Loading..

প্রেজেন্টেশন

০১ জুলাই, ২০২৪ ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ

জীবন সমস্যার সমাধানে আল-কুরআনের ভূমিকা

অধ্যায় পাঠ শেষে শিক্ষার্থীরা জানতে পারবে

১. ব্যক্তিসমাজ জীবনে আল-কুরআন;

২. রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসাংস্কৃতিক জীবনে আল-কুরআন;

৩. জাতীয়আন্তর্জাতিক জীবনে আল-কুরআন; 

৪. আদর্শ জীবন গঠনে আল-কুরআনের অবদান

সারমর্ম

জীবন সমস্যার সমাধানে আল-কুরআন

 

জীবন সমস্যার সমাধানে আল-কুরআনের ভূমিকা অপরিসীম। আল-কুরআলো, মানবজীবনের সদিক ও বিভাগের সুস্পষ্ট পথনির্দেশক। জীবনে চলার পথে অন্তহীন সমস্যা থেকে মুক্তি লাভের অমোঘ হাতিয়ার আল্লাহর দেওয়া জীবনবিধান এই মহিমান্বিত কুরআন। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের সর্বক্ষেত্রে কুরআন এক সুমহান আদর্শ পেশ করেছে, যা অনুসরণ করলে সর্বপ্রকার অন্তরায় ও প্রতিবন্ধকতা পেছন দিকে দিয়ে পালিয়ে যায়মানুষের (১) ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুর করে (২) পারিবারিক, (৩) সামাজিক, (৪) রাজনৈতিক, (৫) অর্থনৈতিক, (৬) সাংস্কৃতিক, (৭) জাতীয় ও (৮) আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত সস্তরের যাবতীয় সমস্যা ও সঙ্কটে নির্ভুল সমাধান রয়েছে আল-কুরআনের পরতে পরতে। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ইরশাদ করেন :

                        اِنَّ هٰذَا الۡقُرۡاٰنَ یَهۡدِیۡ لِلَّتِیۡ هِیَ اَقۡوَمُ  

নিশ্চয়ই এই কুরআন কেবল সেই পথেরই সন্ধান দেয়, যা সুদৃঢ়, সর্বোৎকৃষ্ট। (সুরা বনী ইসরাঈল : ৯)

মহান আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন :  "কুরআন মানবজাতির পথনির্দেশ এবং সৎপথের সুস্পষ্ট নীতিমালা আর সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।” (সুরা বাকারা : ১৮৫)

পূর্বোক্ত সমস্যাবলি এবং কুরআনের আলোকে তার সমাধানসমূহ আজকের কনটেন্টের নিম্নোক্ত স্লাইডসমূহে ঊপস্থাপন করা হলো :

   

1. ব্যক্তিগত  জীবন

মানুষের ব্যক্তিজীবনের প্রধান সমস্যা হচ্ছে : দেহ-মনের অসামঞ্জস্য ও চারিত্রিক অধঃপতন। এক্ষেত্রে কুরআনের সমাধান বা নীতি হলো : তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাত প্রভৃতি বিষয়ের প্রতি অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা ও কার্যে পরিণত করা। এই তিনটি কাজ করার মাধ্যমে মানুষের দেহ-মনে সামঞ্জস্য আসে। সে আল্লাহর অভিমুখী হয়। আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যদিয়ে তার মন-মানসিকতা প্রশান্তি লাভ করে। আল্লাহ বলেন : “সাবধান। আল্লাহর স্মরণ দ্বারা মানবাত্মার প্রশান্তি আসে।" (সূরা রা’আস : ২৮)

আল্লাহ আরও বলেন

"যে হিদায়েতের পথে চলবে, তা হবে তার নিজের জন্য কল্যাণকর। আর যে ভ্রান্ত পথে চলবে, তার গোমরাহির জন্য সে নিজেই দায়ী। কোনো বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।" (সুরা ইসরা : ১৫)

