সহকারী শিক্ষক
২৫ অক্টোবর, ২০২০ ০২:০৫ অপরাহ্ণ
বৈরী সময়ে সাহিত্য চর্চায় বিশ্ব
বৈরী সময়ে সাহিত্য চর্চায় বিশ্ব
করোনাভাইরাস মহামারী পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষকেই অবরুদ্ধ করেছে। এক সংক্ষিপ্ত সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই অবরুদ্ধ অবস্থায় মহাদুর্যোগপ্রসূত মানসিক চাপ থেকে কিছুটা পলায়নপর অব্যাহতি লাভের জন্য মানুষ মহামারী বিষয়ক সাহিত্যকর্ম এবং চলচ্চিত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কেউ কেউ বর্তমান সময়ের বাস্তব করোনা মহামারীর মতো কল্পিত দৃশ্যগুলি পড়তে বা দেখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে, আবার কেউ কেউ পূর্ববর্তী মহামারীগুলোর সময়কার বাস্তব জীবনের বিবরণ থেকে ভবিষ্যতে বেঁচে থাকার পথের হদিসের জন্য উন্মুখ হয়ে বাস্তব জ্ঞানের সন্ধান করছে। তবে ইতিহাস এবং কথাসাহিত্য বা ফিকশনের মধ্যে ঘটনার এক বিশাল তফাৎ সমবসময়েই পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে গত মহামারীর সময়কার যে ভয়ঙ্কর ট্রাজেডি এবং সে ট্রাজেডির বর্তমান সময়ের রহস্যোদঘাটনকারী চলচ্চিত্রায়নের মধ্যে যে অভাবিত তফাৎ তা রীতিমতো হতাশাব্যঞ্জক। প্রকৃতপক্ষে, মনোবিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে করোনা মহামারীর এই দুর্যোগের সময় মহামারী সম্পর্কিত বিষয়য়াদিতে বিনোদনের অন্বেষণ অবরুদ্ধ অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। তাই মহামারীর সময়ে সাহিত্যচর্চা বা চলচ্চিত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করার পেছনে যুক্তি আছে, যদিও বিষয়টি সম্পূর্ণভাবেই ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দ এবং নিজের উপরে নিয়ন্ত্রণের উপর নির্ভরশীল।
হোমারের ‘ইলিয়াড’ এবং বোকাসিওর ‘দি ডেকামেরন’ থেকে শুরু করে স্টিফেন কিং-এর ‘দ্য স্ট্যান্ড’ এবং লিং মা'র ‘সেভারেন্স’ পর্যন্ত পশ্চিমা সাহিত্যে যে সমস্ত মহামারী সম্পর্কিত গল্প-উপন্যাস-মহাকাব্য রয়েছে – তাতে জনস্বাস্থ্যের সংকটের সময় মাহামারী প্রশমনে মানুষ কীভাবে সাড়া দেয় এবং কীভাবে প্রচণ্ড আবেগকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সে সম্পর্কিত বিস্তর নির্দেশনা পাওয়া যায় বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে। ধারণা করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৭৫০ বা ৮০০ সালে ‘ইলিয়াড’ রচিত হয়েছিল এবং ‘প্লেগ’ শব্দটি ‘ইলিয়াড’ মহাকাব্যেই প্রথম ব্যবহৃত হয়। বলা বাহুল্য, পশ্চিমা সাহিত্য আজো ‘ইলিয়াড’-এর প্রভাবমুক্ত হতে পারেনি, এর রচনা কৌশল, চরিত্রচিত্রন এবং ঘটনাবলীর উপস্থাপন এমনই বুদ্ধিদীপ্ত ও আকর্ষণীয় যে তা এককথায় অনবদ্য।
‘ব্লাক ডেথ’ মহামারীর পরপরই ১৩৫১ সালে জিওভানি বোকাসিও রচিত ‘দি ডেকামেরন’ মাস্টারপিসটি ১০০টি গল্পের সংগ্রহ বিশ্বসাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। এই গল্পগুলিতে মহামারীর সময়ে ইতালির ফ্লোরেন্স থেকে ১০ জন অভিজাত নর-নারীর প্লেগ থেকে মুক্তি পেতে পালিয়ে যাওয়ার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
১৯৪২ সালে আলবার্ট কামু রচিত ‘দি প্লেগ’ উপন্যাস প্লেগের মতো মহামারীতে সামাজিক সমস্যা বিশেষ করে আইসোলেশন বা বিচ্ছিন্নতা এবং এর প্রতিরোধে রাষ্ট্রের ব্যর্থতার দিকেই পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে। এই উপন্যাসে কামু কঠোর অথচ নিশ্চিত বঞ্চনার সঙ্গে মানুষের অজ্ঞতা যে সমাজকে সবার অজান্তে কোথায় তলিয়ে নিয়ে যেতে পারে, তার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র অংকন করেছে।
১৯৭৮ সালে স্টিফেন কিং রচিত ‘দি স্ট্যান্ড’ উপন্যাসেও কামু রচিত ‘দি প্লেগ’ উপন্যাসের কিছুটা ছায়া পরিলক্ষিত হয় তবে প্রেক্ষিত সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই উপন্যাসে আমেরিকান কোন সামরিক ঘাঁটি থেকে ‘প্রজেক্ট ব্লু’ নামের বায়োইঞ্জিনিয়ার্ড সুপারফ্লু ভাইরাস অবমুক্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এক টুইটার বার্তায় স্টিফেন কিং বলেছেন, করোনা মহামারী অবশ্যই তার কল্পিত মহামারীর মতো গুরুতর নয় তবে সবারই যুক্তিসঙ্গতভাবে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।