেত্রেই প্লেটলেট সংখ্যার দ্রুত
পরিবর্তন হয়।
প্লেটলেট কাউন্ট
কম
এবং
রক্তক্ষরণের লক্ষণ
প্রকাশ
পেলে
তবেই
প্লেটলেট প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়।
অন্যথায় সংক্রমণ কমার
সাথে
সাথে
আমাদের
শরীরে
স্বাভাবিক ভাবে
প্লেটলেট কাউন্ট
বৃদ্ধি
পায়।
এর
জন্য
প্রয়োজন প্রচুর
পরিমাণে ভিটামিন সি,
ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ফোলেট এবং
পটাসিয়াম সমৃদ্ধ
খাদ্য
গ্রহন।
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা
ডেঙ্গুর চিকিৎসার বিশেষ
কোন
ওষুধ
বা
প্রতিষেধক এখনো
পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি।
গবেষকরা কাজ
করে
যাচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘরোয়া
চিকিৎসাতেই কমে
যায়।
চিকিৎসকরা পেরাসিটামিল জাতীয়
ওষুধ
দিয়ে
যন্ত্রণা এবং
জ্বরের
মাত্রা
নিয়ন্ত্রণ করেন।
Non-steroidal প্রদাহ-প্রতিরোধী ওষুধের রক্ত ক্ষরণের সম্ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করা
হয়।
রোগের
মাত্রা
অতিরিক্ত ভাবে
বৃদ্ধি
পেলে
রোগী
কে
হসপিটালে ভর্তি
এবং
ডাক্তারি নজরদারি তে
রাখা
একান্ত
জরুরী।
হসপিটালে ডেঙ্গু
রোগীদের শিরায়
(IV) ইলেক্ট্রোলাইট (লবণ)
তরল
দেওয়া
হয়।
এতে
শরীরে
প্রয়োজনীয় জল
এবং
লবণের
যোগান
বজায়
থাকে।
ডেঙ্গু জ্বরের রোগীদের জন্য ডায়েট
ডেঙ্গু জ্বরে
আক্রান্তদের জন্য,
কিছু
পুষ্টি
উপাদান
বিশেষ
ভাবে
উপকারী
হতে
পারে,
যেমন
·
ভিটামিন সি (সাইট্রাস ফল, বেরি এবং শাক-সবজিতে পাওয়া যায়),
·
জিঙ্ক (সামুদ্রিক খাবার, মটরশুটি এবং বাদামে পাওয়া যায়)
·
আয়রন (মাংস, মটরশুঁটিতে পাওয়া যায়)
·
ওটমিল (সহজপাচ্য কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ)
·
পেঁপে
·
নারিকেলের জল
সেই সঙ্গে
প্রচুর
পরিমাণে জল
পান
করা
দরকার
শরীর
কে
হাইড্রেট করার
জন্য।
ডেঙ্গু হলে অনুচিত খাবার
সহজে হজম
হয়না
এমন
খাবার
ডেঙ্গু
রোগী
দের
খাওয়া
উচিত
নয়।
যেমন
-
·
আমিষ খাবার
·
চর্বি
·
তৈলাক্ত খাবার
·
ভাজাভুজি
ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া প্রতিকার
·
ডেঙ্গু একটি মশা-বাহিত রোগ। তাই মশার কামড়ের হাত থেকে নিজেকে এবং আপনার পরিবার কে বাঁচান।
·
বাড়ির চারপাশে জল জমতে দেবেন না। জমা জলে মশারা বংশবিস্তার করে। জল জমতে না দিয়ে মশার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সপ্তাহে অন্তত একবার জল জমতে পারে এমন জায়গা পর্যবেক্ষণ করুন। এবং গাছের টব, ফুলদানি, পরে থাকা গাড়ির টায়ারের জমে থাকা জল ফেলে দিন।
·
শরীর ঢাকা জামা কাপড় যেমন লম্বা-হাতা শার্ট, লম্বা প্যান্ট, মোজা এবং জুতা পরুন।
·
ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। এই সময় অতিরিক্ত সতর্ক থাকুন।
·
রাতে শোবার সময় মশারী ব্যবহার করুন।
·
মশা নিরোধক কেমিক্যাল যেমন পারমেথ্রিন ব্যবহার করুন।
উপসংহার
ডেঙ্গু জ্বর
একটি
সাধারণ
রোগ।
কিন্তু
অবহেলা
করলে
এই
রোগ
মারাত্মক হতে
পারে।
শহরাঞ্চলে এর
প্রকোপ
বেশি।
তাই
নগরবাসীকে আরেকটু
সজাগ
ও সচেতন হতে হবে।
বিশেষ
করে
যাদের
ডেঙ্গু
হয়েছে
তাদের
অতিরিক্ত সতর্ক
থাকতে
হবে।
দ্বিতীয় ডেঙ্গু
সংক্রমণ মারাত্মক হতে
পারে।
সচেতন
থাকুন,
সুস্থ
থাকুন
এবং
ভালো
থাকুন