২. পারিবারিক জীবন

মাতা-পিতা, স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, ভাই-বোন, প্রভু-ভৃত্য ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের সমন্বয়ে প্রতিটি পরিবার গঠিত। কুরআন মাজিদ পবিত্র দাম্পত্য জীবনের মাধ্যমে যৌন চাহিদা মেটানো এবং মানববংশ বিস্তারে সুস্থ, সুন্দর ও সমৃদ্ধময় পারিবারিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। ব্যভিচার, লিভ টুগেদার (Live Together) ইত্যাদি সামাজিক অভিশাপ চিরতরে নিষিদ্ধ করেছে। এ মর্মে আল্লাহ বলেন : "তোমরা তাদের কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তাদেরকে বিয়ে কর এবং উত্তম পন্থায় তাদের মোহরানা আদায় কর, যেন তারা তোমাদের বিয়ের দুর্গে সুরক্ষিত হয়ে থাকতে পারে এবং স্বাধীনভাবে অবাধে যৌনাচারে লিপ্ত না হয়, আর গোপনে প্রেম করে যৌন উচ্ছৃঙ্খলতায় নিপতিত না হয়।" (সুরা নিসা : ২৫)

পরস্পর পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব, কর্তব্য ও অধিকার আদায় করলে পারিবারিক জীবনে কোনো সমস্যা থাকতে পারে না। আর এ জন্যই কুরআনের ঘোষণা, “আত্মীয়-স্বজনের প্রত্যেককেই তার প্রাপ্য দিয়ে দাও; এবং মিসকিন মুসাফিরকেও” (সূরা বনী ইসরাঈল : ২৬)

. সামাজিক জীবন

সুষ্ঠু-সুন্দর সমাজ কাঠামোর রূপরেখা পেশ করেছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন শান্তিময় সমাজজীবনের পরিপন্থী যাবতীয় অন্যায় থেকে বিরত থাকার জন্য কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। অপরদিকে, সমাজের সকলের প্রতি এবং সস্তরে ইনসাফ, সমতা, অধিকার আদায়ের ব্যাপারে কুরআন মাজিদের কঠোর দিক নির্দেশনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন :

আত্মীয় প্রতিবেশী ও দূর সম্পর্কীয় প্রতিবেশীর হক আদায় কর।" (নিসা : ৩৬)

জাতি, গোত্র, বংশগত মর্যাদা ও আভিজাত্য দিয়ে গৌরব অহংকার গালাগালি করা, অন্যের ব্যাপারে মন্দ ধারণা পোষণ করা, অন্যদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারাদি জানার চেষ্টা করা, গিবত করা ইত্যাদি শিষ্টাচার বিরোধী মন্দ কাজ সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে। এসব কাজকে আল্লাহ হারাম ঘোষণা করেছেন। সেজন্য আল্লাহ তাআলা বলেছেন : “সমস্ত মানুষ একই মূল থেকে উৎসারিত, একই বংশ থেকে উদ্ভূত। বিভিন্ন জাতি, গোত্র ও শ্রেণিতে তাদের বিভক্ত হয়ে পড়া কেবল পারস্পরিক পরিচিতির জন্য। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। ।” (সুরা হুজরাত : ১৩)

. রাষ্ট্রীয়  জীবন

জীবনের প্রধান সমস্যা দুটি। একটি হচ্ছে : শাসকদের উদাসীনতা এবং প্রজাদের প্রতি দুঃশাসন। আর অন্যটি হচ্ছে, নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় অবাধ্যতা। কুরআন এ দুটোর সমাধান দিয়েছে। শাসক দলের প্রতি কুরআনের নির্দেশ হলো :

আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, আমানত তার হকদারকে ফেরৎ দান করতে। তোমরা যখন মানুষের মধ্যে শাসন ও বিচার পরিচালনা কর, তখন শাসন ও বিচারকার্য পরিচালনা করবে ন্যায়পরায়ণতার সাথে।  (সূরা নিসা : ৫৮)

আর রাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রতি কুরআনের নির্দেশ হ : মুমিনগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর আরো আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত তাদের। কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ লে, তোমরা তা উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও তার রাসূলের নিকট।" (সূরা নিসা : ৫৯)

. জাতীয় জীবন

জাতীয় জীবনের বড় সমস্যা হচ্ছে, পরস্পরের প্রতি পরস্পরের আস্থাহীনতা অসহযোগিতা এবং শাসক শাসিতদের পরস্পর মতবিনিময় না হওয়া

ü পর্যায় কুরআনের সমাধান হচ্ছে, “তারা পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ কাজসমূহ সম্পাদন করে" (সূরা শূরা : ৩৮)

ü জাতীয় দায়িত্ব কর্তব্য নির্দেশ করে আল্লাহ আরও বলেন : "তোমরা উত্তম জাতি মানুষের কল্যাণের জন্য তোমাদের সৃষ্টি তোমরা মানুষকে সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎকাজে নিষেধ করবে" (আলে-ইমরানঃ ১১০)

6. অর্থনৈতিক জীবন

অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত হওয়ার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন : “অতঃপর সালাত সমাপ্ত হলে, তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর যাতে তোমরা সফলকাম হও’’  (সুরা জুমুআ : ১০)

অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা প্রভৃতি মৌলিক চাহিদা পূরণ না-হওয়া বিরাট এক অর্থনৈতিক সমস্যা। এ সমস্যার উদ্ভব ঘটে সমাজের একশ্রেণীর মানুষের সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা এবং অন্যান্য নাগরিককে বঞ্চিত করার মাধ্যমেএ সমস্যা সমাধানের জন্য কুরআন যাকাত ও অন্যান্য স্বতঃস্ফূর্ত দান-সাদকার নির্দেশ দিয়েছে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে-

                     "সম্পদ কেবল যেন তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়।" (সূরা আল হাশর : ৭)

                 ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম।" (২ সূরা বাকারা : ২৭)

7. সাংস্কৃতিক জীবন

ইসলাম শান্তি, সুন্দর ও সুরুচির ধর্ম। ইসলাম শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞান, স্থাপত্য, ভাস্কর্যকোন কিছুই নিরুৎসাহিত করে না। তবে ইসলাম অশ্লীলতার ঘোর বিরোধী। ইসলামের শিক্ষা ও সংস্কৃতিরএকটি আদর্শ, একটি লক্ষ্য এবং একটি নির্দেশক আছে।

১. আদর্শ : ইসলামী সংস্কৃতির আদর্শ হযরত মুহাম্মদ (স) ও তাঁর জীবনাদর্শ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা নিজে বলেছেন : “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ বিদ্যমান।" (আহযাব : ২১)

"রাসূল (স) তোমাদের যা প্রদান করেন তা গ্রহণ কর, আর যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।(হাশর : ৭)

২. লক্ষ্য : ইসলামি আদর্শের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে : মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন। ইসলামি সংস্কৃতি সংবলিত আদর্শে মুমিনের জীবন-মৃত্যু সবকিছুই একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য মহান আল্লাহ বলেন :

আপনি বলুন! আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন এবং আমার মরণ সবকিছুই বিশ্ব প্রভু আল্লাহর জন্য।" (আনয়াম : ১৬৩)

৩. নির্দেশক : ইসলামি সংস্কৃতির নির্দেশক হচ্ছে আল্লাহর বাণী কুরআন মাজীদ।

বলে দিন, হে রাসূল। আল্লাহর পথ নির্দেশনাই একমাত্র নির্দেশনা।" (আনআম : ৭১)

যে-সংস্কৃতি এই তিনটি সম্মিলিত আদর্শের অনুসারী নয়, তা কোনোক্রমেই ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়, হতে পারে না। ইসলাম বহির্ভূত কোনো সংস্কৃতি আপাতদৃষ্টিতে আকর্ষণীয় মনে হলেও তার পরিণাম ভাল হতে পারে না।

8. আন্তর্জাতিক জীবন

আন্তর্জাতি সিংহভাগ সমস্যাই জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় সমস্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুল পরিচিত একটি সমস্যা হচ্ছে, এক দেশ অন্য দেশের ওপর প্রভুত্ব করা, এক জাতির অন্যান্য জাতির ওপর শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করা। দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে, বর্ণে বর্ণে সংঘর্ষ ও বিভেদ একটি বিশেষ সমস্যা। কুরআন এই সমস্যার সমাধান করে ঘোষণা করেছে :  

হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে। পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে সে-ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাশীল, যে-অধিক মুত্তাকী।"

(সুরা হুজুরাত : ১৩)

মূলত, জাতি বা দেশ হিসেবে এক দেশ বা জাতির ওপর অন্য দেশ বা জাতির প্রভুত্ব করার বা শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করার কোনো অধিকার নেই। সব জাতি, সব মানুষ সমান। তাকওয়া আধিক্য থাকলে যে-কোনো দেশ, জাতি বা মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি থাকতে পারে, অন্যথায় নয়।

এককথায়, মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের সবক্ষেত্রের সবস্তরের যাবতীয় সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান পেশ করেছে কুরআন মাজীদ



আরো দেখুন